'হানিট্র্যাপে' মজে পাকিস্তানে তথ্য পাচার! পুণেতে গ্রেফতার ডিআরডিও-র শীর্ষ বিজ্ঞানী - nagariknewz.com

‘হানিট্র্যাপে’ মজে পাকিস্তানে তথ্য পাচার! পুণেতে গ্রেফতার ডিআরডিও-র শীর্ষ বিজ্ঞানী


পাক সুন্দরীর মধু খেতে গিয়ে অধঃপতন ৬০ বছরের প্রদীপ কুরুলকারের

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশের প্রতিরক্ষা বিষয়ক তথ্য পাকিস্তানে পাচার করার অভিযোগে ‘ডিআরডিও’ (ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন)-র এক বড় বিজ্ঞানীকে গ্রেফতার করল মহারাষ্ট্র পুলিশের ‘অ্যান্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াড’। বিজ্ঞানীর নাম প্রদীপ কুরুলকার। বয়স ষাট। মেধাবী না হলে ডিআরডিও-তে কাজের সুযোগ পাওয়া যায় না। কিন্তু ওমন মেধার কীসের দাম! শত্রুরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার পাতা ‘হানিট্র্যাপে’ পড়ে যে বিজ্ঞানী শুধু নিজের চরিত্র‌ই খোয়ান না বিনিময়ে তুলে দেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, শুধুই ঘৃণা ছাড়া আর কী থাকতে পারে তাঁর প্রাপ্য?

মধুফাঁদে মজিয়া ডুবিল বিজ্ঞানী

‘হানিট্র্যাপ’ মানে মধুফাঁদ। ভারত থেকে গোপন তথ্য হাতিয়ে নিতে দেশের সুন্দরীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে পাকিস্তান। ভারতীয় দূতাবাসের কূটনীতিক থেকে আর্মি, নেভি এবং এয়ারফোর্সের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরদের লক্ষ্য করে মধুফাঁদ পাতা হয়। ডিআরডিও, ইসরোর মতো সংস্থার বিজ্ঞানী, গবেষকদের‌ও হানিট্র্যাপে ফেলে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গোপন তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার তালে থাকে পাকিস্তানের সিক্রেট এজেন্সিগুলি। সুন্দরী নারীদের গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করে বিপক্ষ শিবির থেকে গোপন খবর বের করে আনার কৌশল দুনিয়ায় নতুন কিছু নয়। কিন্তু কামের ফাঁদে ধরা দিয়ে দেশকে ডোবায় কারা? দুঃখের হলেও সত্যি, ভারতের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র দফতরে কর্মরতদের মধ্যে হানিট্র্যাপে পড়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে, এখনও ঘটে চলছে। প্রদীপ কুরুলকার সেইসব নচ্ছার ভারতীয়দের‌ই একজন, যিনি কোনও পাকিস্তানি তরুণীর পাল্লায় পড়ে শত্রু দেশের হাতে নিজের দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে দিয়েছেন।

সর্ষের মধ্যেই ভূত!

প্রদীপ কুরুলকার চাকরি করতেন পুণের ডিআরডিও গবেষণাগারে। ১৯৬৩ সালে জন্ম। পুণের সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক। কানপুর আই‌আইটিতে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির উপরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি‌ও লাভ করেন প্রদীপ। ১৯৮৮ সালে ডিআরডিও-তে যোগ দেন। ডিআরডিও ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা। আমাদের গৌরবের। দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ভারতরত্ন এপিজে আবদুল কালাম‌ ইসরোর পাশাপাশি ডিআরডিও-র সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ভারত যে আজ প্রায় সবধরণের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি বা মিশাইল টেকনোলজিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তার পেছনে আছে ডিআরডিও-র বিজ্ঞানীদের নিরলস পরিশ্রম।

ডিআরডিও-র বিজ্ঞানী প্রদীপ কুরুলকার: প্রেমের ফাঁদে পড়ে শেষে পাকিস্তানের জালে।

ধৃত প্রদীপ কুরুলকার ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের শীর্ষপদগুলির কোন‌ও একটিতে কর্মরত ছিলেন। অর্থাৎ ডিআরডিও-র গোপন গবেষণার অনেক কিছুই তাঁর নখদর্পণে থাকার কথা। বেশ কিছু মিশাইলের নকশা তিনি নিজে তৈরি করেছেন বলেও জানা যাচ্ছে। এত বড় মাপের ‘সিনিয়র সায়েন্সটিস্ট’ সামাজিক মাধ্যমে পাক গোয়েন্দা সংস্থা পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স অপারেটিভ (পিআইও)-এর ফাঁদে পা দিয়ে ফেললেন কীভাবে? যথারীতি হানিট্র্যাপ বা নারী দিয়ে প্রদীপকে ফাঁদে ফেলেছে পিআইও। সামাজিক মাধ্যমে কোন‌ও পাকিস্তানি সুন্দরী তরুণীর প্রেমে পড়েন প্রদীপ কুরুলকার। প্ল্যান করে সেই তরুণীকে প্রদীপের সামনে এগিয়ে দেন পাকিস্তানের গোয়েন্দারাই। এর‌পর যা হয়। ধীরে ধীরে ভিনদেশী সিক্রেট এজেন্সির জালে জড়িয়ে যান ভারতীয় এই প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানী। যখন হুঁশ ফিরেছে, তখন জাল কেটে বেরোনোর পথ বন্ধ। ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো মাধ্যম ব্যবহার করে প্রদীপ কুরুলকার নিয়মিত পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন বলে জানতে পেরেছে মহারাষ্ট্র পুলিশ। প্রথমে অজান্তেই পাক তরুণীর প্রেমের ফাঁদে পা দিলেও পরে নিজের জ্ঞাতসারেই পাকিস্তানের গোয়েন্দাদের হাতে ডিআরডিও-র গবেষণা সংক্রান্ত গোপন তথ্য জোগান দিতেন প্রদীপ।

পুলিশ হেফাজতে জেরা চলছে

বুধবার প্রদীপ কুরুলকারকে গ্রেফতার করে মহারাষ্ট্র পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখা। বৃহস্পতিবার পুণের আদালত ধৃতকে ৯ মে পর্যন্ত এটিএস-এর হেফাজতে পাঠিয়েছে। কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদীপ পাকিস্তানে পাচার করেছেন, সব তাঁর পেট থেকে বের করার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। বাঘের ঘরে ঘোগ থাকে। আসলে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের উপরে ২৪ ঘন্টাই গোপনে নজরদারি চালান দেশের গোয়েন্দারা। এই নজরদারির জেরেই শেষ পর্যন্ত প্রদীপ কুরুলকারের মতো বিশ্বাসঘাতকদের স্বরূপ সবার সামনে খুলে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এটিএস-এর স্ক্যানারে ছিলেন।‌ বুধবার গবেষণাগারে কর্মরত অবস্থায় পাকিস্তানের সিক্রেট সার্ভিসের এক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করার সময় প্রদীপকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন এটিএস-এর অফিসারেরা।

Feature Image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *