টাটা ট্রাস্টের 'ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্টে' বেআব্রু বাংলা! কর্নাটক প্রথম, ১৭তমতে মমতার রাজ্য - nagariknewz.com

টাটা ট্রাস্টের ‘ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্টে’ বেআব্রু বাংলা! কর্নাটক প্রথম, ১৭তমতে মমতার রাজ্য


ডেস্ক রিপোর্ট: যে পরিকাঠামো সমাজে আইনের শাসন বলবৎ করে থাকে, পশ্চিমবঙ্গে তার হাল কতটা খারাপ, তা দেখিয়ে দিল টাটা ট্রাস্ট প্রকাশিত ‘ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট-২০২২’। মঙ্গলবার ( ৪ এপ্রিল, ২০২৩) এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।‌‌ নাগরিকদের ন্যায় প্রদানের সঙ্গে যুক্ত স্তম্ভগুলির অবস্থা দেশের কোন রাজ্যে কেমন- খতিয়ে দেখতে ২০১৭ সাল থেকে টাটা ট্রাস্টের নেতৃত্বে কাজ শুরু করে একাধিক সামাজিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। টাটা ট্রাস্টের প্রথম ‘ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে। দ্বিতীয়টি বিশে। এবার সামনে এল তিন নম্বর রিপোর্ট।

পুলিশ, সংশোধনাগার, আইনি সহায়তা ও আদালত- এই সব নিয়েই সামগ্রিক বিচারব্যবস্থা। দেশের ১৮টি বড় ও মাঝারি এবং ৭টি ছোট রাজ্যে চারটি বিষয় নিয়ে সমীক্ষা চালায় টাটা ট্রাস্ট। সামগ্রিক পরিকাঠামোয় ১৮টি বড় ও মাঝারি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান সতেরোতে। পুলিশ ও আদালত সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলার স্থান সবার শেষে। আইনের শাসন কায়েমে সবথেকে গুরু দায়িত্ব যে বিভাগের সেই পুলিশের শোচনীয় অবস্থা রাজ্যে। টাটা ট্রাস্টের ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট-২০২২ বলছে, পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ কনস্টেবলের ৪৪ শতাংশ পদ শূন্য। থানা পর্যায়ে পুলিশের আধিকারিক পর্যায়ে প্রতি চারটিতে একটি পদ খালি। পশ্চিমবঙ্গে গ্রামীণ এলাকায়‌ গড়ে ৩ লক্ষ ৬ হাজার জনসংখ্যা পিছু একটি করে থানা। শহরাঞ্চলে ১ লক্ষ ২৩ হাজার মানুষ পিছু একটি থানা। ২০১৯-এর ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্টে বাংলায় কনস্টেবলে ৩১ শতাংশ শূন্য পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে আরও ১৩ শতাংশ পদ ফাঁকা হয়েছে। রাজ্য পুলিশে যে হুহু করে জনবল কমছে এই রিপোর্ট তার প্রমাণ।

পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের জনবল তলানিতে। কনস্টেবল পদের ৪৪ শতাংশই শূন্য। ফটো ক্রেডিট- ওয়ান ইন্ডিয়া

উচ্চ আদালতে কর্মীদের ৩১ শতাংশ পদ খালি। কলকাতা হাইকোর্টে ঝুলে থাকা মামলার প্রায় ৪০ শতাংশ ১০ বছরের পুরোনো। নিম্ন আদালতে ঝুলে থাকা মামলার ২০ শতাংশ ১০ বছরের পুরোনো। পশ্চিমবঙ্গে বিচারব্যবস্থার পেছনে জনসংখ্যা পিছু খরচ হয় মাত্র ৭৫ টাকা।

এক নজরে ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট-২০২২-

  • দশে ৬.৩৮ স্কোর করে রিপোর্টে সামগ্রিকভাবে প্রথম হয়েছে বিজেপি শাসিত কর্নাটক। কর্নাটক দ্বাদশ থেকে প্রথমে উঠে এসেছে। ৬.১১ স্কোর করে দ্বিতীয় তামিলনাড়ু। এক‌ই স্কোর করে তেলেঙ্গানা তিনে। ৫.৬০ স্কোর করে‌ গুজরাট চতুর্থ। ৫.৪১ স্কোর নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ পঞ্চম। মাত্র ৩.৮৮ স্কোর করে পশ্চিমবঙ্গ সপ্তদশ স্থানে। একেবারে শেষে উত্তরপ্রদেশ।
  • পুলিশি ব্যবস্থায় ৬.৯২ স্কোর করে সেরা রাজ্য তেলেঙ্গানা। পুলিশে দশ থেকে প্রথমে উঠে এসেছে কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের রাজ্য। ৬.৬১ স্কোর নিয়ে কর্নাটক দ্বিতীয়। ৬.২২ স্কোর করে তৃতীয় অন্ধ্রপ্রদেশ। চতুর্থ ওড়িশা।‌ পঞ্চম উত্তরাখণ্ড। ৩.৫৯ স্কোর করে সবার শেষে মমতার বাংলা। পুলিশে যোগীর উত্তরপ্রদেশের অবস্থান পশ্চিমবঙ্গের থেকে ‘বেহেতার’, ৪.৩৭ স্কোর করে পঞ্চদশ।
  • আদালত বিভাগে ৬.৯৬ স্কোর করে প্রথম তামিলনাড়ু। ৬.৭৯ স্কোর করে দ্বিতীয় কর্নাটক। ৬.৫৫ স্কোর নিয়ে পাঞ্জাব তিনে। কেরালা চতুর্থ ও তেলেঙ্গানা পঞ্চম স্থানে। ৩.৪৬ স্কোর করে সবার শেষে পশ্চিমবঙ্গ।
  • আইনি সহায়তায় ৬.৩১ স্কোর করে ঝাড়খণ্ড প্রথম। ৬.১৩ স্কোর নিয়ে কর্নাটক দ্বিতীয়। ৬.১০ স্কোর করে গুজরাট তৃতীয়। ৬.০২ স্কোর করে হরিয়ানা চতুর্থ। ৫.৯২ স্কোর করে পঞ্চম তেলেঙ্গানা। আইনি সহায়তাতেও খারাপ পারফরম্যান্স বাংলার। ৪.৮৮ স্কোর নিয়ে পঞ্চদশে।
  • রিপোর্টে র‍্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে রাজ্যগুলিকে সেরা, মাঝারি ও জঘন্য- এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বাদে আরও যে পাঁচটি রাজ্য জঘন্য পারফরম্যান্স করেছে- বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা ও উত্তরাখণ্ড।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার টাটা ট্রাস্টের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পেশ করা রিপোর্টকে অস্বীকার করতেই পারে কিন্তু রাজ্যে পুলিশের জনবল যে তলানিতে ঠেকেছে তা অস্বীকার করার মুখ নেই প্রশাসনের। বারো বছরের তৃণমূলের শাসনে বাংলার পরিস্থিতি কতটা বেহাল হয়েছে বোঝাতে বিরোধীরা টাটা ট্রাস্টের ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট-২০২২-কে হাতিয়ার করতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট- ২০২২ দেখতে ক্লিক করুন👇

https://indiajusticereport.org/


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *