দুষ্কৃতীদের কোন‌ও ধর্ম নেই, তবুও এত মৌনতা কেন? - nagariknewz.com

দুষ্কৃতীদের কোন‌ও ধর্ম নেই, তবুও এত মৌনতা কেন?


গত বৃহস্পতিবার উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জে ঘটে গেল কী মর্মান্তিক ঘটনা! এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে স্বজনদের অভিযোগ। চারপাঁচ জন মিলে ধর্ষণ করার পর অচৈতন্য অবস্থায় কিশোরীটিকে একটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।‌ পরে তার মৃতদেহ উদ্ধার হলে গ্রামবাসীরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের পিটিয়ে অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে মৃতদেহ টেনে হেঁচড়ে গাড়িতে তোলে। এই হৃদয়বিদারক দৃশ্যের ভিডিও আবার ভাইরাল হয়েছে। যা চোখে দেখাও পাপ।

রাজবংশী সম্প্রদায়ের যে নাবালিকা কন্যাটি ধর্ষিত ও খুন হয়েছে বলে অভিযোগ, সে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ত। যে কন্যার পড়ালেখা শিখে বাপমায়ের মুখ উজ্জ্বল করার কথা, তাকে কাদের লালসার শিকার হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হল? গ্রামবাসী ও মৃতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, ঘটনা ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লেগেছে পুলিশ ও শাসকদল। ঘটনাটিকে প্রণয়ঘটিত আত্মহত্যা বলেও চালাতে চাইছে প্রশাসন। গ্রামের মানুষের আরও অভিযোগ, ঘটনায় জড়িতদের ধরপাকড়ের চাইতে প্রতিবাদকারীদের দমনে অধিক আন্তরিক পুলিশ। এই ধরণের ঘটনার পর উত্তেজিত জনতার পথ অবরোধ বা তাদের আইন হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা নতুন নয়। পরিস্থিতি সে’রকম হলে পুলিশ নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে কিন্তু পুলিশ যদি দুষ্কৃতীদের আড়াল করার চেষ্টা করে তবে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

খুন ধর্ষণের ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তির, তারা ভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের। সত্যিই তো, দুষ্কৃতীদের কোন‌ও ধর্ম-বর্ণ হয় না। কিন্তু সম্প্রদায়গত ভিন্নতার কারণেই যদি অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টা করা হয়, তবে তো মানুষের মুখ বন্ধ করে রাখা যাবে না। কালিয়াগঞ্জ জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি। জাতীয় শিশু অধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন ও অন্যান্য সদস্যদের পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়েছে। এত নৃশংসতম ঘটনা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে উচ্চবাচ্য নেই। কলকাতায় সুশীলদের কোন‌ও মোমবাতি মিছিল নেই। বিজেপি ভিন্ন আর কোনও রাজনৈতিক দলের মুখে প্রতিবাদ নেই। তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেস- কোন‌ও দলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে ঘটনার নিন্দা বা প্রতিবাদ জানিয়ে একটা বিবৃতি পর্যন্ত চোখে পড়ছে না।

কেন এই নীরবতা? ঘটনাস্থল কলকাতা থেকে দূরে উত্তরবঙ্গের একটি প্রান্তিক অঞ্চলে বলে? ভিকটিম সহজ-সরল রাজবংশী সম্প্রদায়ের বলে? নাকি অভিযুক্তদের সম্প্রদায়গত পরিচিতিতে ভিন্নতা আছে বলে? দুষ্কর্ম যে করে, সেই দুষ্কৃতী। দুষ্কৃতী তো দুষ্কৃতীই। দুষ্কৃতীদের তো কোন‌ও জাত-ধর্ম হয় না। তাহলে কালিয়াগঞ্জ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের গলার আওয়াজ নেই কেন? এত এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা কেন? এত মৌনতা কেন?

কালিয়াগঞ্জে নাবালিকাকে খুন ও ধর্ষণের যে অভিযোগ উঠেছে, তার অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত চাই। শাসকদলের মুখপাত্র তো আগ বাড়িয়ে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলতে ব্যস্ত। অথচ স্থানীয় মানুষ যা দেখেছেন, বুঝেছেন, জেনেছেন তার কোনও মূল্য তিনি দিচ্ছেন না। ময়নাতদন্তে কোন‌ও কারচুপি হয় নি বলে আশা করা যায়। সবশেষে এই টুকুই বলার, রাজনৈতিক হিসেবনিকেশের উর্ধ্বে উঠে সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক। দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা হলে রাজবংশী সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাত লাগার আশঙ্কা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

Feature Image is Representational. Credit- Outlook.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *