রাজনীতিতে সৌজন্য কাম্য কিন্তু তা একতরফা রক্ষা করা সম্ভব নয় - nagariknewz.com

রাজনীতিতে সৌজন্য কাম্য কিন্তু তা একতরফা রক্ষা করা সম্ভব নয়


পরিষদীয় রাজনীতি শিষ্টাচারের রাজনীতি। এই রাজনীতিতে ব্যক্তি আক্রমণ, কুৎসা কাম্য নয়। তারপরেও রাজনৈতিক পরিসরে কাদা ছোড়াছুড়ির ঘটনা কম নয়। অতীতেও অনেক রাজনৈতিক নেতা কুৎসা ও ব্যক্তি আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এখনও হচ্ছেন। ভবিষ্যতে কুৎসার রাজনীতি বন্ধ হবে, এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং সামাজিক মাধ্যমের এই যুগে ব্যক্তিগত জীবন‌ নিয়ে টানাটানির ঘটনা আরও বেড়ে গেছে। তারপরেও একটা কথা আছে। সাধারণ মানুষের মুখ যদি বন্ধ নাও করা যায় কিন্তু যাঁরা সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃস্থানীয়, তাঁদের তো একটা দায় থেকে যায়, আপনি আচরি ধর্ম, অপরকে শেখানোর।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যক্তি আক্রমণ শানিয়ে, অবসরপ্রাপ্ত একজন আমলার লেখা একটি ব‌ইয়ের উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন নিয়ে নানা কথাবার্তা বলে কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী কৌস্তুভ বাগচী নিঃসন্দেহে কুরুচির পরিচয় দিয়েছেন। কৌস্তুভকে শনিবার সকালে গ্রেফতার করে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য ধরায় মামলা রুজু করেছে কলকাতা পুলিশ। ইতিমধ্যে ব্যাঙ্কশাল আদালত থেকে জামিন‌ও মিলেছে তাঁর। কৌস্তুভ মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যক্তি আক্রমণে করে ভুল করেছেন একশ বার মানছি, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নিজেও কি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি শিষ্টাচার বজায় রাখতে পেরেছেন?

সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফল বেরোনোর দিন নবান্নে বসে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাষায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরীকে আক্রমণ করেছেন, তা কোন শিষ্টাচার ও উচ্চ রুচির পরিচয় বহন করে? কৌস্তুভ মমতার বিরুদ্ধে ব্যক্তি আক্রমণ করেছেন। মমতা কি অধীরকে ব্যক্তি আক্রমণ করেন নি? অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তি আক্রমণের জবাব দিতে গিয়েই তো মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যক্তি আক্রমণের রাস্তা বেছে নিয়েছেন কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা। নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “অধীরের কন্যার আত্মহত্যা ও তাঁর গাড়িচালকের মৃত্যু নিয়ে সব জানি। আমি মুখ খুললে বিপদ হয়ে যাবে!” মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো তাঁর একজন সহনাগরিককে হুমকি দিয়ে বসলেন! কৌস্তুভ বাগচীর বিরুদ্ধে হুমকি ও প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ এনেছে পুলিশ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তো এক‌ই অভিযোগে অভিযুক্ত হ‌ওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়ে বসে আছেন।

সংসদীয় রাজনীতিতে শিষ্টাচার, শালীনতা সৌজন্য কোনও একতরফা ব্যাপার নয়। সরকার ও বিরোধী পক্ষ- উভয়কেই তা বজায় রাখতে হয়। বরং শিষ্টাচার সৌজন্য বজায় রাখার দায়টা সরকারের বেশি। সরকার প্রধানের আরও বেশি। কারণ সরকার, প্রশাসন সর্বোপরি গোটা রাজ্যের গুরু দায়িত্ব তাঁর স্কন্ধে। একটা উপনির্বাচনে তাঁর দলের পরাজয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মাথায় কী এমন বজ্রাঘাত হল যে তিনি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে প্রতিপক্ষ দলের নেতাকে যাকে বলে ‘বিলো দ্য বেল্ট’ আঘাত, সেটাই করে বসলেন?

এর আগে বিজেপির নবান্ন অভিযান ঘিরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে যৌনগন্ধী ব্যক্তি আক্রমণ চালিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সে’বার‌ও পাল্টাপাল্টি শুরু হতেই ভুল বুঝতে পারে শাসক শিবির। মোদ্দা কথা হল, ক্রোধে অন্ধ হয়ে কার‌ও কেচ্ছার ঝাঁপি খুলতে না যাওয়াই ভাল। কারণ এর ঝাঁপি ও খোলা শুরু করলে রাজনৈতিক পরিমণ্ডল বিষিয়ে উঠবে। তার চেয়ে বরং নেতারা পরস্পরের ব্যক্তি জীবনের প্রতি সম্মান রক্ষা করে চলুন।

Feature Image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *