সাধরণতন্ত্র দিবসে জাতির উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি: নানা ভাষা, নানা মত ভারতীয় গণতন্ত্রকে ঐক্যবদ্ধ করেছে - nagariknewz.com

সাধরণতন্ত্র দিবসে জাতির উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি: নানা ভাষা, নানা মত ভারতীয় গণতন্ত্রকে ঐক্যবদ্ধ করেছে


ডেস্ক রিপোর্ট: ভারতের ৭৪তম সাধারণতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। জনজাতি গোষ্ঠী থেকে আসা দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি তিনি। সাধারণতন্ত্র দিবসের সকালে দেশের রাজধানীর রাজপথে সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজে প্রথমবারের মতো অভিবাদন গ্রহণ করবেন একজন জনজাতি গোষ্ঠীর নারী রাষ্ট্রপ্রধান। তার আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রশংসা করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ভারত মানেই যে বহুত্ববাদ, আবার এই বিবিধতার মাঝেই যে ভারতের মিলন মহান- তাও স্মরণ করালেন রাষ্ট্রপতি।

দীর্ঘ উপনিবেশিক শাসনের অবসানে বহুদলীয় গণতন্ত্রকেই পথ হিসেবে বেছে নিয়েছিল ভারত। পথটি কঠিন হলেও তা যে ভুল ছিল না, ভারতীয় গণতন্ত্রের সাফল্য‌ই তার প্রমাণ। নানা ধর্ম, ভাষা, বর্ণ এবং গোষ্ঠী সত্ত্বেও ভারতে গণতন্ত্র কেন সফল হল, নিজের ভাষণে তা ব্যাখ্যা করেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি বলেন, “গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে ভারত সফল হতে পেরেছে কারণ, নানা ধর্ম, ভাষা এবং গোষ্ঠী আমাদের বিভাজিত করতে পারে নি। বরং এইসব বিবিধতা আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ করেছে।”

রাষ্ট্রপতি বলেন, “উপনিবেশিক শাসনের ভয়ঙ্কর দুই কুপ্রভাব ছিল দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতা। তারপরেও ভারত গণতন্ত্রের পথে অবিচল থাকে। এত বিশাল ও এত বিবিধতায় পরিপূর্ণ জনসমুদায় একমাত্র গণতন্ত্রের জন্য‌ই একজোট হয়েছিল।” রাষ্ট্রপতি বলেন, ভারতকে গণতন্ত্রের জননী বলা হয়ে থাকে যদিও আমাদের আধুনিক গণতন্ত্রের বয়স বেশি নয়। সংবিধান প্রণেতাদের দূরদর্শিতার কারণেই ভারতের গণতন্ত্র সমস্ত বাধা-বিপত্তি, ঝড়-ঝঞ্ঝা উতরে শেষ পর্যন্ত সাফল্যের মুখ দেখেছে বলে মনে করেন দ্রৌপদী মুর্মু। রাষ্ট্রপতির ভাষায়- “বাবা সাহেব বি আর আম্বেদকরের মতো দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সংবিধান প্রণেতাদের কারণেই আমরা একটি গরীব ও নিরক্ষর দেশ থেকে একটি আত্মবিশ্বাসী জাতিতে পরিণত হয়েছি।” রাষ্ট্রপতি বলেন, “সংবিধানে নিহিত আদর্শ‌ই প্রতিনিয়ত আমাদের গণতন্ত্রকে পথ দেখিয়ে আসছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও গান্ধীজির স্বপ্ন সর্বোদয় অর্থাৎ প্রতিটি নাগরিকের উত্থান এখনও বাকি আছে।”

দেশের সাফল্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই সবথেকে উৎসাহব্যঞ্জক বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, “ভারত পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে আর্থিক মন্দার মধ্যেও ভারত এই মর্যাদা লাভ করেছে।” অতিমারি পরিস্থিতি সামাল দিয়ে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বলে নিজের ভাষণে দাবি করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। রাষ্ট্রপতি বলেন, “কোভিড অতিমারি চতুর্থ বছরে পড়েছে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেই তা বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। অতিমারির শুরুতে ভারতের অর্থনীতিও যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যদিও সক্ষম নেতৃত্ব ও সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে আমরা দ্রুত‌ই আর্থিক মন্দা কাটিয়ে উঠে ফের সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে চলেছি।” অর্থব্যবস্থার অধিকাংশ ক্ষেত্র‌ই আজ অতিমারির প্রভাব থেকে বেরিয়ে এসেছে বলে দাবি করেন রাষ্ট্রপতি।

কোভিড অতিমারিকালে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প গরীবদের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করছে বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২০২০-এর মার্চে প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ যোজনা ঘোষণা করে সরকার। এর ফলে সেই কঠিন সময়েও কাউকে খালি পেটে ঘুমোতে যেতে হয় নি। ৮১ কোটি দেশবাসী প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ যোজনার সুবিধা পেয়েছেন। ২০২৩-এও উপভোক্তাদের বিনামূল্যে মাসিক রেশন মিলবে বলে সরকার ঘোষণা করেছে।” দেশ আর্থিকভাবে শক্তিশালী হতে পেরেছে বলেই সরকার দরিদ্র ও দুর্বল নাগরিকদের জন্য এত বড় কর্মসূচি সফলভাবে রূপায়ণ করতে পেরেছে বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি।

কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতির‌ও প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। রাষ্ট্রপতি বলেন, “শিক্ষাকে যুগোপযোগী করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের নতুন শিক্ষানীতি কার্যকরী হবে।”

Feature Image Source- President of India official FB page.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *