হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট ভারতকে দুর্বল করতে পরিকল্পিত হামলা ছাড়া আর কিছু নয়, পাল্টা আদানিদের - nagariknewz.com

হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট ভারতকে দুর্বল করতে পরিকল্পিত হামলা ছাড়া আর কিছু নয়, পাল্টা আদানিদের


বিজনেস ডেস্ক: কারচুপি করে শেয়ারের দর বাড়িয়েছে আদানি গোষ্ঠী- আমেরিকার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের এই অভিযোগে তোলপাড় দেশের শেয়ার বাজার। সাড়া পড়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও। আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানি মোদী ঘনিষ্ঠ- বাজারে এমন খবর বহুদিন ধরেই চাউর আছে।‌ ফলে রাজনীতির মাঠেও হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের হাওয়া লেগেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে নিশানা করতে নেমে পড়েছে বিরোধীরা। গত মঙ্গলবার আদানি গোষ্ঠীকে অভিযুক্ত করে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। পাঁচ দিনের মাথায় রবিবার বেশি রাতে হিন্ডেনবার্গের অভিযোগের জবাব দিল‌ আদানি গোষ্ঠী।

৩২ হাজার শব্দের জবাবে ৪১৩ পাতা

আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কারচুপির  অভিযোগ প্রমাণ করতে ৩২ হাজার শব্দের প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। হিন্ডেনবার্গের অভিযোগগুলির জবাব দিতে ৪১৩ পাতার পাল্টা প্রতিবেদন সামনে এনেছেন আদানিরা। হিন্ডেনবার্গের যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি ভারতের উপর পরিকল্পিত হামলার উদ্দেশ্যেই এই মিথ্যে রিপোর্ট ছাড়া হয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছে আদানি গোষ্ঠী। এই মুহূর্তে আদানিরা ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক গোষ্ঠী। আদানি গোষ্ঠীর মূলধন ২৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২২– এ আদানি গোষ্ঠী মুনাফা করেছিল ২৩.৩ বিলিয়ন ডলার। এই পরিপ্রেক্ষিতে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধে তোলা আদানি গোষ্ঠীর পাল্টা অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে দেশের বাণিজ্যিক মহল।

প্রকাশিত হ‌ওয়ার পাঁচ দিন পর হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের কড়া জবাব দিল আদানি গোষ্ঠী। ফটো- সংগৃহীত

আদানি গোষ্ঠীকে অভিযুক্ত করে রিপোর্টে ৮৮টি প্রশ্ন রেখেছিল হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। আদানিরা জবাব দিতে গিয়ে জানিয়েছেন, ৮৮টির মধ্যে ৬৮টি প্রশ্নের উত্তর গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার বার্ষিক রিপোর্টে আগেই প্রকাশিত হয়েছে। আদানিদের অভিযোগ, ভারতের বাজারে পুঁজি সংগ্রহের প্রক্রিয়া সম্পর্কে সম্যক ভাবে না জেনেই  রিপোর্ট তৈরি করেছে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। পুঁজি সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা যে বেআইনি পথে যায় নি কিম্বা দেশের প্রচলিত আইন লংঘন করে নি, তার কিছু প্রমাণ ৪১৩ পাতার জবাবে দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী।

গৌতম আদানি: আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার, বিশ্বের ধনীদের তালিকায় এখন সাত নম্বরে। ফটো- সংগৃহীত

আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অনিয়মের  অভিযোগ আনতে গিয়ে গোষ্ঠীটির একাধিক প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক কর্মকর্তার (সিএফ‌ও) রেফারেন্স টেনেছে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। হিন্ডেনবার্গের দাবি, ওই সমস্ত কর্মকর্তা সংস্থার অনিয়মের কারণে আদানি গোষ্ঠী থেকে পদত্যাগ করেছেন। রবিবার আদানি গোষ্ঠী জবাবে জানিয়েছে, যাঁদের নাম বলা হচ্ছে, তাঁরা কেউই পদত্যাগ করেন নি। সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থেকে আরও বৃহত্তর দায়িত্ব পালন করছেন তাঁরা।

৩ দিনে আদানিদের ক্ষতি ৫ লক্ষ কোটি টাকা

গত মঙ্গলবার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকেই শেয়ার বাজারে আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারের দর দ্রুত পড়তে থাকে। ফলে সেনসেক্স‌ও অনেকটা নেমে যায়। লগ্নিকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টের বিরুদ্ধে দ্রুত জবাব দেওয়াটা খুব জরুরি হয়ে পড়ে আদানিদের কাছে। ৪১৩ পাতার বিশাল প্রতিবেদনে ধরে ধরে হিন্ডেনবার্গের প্রতিটি অভিযোগের জবাব দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। আদানি গোষ্ঠীর দাবি খুব পরিস্কার- “হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট ভুল তথ্য আর ভিত্তিহীন ও অসম্মানজনক কিছু অভিযোগের সমষ্টি মাত্র। এর মধ্যে অনেকগুলি অভিযোগ দেশের সর্বোচ্চ আদালত খারিজ করে দিয়েছে বহু আগেই।”

রবিবার রাতে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের বিরুদ্ধে বিশাল জবাব আসে আদানিদের তরফ থেকে। যদিও সোমবারের শেয়ার বাজারে তার তেমন কোনও ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায় নি। বাজার খোলার সাথে সাথেই আদানিদের একাধিক সংস্থার  দর পড়তে শুরু করে।  এসিসি, আদানি এন্টারপ্রাইসেস, আদানি পোর্টস এবং অম্বুজা সিমেন্টের শেয়ার দর ১০ শতাংশ চড়লেও আদানিদের বাকি সংস্থাগুলি মুখ থুবড়ে পড়ে। এর মধ্যে আদানি গ্রিন এনার্জি, আদানি ট্র্যান্সমিশন, আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ার দরে ২০ শতাংশ পতন ঘটে। আদানি পাওয়ার, আদানি উইলমার ও এনডিটিভির শেয়ার ৫ শতাংশ ঘেটে যায়। সব মিলিয়ে গত তিন দিনে আদানিরা পুঁজি বাজারে লোকসান করেছে ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা। সপ্তাহের প্রথম দিন সোমবার আদানি গোষ্ঠী হারিয়েছে ১ লক্ষ কোটি টাকা।

ভারতের পুঁজি বাজারকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র?

আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এমন সময়ে উঠল যখন,কোভিডের ধাক্কা সামলে ভারতীয় অর্থনীতির দ্রুত বিস্তৃতি ঘটছে। পক্ষান্তরে চিনের অর্থনীতি ধুঁকছে এবং একাধিক বহুজাতিক বিনিয়োগকারী চিন থেকে ব্যবসা গুটিয়ে ভারতে সরে আসার কথা ভাবছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ অতিমারি জনিত মন্দা কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ। এমনকি আমেরিকান অর্থনীতি‌ও মন্দার ধাক্কায় বেশ কাবু। কিন্তু ভারতকে নিয়ে আশান্বিত সবাই। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় শেয়ার বাজারকে টালমাটাল করে দিতেই কি পরিকল্পনামাফিক আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ? বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়ে গেলে শুধু আদানি গোষ্ঠীকেই নয় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বাকিদেরও। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। সরকারকে বিব্রত করতে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট বৃহত্তর কোনও ষড়যন্ত্র নয় তো?

Feature Image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *