গিরি রাষ্ট্রপতিকে বিদ্রুপ করলেন। নীরবে শুনলেন কুণাল-শশী-শিউলি। কুণালের মুখে মৃদু হাসিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ডেস্ক রিপোর্ট: রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে করা অখিল গিরির অশোভন মন্তব্যের জেরে বিপাকে তৃণমূল কংগ্রেস। অখিল গিরি পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর থেকে নির্বাচিত তৃণমূলের বিধায়ক ও রাজ্যের কারা প্রতিমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত)। শুক্রবার নন্দীগ্রামে এক সভায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করতে গিয়ে বেসামাল হয়ে দেশের প্রথম জনজাতি রাষ্ট্রপতিকেও অসম্মান করে বসেন অখিল। অখিলের বক্তব্যের ভিডিও ( nagariknewz.com ভিডিওর সত্যতা যাচাই করে নি ) ভাইরাল হতেই চারদিকে ঢি ঢি পড়ে গেছে। ভিডিওতে অখিল গিরিকে অঙ্গভঙ্গি করে বলতে শোনা যাচ্ছে, “আমরা রূপের বিচার করি না। তোমার রাষ্ট্রপতির চেয়ারকে আমরা সম্মান করি। তোমার রাষ্ট্রপতিকে কেমন দেখতে বাবা?”
রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি যখন সভায় দাঁড়িয়ে দেশের মহিলা ও জনজাতি রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে আপত্তিকর ও অপমানজনক ইঙ্গিত করছিলেন তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন শশী পাঁজা, যিনি রাজ্যের নারী ও শিশু বিকাশ এবং সমাজকল্যাণমন্ত্রী। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের আরও একজন নারী মন্ত্রী শিউলি সাহা। শিউলি মমতার মন্ত্রিসভার পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী। সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এবং প্রাক্তন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রও। অখিল যখন দেশের রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে খারাপ কথা বলছিলেন, শুনে এদের কারোর মধ্যেই কোনও হেলদোল দেখা না যাওয়ায় বিস্মিত রাজনৈতিক মহল। সভাস্থলে দাঁড়িয়ে কুণাল কোনও প্রতিবাদ করেন নি। এমনকি শশী ও শিউলি- এই দুই নারী মন্ত্রীও নীরব ছিলেন।
সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যমে অখিলের বক্তব্য ভাইরাল হতেই চেপে ধরে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও অখিল গিরির মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। দেশের রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে করা অখিল গিরির আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে শনিবার রাজ্য জুড়ে পথে নেমেছে বিজেপির অঙ্গ সংগঠন জনজাতি মোর্চা। দেশের প্রথম জনজাতি মহিলা রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে করা অখিল গিরির অপমানজনক মন্তব্যের জেরে দলকে অনেক চড়া রাজনৈতিক মূল্য গুণতে হবে- এটা বুঝতে পেরেই সম্বিত ফেরে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের। শনিবার দলের অফিসিয়াল ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে মন্ত্রী অখিল গিরির মন্তব্যের নিন্দা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ট্যুইট করে তৃণমূল জানিয়েছে, “ভারতের মাননীয় রাষ্ট্রপতি, দ্রৌপদী মুর্মুর প্রতি আমাদের পরম শ্রদ্ধা। আমাদের দলের বিধায়কের করা দুর্ভাগ্যজনক মন্তব্যের আমরা তীব্র বিরোধিতা করি। নারীর ক্ষমতায়নের যুগে এই ধরণের দুর্ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়।”
তৃণমূল অখিল গিরির মন্তব্যের নিন্দা করে প্রকাশ্যে বিবৃতি দেওয়ার আগেই দলের মধ্যে চাপের মুখে পড়ে নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন রামনগরের বিধায়ক। শনিবার সকালে অখিল বলেন,” শুভেন্দু অধিকারী এক মাস ধরে আমার সম্পর্কে উল্টোপাল্টা বলে আসছেন। আমি বুড়ো মানুষ।শুভেন্দুর কটাক্ষ শুনে শুনে মনে ক্রোধ জন্মেছিল। রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে যে কথা আমার মুখ থেকে বেরিয়েছে, তা ক্রোধের বশে বেরিয়ে এসেছে। আমি অনুতপ্ত। রাষ্ট্রপতিকে আমি কোনও অসম্মান করি নি। তাঁর প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে।”
ক্ষমা চেয়েও অখিল গিরি নিজের মন্ত্রীত্ব রাখতে পারেন কিনা, এখন এই নিয়েই জোর চর্চা চলছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে। দেশের সাংবিধানিক প্রধান এমনিতেই সমস্ত বিতর্কের ঊর্ধ্বে তার উপর দ্রৌপদী মুর্মু সমাজের জনজাতি সম্প্রদায় থেকে আসা প্রথম রাষ্ট্রপতি। অখিল গিরির দৌলতে তৃণমূলের গায়ে জনজাতি বিদ্বেষী তকমা লাগলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলকে তার দাম দিতে হতে পারে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের জনজাতি বেল্টগুলিতে ভরাডুবি হয়েছিল তৃণমূলের। একুশে ক্ষতি কিছুটা পূরণ হলেও জনজাতিদের মধ্যে হারানো জমি পুরোপুরি ফিরে পায় নি ঘাসফুল শিবির। এই পরিস্থিতিতে দলের স্বার্থে অখিল গিরিকে মন্ত্রিসভা থেকে ছাঁটাই করতেও মমতা দ্বিধা করবেন না বলে রাজনৈতিক মহলের অনুমান।
বেলাগাম হয়ে দেশের রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে কটূ মন্তব্য করার পরিণাম কী, এটা এখন হাড়ে হাড়ে বুঝছেন অখিল গিরি। মন্ত্রিত্ব বাঁচাতে দুঃখপ্রকাশ করে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি পাঠানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অখিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই রাষ্ট্রপতিকে অখিলের পত্র প্রেরণের সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতিতে অখিল গিরি বরাবরই অধিকারী পরিবারের কট্টর বিরোধী। শুক্রবার নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে বলতে গিয়েও সীমা ছাড়ান অখিল। নন্দীগ্রামে ঢুকে বেশি বাড়াবাড়ি করলে শুভেন্দু অধিকারীর হাত ও পাঁজর ভেঙে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন অখিল গিরি। এখন নিজেই চোখে সর্ষেফুল দেখছেন অখিল।
ভাইরাল ভিডিও-
Feature image source- twitter.