চিনপন্থী ওলির আক্কেল সেলামি, নেপালে ক্ষমতায় ফিরছেন ভারতবান্ধব দেউবাই - nagariknewz.com

চিনপন্থী ওলির আক্কেল সেলামি, নেপালে ক্ষমতায় ফিরছেন ভারতবান্ধব দেউবাই


পুষ্প কমল দোহাল ওরফে প্রচন্ডর মতো মাওবাদী নেতাকেও বেজিংয়ের প্রভাব থেকে সরিয়ে আনতে পারাটা নিঃসন্দেহে ভারতীয় কূটনীতির একটা বড় সাফল্য।

সাউথ এশিয়া ডেস্ক: কে পি শর্মা ওলি প্রধানমন্ত্রী থাকা কালে ভারতের সঙ্গে নেপালের চিরাচরিত বন্ধুত্বে চিড় ধরেছিল। ভারতের সঙ্গে পায়ে পা লাগিয়ে ওলির ঝগড়া করার পেছনে যে চিনের ইন্ধন ছিল, তাতে কোন‌ও সন্দেহ নেই। নেপালের রাজনৈতিক মহলে ওলি বরাবরই চিনপন্থী হিসেবেই পরিচিত এবং ক্ষমতায় বসে তিনি কার্যত বেজিং-য়ের ক্রীড়নক হয়ে পড়েন। রাজার আমলে নেপালের সশস্ত্র মাওবাদী আন্দোলনের পেছনে চিনের একটা মদত ছিল। কিন্তু মাওবাদীদের নেতা পুষ্পকমল দহাল ওরফে প্রচন্ড প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়‌ও নেপালের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের এতটা অবনতি হয় নি, যতটা হয়েছে কমিউনিস্ট ওলির আমলে।

দক্ষিণ এশিয়ার যে কোনও রাষ্ট্রের মাত্রাতিরিক্ত চিন প্রীতি খুব সঙ্গত কারণেই ভারতের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর ভারতের বিরক্তির কারণ হয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় কোন‌ও সরকারের পক্ষেই বেশি দিন টিকে থাকা সম্ভব নয়। কে পি শর্মা ওলিও পারেন নি। জোট শরিক প্রচন্ড ও বাবুরাম ভট্টরাইয়ের সিপিএন (মাওয়িস্ট সেন্টার) সমর্থন তুলে নেওয়ায় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় ওলির সরকার। এবং একুশের ১৮ ‌জুলাই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন তিনি। গত ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ভোট হয়েছে। ফল ঘোষণা শেষ হ‌ওয়ার পথে। ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গেছে, কে পি শর্মা ওলির দল সিপিএন ( ইউএম‌এল) নেতৃত্বাধীন জোটকে প্রত্যাখ্যান করেছেন নেপালের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার দল‌ নেপালি কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট‌ই ফের ক্ষমতা ধরে রাখল।

নেপালের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ-এর নির্বাচনে প্রত্যক্ষ নির্বাচন হয়েছে ১৬৫টি আসনে। বাকি ১১০টি আসনে নির্বাচন হবে সামানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে। সরকার গঠনের জন্য কোনও দল বা জোটকে ১৩৮ আসন পেতেই হবে। এখনও পর্যন্ত ৫১টি আসন জিতেছে নেপালি কংগ্রেস। আর‌ও ৬টি আসনে তারা এগিয়ে আছে। জোটসঙ্গী সিপিএন (মাওয়িস্ট সেন্টার) ১৬টি জিতেছে, আর‌ও ২টিতে এগিয়ে। অপর জোটসঙ্গী সিপিএন ( ইউনাইটেড সোস্যালিস্ট) ১০টি আসনে বিজয়ী। নেপালি কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোটের অপর দুই ছোট শরিক লোকতান্ত্রিক সমাজবাদী পার্টি ৪টি আসনে এবং রাষ্ট্রীয় জনমোর্চা ১টি আসনে বিজয়ী।

কে পি শর্মা অলির সিপিএন ( ইউএম এল) এখনও পর্যন্ত ৩৮টি আসন জিতেছে ও ৪টিতে এগিয়ে। জোটসঙ্গী রাষ্ট্রীয় প্রজাতান্ত্রিক পার্টি ৬টিতে বিজয়ী ও ১টি আসনে এগিয়ে। অপর জোটসঙ্গী জনতা সমাজবাদী পার্টি ৫টিতে বিজয়ী ও ১টিতে এগিয়ে। সদ্য গঠিত রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টি ৭ টি আসন জিতেছে ও ১টিতে এগিয়ে।

ফলাফলে পরিস্কার, প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ১৬৫টি আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠ‌ই নেপালি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটের দখলে গেছে। সামানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে আসন বন্টনের সময় ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে যেতে অসুবিধা হবে না ক্ষমতাসীন জোটের। কে পি শর্মা ওলিকে ফের নেপালের প্রধানমন্ত্রীর কুর্শিতে বসাতে পেছন থেকে কম কলকাঠি নাড়ে নি কাঠমান্ডুর চিন দূতাবাস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিনের চেষ্টা জলে গেছে। ওলির অতিরিক্ত চিন প্রীতিই সিপিএন ( ইউএম‌এল) দলে বিভাজনের অন্যতম কারণ বলে মনে করে নেপালের রাজনৈতিক মহল। নেপালের বিশিষ্ট কমিউনিস্ট নেতা মাধবকুমার নেপাল ইউএম‌এল ছেড়ে পৃথক দল সিপিএন ( ইউনিফায়েড সোস্যালিস্ট) গড়েন গত বছর। এমনকি একুশের জুলাইয়ে প্রচন্ড ও বাবুরাম ভট্টরাইয়ের নেতৃত্বাধীন মাওবাদীদের ওলির সঙ্গ ছেড়ে নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানোর পেছনেও এক‌ই কারণ রয়েছে বলে মনে করা হয়। পুষ্প কমল দোহাল ওরফে প্রচন্ডর মতো মাওবাদী নেতাকেও বেজিংয়ের প্রভাব থেকে সরিয়ে আনতে পারাটা নিঃসন্দেহে ভারতীয় কূটনীতির একটা বড় সাফল্য।

চিনের প্ররোচনায় ভারতের বিরোধিতায় নেমে রাজনৈতিক ভাবে নিঃসঙ্গ হয়েছেন কে পি শর্মা ওলি।

চিনের কোলে চড়ে কে পি ওলির সরকার ভারতের বিরোধিতায় মেতে না উঠলে সিপিএন (ইউএম‌এল)-এর এমন পরিণতি হত না বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। ওলিকে উচিত শিক্ষা দিতেই তাঁকে রাজনৈতিক ভাবে নিঃসঙ্গ করে দেয় ভারত। ওলি একটা বিষয় বিস্মৃত হয়েছিলেন, ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভৌগলিক এবং সাংস্কৃতিক- সব দিক দিয়েই নেপালের উপর ভারতের প্রভাব চিনের থেকে অনেক বেশি। কে পি শর্মা ওলির পরাজয় প্রমাণ করল- ভারতের অন্ধ বিরোধিতা করে কাঠমান্ডুতে কোনও সরকারের পক্ষে দীর্ঘদিন টিকে থাকা সম্ভব নয়।

ভারতবান্ধব শের বাহাদুর দেউবাই নেপালের প্রধানমন্ত্রী থাকছেন।

নেপালকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার রসদ এবং রাজনৈতিক সমর্থন ভারত থেকেই পেয়েছে নেপালি কংগ্রেস। নেপালি কংগ্রেস বরাবরই ভারতপন্থী। কাঠমান্ডুতে নেপালি কংগ্রেসের মতো জাতীয়তাবাদী দল ক্ষমতায় থাকলে সঙ্গত কারণেই স্বস্তিতে থাকে সাউথ ব্লক। ওলির বিদায়ের পর নেপালি কংগ্রেস নেতা শের বাহাদুর দেউবা প্রধানমন্ত্রীর কুর্শিতে বসতেই নেপাল-ভারত উত্তেজনার পারদ অনেকটা নেমে যায়। ভারতের সঙ্গে নেপালের কোন‌ও সমস্যা থাকলে, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই তার সহজ সমাধান সম্ভব। নেপালি কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট‌ সরকার স্থায়ীত্ব লাভ করলে কাঠমান্ডুর প্রশাসনের উপর চিনের প্রভাব হ্রাসের পাশাপাশি ভারত-নেপাল সম্পর্ক নিঃসন্দেহে আরও মজবুত হ‌বে।

Feature Image is representational. Photo Credit- Official FB page of Sher Bahadur Deuba and K P Sharma Oli.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *