আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্বকাপের মাঠকেই প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের দেশের সরকারের মুখে ঝামা ঘসে দিলেন ইরানের ফুটবলাররা। সোমবার কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ বি-র ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি ইরান। খেলা শুরুর আগে দোহার খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার পর্বে বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে নজিরবিহীন কান্ড ঘটালেন ইরানের ফুটবলাররা। স্টেডিয়াম জুড়ে ব্যান্ডে ইরানের জাতীয় সঙ্গীতের সুর বেজে উঠলেও তাতে গলা মেলালেন না ইরানের ফুটবলারদের কেউই। মাসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে ইরান বিক্ষোভের আগুনে পুড়ছে। গণবিক্ষোভ দমন করতে নিপীড়ন চালাচ্ছে দেশটির মৌলবাদী সরকার। এখনও পর্যন্ত ৪০০ বিক্ষোভকারী নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত, যাদের বড় অংশই নারী। এমনকি মৃতদের মধ্যে ৪৬ জন শিশুও আছে। ১৬ হাজারের বেশি জেলে। নাগরিকদের উপর সরকারের দমন-পীড়নের প্রতিবাদেই খেলা শুরুর আগে জাতীয় সঙ্গীতে গলা মেলানো থেকে বিরত থাকলেন ইরানের খেলোয়াড়রা।
নিজেদের সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ জানাতেই ইরানের ফুটবলাররা মাঠে জাতীয় সঙ্গীত না গাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। এই ঘটনায় বিশ্বকাপের আন্তর্জাতিক মেগা ইভেন্টে ইরানের অগণতান্ত্রিক মৌলবাদী সরকারের মুখ পুড়ল। ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা পরিচালিত সরকারের বিরুদ্ধে ইরানের জনগণের ক্ষোভ কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, এই ঘটনা তার প্রমাণ। কাতারে পা দিয়েই ইরান ফুটবল দলের অধিনায়ক এহসান হাজসাফি দেশের সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। ইরান ফুটবল দলের অধিনায়ক বলেন, “আমরা ভাল নেই। আমাদের দেশের জনগণ ভাল নেই। আমাদের মানতে হবে যে, দেশের পরিস্থিতি ঠিক নেই।”
মনে করা হচ্ছে যে, দেশের পরিস্থিতির জন্য ইরানের গোটা ফুটবল দলটাই সরকারের উপর ক্ষেপে আছে। সোমবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে জাতীয় সঙ্গীত না গাওয়ার সিদ্ধান্ত টিমের মিটিংয়েই ঠিক হয়েছে। এতে টিম ম্যানেজমেন্টেরও সায় আছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বকাপ ফুটবলের মাঠেও হিজাব বিরোধী বিক্ষোভের আঁচে এইভাবে মুখ পুড়বে, এটা ইরান সরকারের কল্পনার বাইরে ছিল। দেশে ফিরলে ইরানের গোটা ফুটবল টিমটাকেই কঠিন শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
স্পেনে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়েছেন ইরানের বক্সাররা। ইরান বক্সিং ফেডারেশনের প্রধান হোসেইন সুরি জানিয়ে দিয়েছেন, টুর্নামেন্ট শেষে তিনি আর দেশে ফিরছেন না। কাতার বিশ্বকাপে খেলতে আসা ইরানের গোটা ফুটবল টিমটাই তেহেরানে ফিরে না গিয়ে আমেরিকা কিম্বা পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে কিনা এখন এটাই দেখার।
Feature Image Credit- AFP.