বীরভূমের বেতাজ বাদশাহ! মাথায় নেত্রীর হাত। জেলায় তিনিই আইন। এই সেদিনও নিয়ম বহির্ভূতভাবে মাথায় লালবাতি লাগানো গাড়িতে চড়ে সর্বত্র টহল মারতেন। তিনি মুখ খুললেই ভাইরাল। কত হুমকি-ধামকি। কত রসেভরা তির্যক মন্তব্য। কত নতুন নতুন শব্দ এবং প্রবচনের জন্মদাতা তিনি। তাঁর ‘বচনামৃত’ নিয়ে একটা পৃথক অভিধানই চালু হয়ে গিয়েছে বঙ্গে। জেলাশাসক তাঁর ঘরে গিয়ে সেলাম ঠুকে আসতেন। পুলিশের সামনেই তিনি পুলিশকে বোমা মারার হুমকি দিয়েছেন। বিরোধী দলের নেতাদের তুই-তোকারি ছাড়া সম্বোধন করতেন না। তাঁর ভয়ে পঞ্চায়েত-পুরসভা নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থীরা মনোনয়ন পর্যন্ত জমা দিতেন না। লোকসভা-বিধানসভা ভোটের সময় কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে পর্যন্ত ঘোল খাইয়ে ছাড়তেন। এতদিন বোলপুরের খ্যাতি ছিল রবিঠাকুরের জন্য। এখন বোলপুর মানেই কেষ্ট।
কিন্তু এত দাপট, এত বিক্রম আজ গেল কই? তাঁর বিরুদ্ধে গুচ্ছের অভিযোগ সিবিআই-ইডির ঘরে। ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে তলবের পর তলব এড়িয়ে শেষ পর্যন্ত পার পেলেন কি? বৃহস্পতিবার যখন দুয়ারে এসে সিবিআই দাঁড়াল। বাড়ি ঘিরল কেন্দ্রীয় বাহিনী। তখন নাকি ঠাকুরঘরে খিল এঁটে হত্যে দিয়ে পড়েছেন বীরভূমের বীর! কিন্তু কর্ম যখন ফল দিতে শুরু করে তখন ঈশ্বরও নীরব দর্শক মাত্র। এত বড় নেতা আপনি! এত বড় বড় বুলি আপনার মুখে। এত স্তাবক-ভক্ত-অনুগামী। পাপের পঙ্কে যখন গলা পর্যন্ত ডুবে গেলেন, তখন কেউ এল হাতটি ধরে টেনে তুলতে? পাশে যারা ছিল, বিপদের গন্ধ পেয়ে আস্তে আস্তে সটকে পড়েছে। মাথায় যাঁর আশীর্বাদের হাতটি থাকায় এতদিন ধরাকে সরা জ্ঞান করেছেন, তিনিও কি আর আছেন সঙ্গে? আপনি গ্রেফতার হওয়া মাত্রই ব্রেকিং নিউজ। কিন্তু হাজার হাজার জনতা আপনার সমর্থনে পথে নামল? সিবিআই-এর গাড়ি ঘিরে জনতার ঢল নামল আপনাকে বাঁচাতে? বরং সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। আপনার করা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ আপনাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছে বিরোধীরা? চারদিকে ঢাক বাজছে চড়াম চড়াম শব্দে! গুড়-বাতাসা-নকুলদানা বিলি হচ্ছে পথে পথে।
ক্ষমতার দম্ভে মানুষকে তৃণ ভেবে দলন করলে এই হয় একজন নেতার পরিণতি। আপনি তো মশাই চুনোপুঁটি। জেলার নেতা। মিডিয়ার গ্যাস খেয়ে খেয়ে ফোলা বেলুন। সিবিআই-এর এক খোঁচায় এখন গেছেন চুপসে। ইতিহাস ইয়া বড় বড় অত্যাচারী একনায়ককেও যখন ধরাশায়ী করে দিয়েছে, তখন তাদের পাশেও কেউ ছিল না। কেউ থাকে না। সব জয়ধ্বনি নীরব হয়ে যায়। স্তাবকেরা পাল্টি খায়। যারা সেলাম ঠুকত, তারা জুতো ছুঁড়ে। দল ঘাড় থেকে দায় ঝেড়ে ফেলে। প্রাণের প্রভুও পেছন ফেরে।
কেষ্ট দা গো! বাংলা তোমার মতোই আরেক বেতাজ বাদশাহকে পথের ফকির, রাজনৈতিক অনাথ হতে দেখেছে। হলদিয়ার কমরেড লক্ষ্মণ শেঠ। কী দিন গেছে লক্ষ্মণের! আর এখন কোথায় নেমেছে লক্ষ্মণ। মানুষটা এখন এর ওর দুয়ারে উঞ্ছবৃত্তি করছে। কেউ নেয় না। আসলে সবার অলক্ষ্যে মহাকাল ফাঁদ পেতে রাখে। স্তাবকমহলে যতই রাজা-মহারাজা হও, সময়ের কাছে তুমি নেংটি ইঁদুর ছাড়া আর কিছুই নয়। যে বোঝে সে সমঝে চলে। যদিও সময় থাকতে সময়ের খেল বোঝে ক’জন।
ভিডিও: কেষ্ট যখন ব্যাঘ্র ছিল-
Feature image is representational. Video source- Collected.