শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। প্রশ্ন একটাই- মানুষ গড়ার কারিগরদের মানুষ করবে কে?
জলপাইগুড়ি: স্কুলে দুই পড়ুয়ার মধ্যে হাতাহাতির জেরে কান্নাকাটি চিরকালের ঘটনা। কিন্তু স্কুলে সহকর্মীর হাতে লাঞ্ছিত হয়ে শিক্ষিকা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই চলেছেন- এমন দৃশ্য দেখাও বুঝি বঙ্গবাসীর কপালে ছিল! শুক্রবার এই বিরল দৃশ্য দেখা গেল জলপাইগুড়ির মারওয়াড়ি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখায়। দুপুরে স্কুল চলছে। ক্লাসে ক্লাসে ছাত্রীরা পড়ছে। আর প্রধান শিক্ষিকার ঘরে অভিভাবকদের সামনেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে সহশিক্ষিকার উত্তপ্ত বাদানুবাদ। বাদানুবাদ থেকে চুলোচুলি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সরিতা চৌধুরী সহশিক্ষিকা বিভা ভট্টাচার্যকে ধাক্কা মেরে ঘর থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ। এই অপমান নিতে পারেন নি বিভাদেবী। স্কুলেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সহকর্মীকে ধরাশায়ী হতে দেখে আর কালবিলম্ব করেন নি সরিতাদেবী, স্কুল থেকে উধাও হয়ে যান ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষিকা।
খবর পেয়ে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা যখন স্কুলে পৌঁছান, তখন তাঁরা দেখেন, কান্নার বেগে কথা পর্যন্ত বলতে পারছেন সহশিক্ষিকা বিভাদেবী। বিভা চৌধুরীর অভিযোগ, অভিভাবকদের দিয়ে পর্যন্ত তাঁকে অপদস্থ করিয়ে চলেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা। শুক্রবার ঘটনা চরমে ওঠে। অভিভাবকেরা স্কুলে এসে বিভা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেই নাকি মেজাজ হারান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সরিতা চৌধুরী। অভিভাবক ও শিক্ষিকাদের সামনেই বিভা চৌধুরীকে বকাঝকা করতে থাকেন সরিতা। হাত থাকতে শুধু বাক্যবাণ ছোঁড়াই যথেষ্ট নয়- এই চিন্তা মাথায় আসা মাত্রই গায়ে ধাক্কা মেরে সহকর্মীকে ঘর থেকে বের করে দেন এই মহান শিক্ষিকা। হইচই আর কান্নাকাটি শুনে ছুটে আসেন পাশের মাধ্যমিক বিভাগের শিক্ষিকারা। অবস্থা বেগতিক বুঝে স্কুল থেকে কাটিং খান প্রাথমিক শাখার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা। অপমান, আঘাত ও একটানা কান্নার জেরে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্কুলে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে এনে শহরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয় সহকারী শিক্ষিকা বিভা ভট্টাচার্যকে। তাঁকে সেখানে ভর্তি নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। নার্সিংহোমে যাওয়ার আগে হাপুস নয়নে কাঁদতে কাঁদতে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের কাছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে লাগাতার মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন বিভা।
জলপাইগুড়ি মারওয়াড়ি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাথমিক বিভাগে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার হাতে নিগৃহীত হয়ে সহকারী শিক্ষিকার নার্সিংহোমে ভর্তি হওয়ার খবর জেলা বিদ্যালয় (প্রাথমিক) পরিদর্শক শ্যামলচন্দ্র রায়ের কানে গিয়ে পৌঁছেছে। প্রকৃত ঘটনা জানতে স্কুলটিতে একটি অনুসন্ধানী দল পাঠানো হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানান তিনি। এই ঘটনায় স্কুলের ভাবমূর্তিতে কালি লাগল বলে মনে করেন শ্যামলবাবু। তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন জেলা বিদ্যালয় (প্রাথমিক) পরিদর্শক।
নাগরিক সমাজের বড় অংশ বলছে, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিষ শিরে উঠেছে, এখন শিক্ষা দফতর তাগা বাঁধবে কোথায়? সাম্প্রতিক সময়ে স্কুলে শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা আগেও রাজ্যে ঘটেছে। শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। প্রশ্ন একটাই- মানুষ গড়ার কারিগরদের মানুষ করবে কে?
ভিডিওতে দেখুন-
Video and photo- Reporter.