একুশে জুলাই ধর্মতলার মেগা ইভেন্ট নিয়ে তৃণমূলের যতটা উৎসাহ ঠিক ততটাই অনুৎসাহ জাস্টিস সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে। আট বছর আগে কমিশন রিপোর্ট দাখিল করে। অথচ আজও তা বিধানসভায় পেশ করল না সরকার!একটি প্রতিবেদন-
তখনও তৃণমূল কংগ্রেস মহাকালের গর্ভে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী। প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন সোমেন মিত্র। কংগ্রেসে সোমেন মিত্রের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক কেমন মধুর ছিল তা সবার জানা। শুধু আমহার্স্ট স্ট্রিটের ছোড়দা কেন মমতা যতদিন কংগ্রেসে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে তাঁর সুহৃদের কোনও অভাব ছিল না। তিনি যাতে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি না হতে পারেন, তার জন্য যাঁরা পেছন থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কলকাঠি নাড়াতেন তাঁদের অনেকেই আজ মমতা বলতে অজ্ঞান। বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে যে কোনও আন্দোলন কর্মসূচী যুব কংগ্রেসের ব্যানারে একাই নিতেন মমতা। ১৯৯৩-এর একুশে জুলাই মহাকরণ অভিযান ছিল তেমনই একটি কর্মসূচী। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা, সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র চালু প্রভৃতি দাবিতে মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিল যুব কংগ্রেস।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যে কেউ বলবেন, নির্বাচন সংক্রান্ত এই সব দাবি দাওয়া উত্থাপন করার উপযুক্ত জায়গা তো নির্বাচন কমিশন। মহাকরণ অভিযান করতে গিয়েছিলেন কেন মমতা? আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যেকোনও রাজনৈতিক কর্মসূচীর লক্ষ্য থাকত বামফ্রন্ট সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করা। সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কমিটমেন্টে কোনও ফাঁকিবাজি ছিল, মমতার অতিবড় শত্রুও এই অপবাদ দিতে অপারগ। বাম জামানায় অনেক কংগ্রেস নেতারই তরমুজ খ্যাতি জুটেছিল। কিন্তু মমতাকে কখনও ম্যানেজ করতে পারে নি আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। কাজেই কর্মসূচী যাই হোক না কেন, ১৯৯৩ এর একুশে জুলাই মমতার টার্গেট ছিল জ্যোতি বসুর সরকারকে বিব্রত করা। গণতন্ত্রে বিরোধী দলের জন্য কাজটা এমন কিছু অশৈলী নয়।
জ্যোতিবাবুর ট্রিগার হ্যাপি পুলিশ
প্রশ্ন হল সেদিন কী এমন ঘটনা ঘটেছিল যা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১২১ রাউন্ড গুলি ( ৭৫ রাউন্ড রাইফেল আর ৪৬ রাউন্ড রিভলবার থেকে ) চালিয়েছিল? যার পরিণাম ১৩ টি প্রাণের মৃত্যু! জ্যোতি বসুর জামানায় পুলিশকে বলা হত ট্রিগার হ্যাপি। বিগড়ে যাওয়া জনতাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে জল কামান, রাবার বুলেট তখনও আসে নি। বিক্ষোভ একটু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলেই গুলি চালিয়ে দিতে পুলিশ। বামফ্রন্ট আমলে একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটেছে। লোকে গুলি খেয়ে মরলে জ্যোতিবাবু যে খুব বিব্রত হতেন, তেমনও নয়। ১৯৯০ সালের ৩১ অগাস্ট দুপুরে বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন করার সময় কলকাতায় এসইউসি-র মাধাই হালদার পুলিশের গুলিতে নিহত হন। বিকেলে রাইটার্স থেকে বাড়ি ফেরার সময় সাংবাদিকদের জ্যোতি বসু বলেছিলেন, ‘ওদের ( এসইউসির ) নিরামিষে পোষাচ্ছিল না। পুলিশ একটু আমিষ করে দিল।’ পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের নেতাদের মধ্যে একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচীতেই জনসমাগম হত। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি যখন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, একবার মহাকরণ অভিযান ডেকে চূড়ান্ত ফ্লপ হয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৯৩-এর জুলাই মাসে যুব কংগ্রেসের মহাকরণ অভিযানের কথা ঘোষণা হওয়া মাত্রই রাজনৈতিক মহলে টানটান উত্তেজনা অনুভূত হয়। মমতার কোনও কর্মসূচীকেই হেলাফেলা করত না সিপিএম এবং প্রশাসন। কাজেই একুশে জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাকরণ অভিযান মোকাবিলায় পুলিশের দিক থেকে প্রস্তুতির কোনও ঘাটতি ছিল না। কিন্তু তারপরেও বিনা বুলেটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়েছিল পুলিশ।
মনীশ গুপ্তের হলফনামায় অভিযোগের তির যুব কংগ্রেসের দিকেই
পুলিশের পেশ করা রিপোর্ট অনুযায়ী যুব কংগ্রেসের মহাকরণ অভিযানের দিন মেয়ো রোডে ১৫ হাজার, ধর্মতলায় ১৫ হাজার, ব্রেবোর্ন রোডে ১০ হাজার, স্ট্র্যান্ড রোডে ১০ হাজার এবং বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে ৭ হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছিল। পুলিশের হিসেবেই যখন সব মিলিয়ে ৫৭ হাজার তখন ধরেই নেওয়া যায় জমায়েতের সংখ্যাটা দ্বিগুণও হয়ে থাকতে পারে। অভিযান ঘিরে সেদিন সকাল থেকেই দু’তরফেই সাজসাজ রব। মহাকরণের আশেপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্টই জোরদার করা হয়েছিল। কর্মীদের অনেকটা আগে থাকতেই রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ঢুকে পড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সেদিন। জনতার টেম্পার হাইয়ে তুলতে নিঃসন্দেহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জুড়ি নেই। মমতা নিজে সেদিন মহাকরণ অভিযানের কর্মসূচীকে কতটা আক্রমণাত্মক করতে চেয়েছিলেন তা মমতাই ভাল জানেন। তবে প্রশাসনের সদর দফতর ঘিরে ফেলাই যেই রাজনৈতিক কর্মসূচীর লক্ষ্য, সেই কর্মসূচীর মোকাবিলায় সরকারের দিক থেকেও ঢিলেমির কোনও অবকাশ থাকে না সঙ্গত কারণেই। তখন স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন মনীশ গুপ্ত। যিনি এগারোয় যাদবপুরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে হারিয়ে মমতার মন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৯৩-এর দোসরা আগস্ট একুশে জুলাইয়ের ঘটনা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন মনীশ গুপ্ত। স্বরাষ্ট্রসচিবের সেই রিপোর্টে অভিযোগের তির যুব কংগ্রেসের দিকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রাক্তন বিদ্যুৎ মন্ত্রী মনীশ গুপ্ত আর বামফ্রন্ট জামানার স্বরাষ্ট্রসচিব মনীশ গুপ্ত- একই মানুষ। মমতার সরকারের মন্ত্রী হওয়ার ১৮ বছর আগে বামফ্রন্ট সরকারের স্বরাষ্ট্রসচিব হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যে হলফনামা মনীশ গুপ্ত দিয়েছিলেন তা নিঃসন্দেহে তখনকার সরকারের, ব্যক্তি মনীশের নয়। স্বরাষ্ট্রসচিব মনীশ গুপ্তের হলফনামায় কী ছিল? সেদিনের গন্ডগোলের দায় নেশাগ্রস্ত দুষ্কৃতীদের ঘাড়ে চাপিয়ে ছিল সরকার। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে যথেচ্ছ ইট, পাথর, সোডার বোতল, বোমা এমনকি পাইপগান থেকে গুলি ছোঁড়ে বলে দাবি করা হয় সরকারি রিপোর্টে। হলফনামায় যুব কংগ্রেসিদের আক্রমণে ২১৫ জনের বেশি পুলিশ কর্মী আহত হওয়ার কথা জানান স্বরাষ্ট্রসচিব। আহতদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, যুগ্ম কমিশনার, ডিসি ( সদর ), ৭ জন ডিসি, ১০ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার আধিকারিক ছিলেন। কোন কোন পুলিশ কর্মীর দেহে বোমার স্প্লিন্টার ও পাইপগানের বুলেট পাওয়া গিয়েছিল হলফনামায় তারও উল্লেখ করে সরকার। অর্থাৎ স্বরাষ্ট্রসচিব হিসেবে মনীশ গুপ্ত আদালতে যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন তাতে ঘটনার গোটা দায় যুব কংগ্রেসিদের ঘাড়ে ঠেলার চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখা হয় নি। সেদিন ‘মহাকরণ দখল’ শব্দটার ওপর খুব জোর দিয়েছিল সরকার। পুলিশ গুলি না চালালে সেদিন মহাকরণ দখল কিম্বা আন্দোলনকারীদের হাতে মুখ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারত বলে অভিযোগ করা হয় হলফনামায়।
আজও অজানা কার নির্দেশে গুলি
প্রশ্ন হল সেদিন কার নির্দেশে গুলিটা চালিয়েছিল পুলিশ? এই প্রশ্নের মীমাংসা হয় নি আজও। তখন কলকাতা পুলিশের কমিশনার ছিলেন তুষার তালুকদার। ঘটনার ১৬ বছর পর কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদিকের কাছে এই নিয়ে কিছু কথা বলেছিলেন তুষারবাবু। তুষার তালুকদারের কথায়, সেদিন সকাল এগারোটা নাগাদ মেয়ো রোড ধরে ধরে হাজার হাজার আন্দোলনকারী যখন রাজভবনের দিকে এগোচ্ছিল, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের ওয়ারলেস ভ্যান তাঁকে রিপোর্ট পাঠাচ্ছিল। ওয়ারলেসে সিপিকে কী জানাচ্ছিল পুলিশ ? তুষার তালুকদার বলেন, ”ওয়ারলেস বার্তা থেকে তিনি জানতে পারেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চা পর্ষদের অফিসের সামনে আটকে দেওয়া গেলেও মেয়ো রোডে পরিস্থিতি দ্রুত হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।” রাজভবনের আশেপাশে ১৪৪ ধারা জারি ছিল। পুলিশ কমিশনারকে তাঁর অফিসারেরা ঘটনাস্থল থেকে ওয়ারলেসে জানান,”উত্তেজিত জনতাকে পুলিশ বারংবার চলে যেতে অনুরোধ করলেও তা কেউ গ্রাহ্য করছে না।” এরপর লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটানো শুরু হয়। লালবাজারে বসে ওয়ারলেস মারফত তা জানতেও পারেন পুলিশ কমিশনার। সেই সময় ঘটনাস্থল থেকে একজন পুলিশ আধিকারিক নাকি সিপিকে জানিয়েছিলেন, ”পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে গুলি না চালালে পুলিশ কর্মীদের জীবন বিপন্ন তো হবেই এমনকি মহাকরণ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে।” এরপর সিপি শুনতে পান, পুলিশ মেয়ো রোডে গুলি চালিয়েছে। কিন্তু গুলি চালানোর নির্দেশ কার কাছ থেকে এলো? তুষার তালুকদারের দাবি, ১৯৯৩ এর একুশে জুলাই লালবাজারে বসে কোনও গুলির নির্দেশ তিনি দেন নি । ঘটনার পর পর সাংবাদিক সম্মেলনেও পুলিশ কমিশনার বলেছিলেন, ”গুলি চালানোর বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।” যদিও গুলিটা চালিয়েছিল তাঁরই বাহিনী । কিন্তু কমিশনার জানতেন না!
তুষার তালুকদারের কথায় অনেক অসঙ্গতি
প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারের বয়ানে অসঙ্গতির ছাপ স্পষ্ট। কারণ মেয়ো রোডে যা যা ঘটছিল তার সবই ঘটনাস্থল থেকে ওয়ারলেসে ধারা বিবরণী দিয়ে পুলিশ কমিশনারকে শোনাচ্ছিলেন তাঁর অফিসারেরা। তুষার তালুকদার নিজেই সেটা স্বীকার করেছেন। তাহলে গুলি চালানোর ঘটনা কমিশনারের অগোচরে ঘটে কীভাবে? ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত কলকাতা পুলিশের কোনও এক অধস্তন আধিকারিক ১৯৯৩ এর একুশে জুলাই মেয়ো রোডে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে গুঞ্জন। সেই আধিকারিক কীভাবে রুলবুকের বিধি অগ্রাহ্য করে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন? নাকি ঊর্ধ্বতন কারও কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি পাওয়ার পরেই গুলি চালাতে বলেছিলেন তিনি? ঘটনাস্থলে উপস্থিত সেই অধস্তন আধিকারিকই বা কে? বিক্ষোভকারীদের পা লক্ষ্য করে গুলি চললে নিঃসন্দেহে মৃতের সংখ্যা ১৩ দাঁড়াতো না। পুলিশের রুলবুকে তেমনই বলা থাকে। সেদিন কেন পুলিশ জনতার বুক তাক করে গুলি ছুঁড়েছিল? এইসব প্রশ্নের কোও সদুত্তর মেলে নি আজও। ঘটনার পরে সাংবাদিকরা এইসব নিয়ে তদানীন্তন পুলিশ কমিশনারকে প্রশ্ন করলে তাঁর ছোট্ট জবাব ছিল- তদন্ত করা হবে।
চট্টোপাধ্যায় কমিশনের রিপোর্ট কেন চেপে যাচ্ছে সরকার?
১৯৫৯ এর ৩১ আগস্ট কলকাতায় খাদ্য আন্দোলনে পুলিশি অভিযানে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছিল বলে দাবি। পশ্চিমবঙ্গের বাম রাজনীতিতে ৫৯ এর ৩১ আগস্টের যেই গুরুত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতিতে ১৯৯৩ এর একুশে জুলাইয়ের গুরুত্ব তার চেয়ে কিছু কম নয়। ক্ষমতায় এলে একুশে জুলাই ম্যাসাকারের নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এগারোয় তৃণমূল সরকারে আসার পর একুশে জুলাই নিয়ে জাস্টিস সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের কমিশন গঠন করে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৪ সালেই সরকারের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের কমিশন। সেই রিপোর্ট এখনও পর্যন্ত বিধানসভার সামনে পেশ করে নি সরকার। রিপোর্ট জনসমক্ষে না আসায় কমিশন কী কী সুপারিশ করেছে তা রাজ্যের মানুষের অজানা। বিচারপতি সু্শান্ত চট্টোপাধ্যায় কমিশনের রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ না করার একটাই অর্থ- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রিপোর্ট কার্যতঃ স্বীকারই করেনি। কাজেই, কমিশনের সুপারিশ মেনে কোনও অপ্রিয় পদক্ষেপ করার হ্যাপাও সরকারকে পোঁহাতে হয় নি। আট বছর যাবত হিমঘরে কমিশনের রিপোর্ট। বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় কমিশনের রিপোর্ট কার্যকর করার আশ্বাস দিয়েও তা নিয়ে একদম চুপচাপ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কমিশনের প্রতিবেদনে নাকি গুলি চালানোর ঘটনাকে গভীর ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেদিনের ঘটনার দায় তদানীন্তন প্রশাসনের দিকেই সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় কমিশন ঠেলেছে বলে জানা যায়। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না বিচারবিভাগীয় কমিশনের রিপোর্ট আনুষ্ঠানিক ভাবে বিধানসভার সামনে প্রকাশ করছে সরকার, ততক্ষণ পর্যন্ত এই তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে কী লেখা আছে, কাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, কী কী সুপারিশ করা হয়েছে তার কানাকড়ি মূল্য নেই। এখন প্রশ্ন হল- যেই একুশে জুলাই নিয়ে তৃণমূল দলের এত আবেগ সেই ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশে তৃণমূল সরকারের এত অনীহা-অনাগ্রহ কেন? তৃণমূল সরকারের নির্দেশে গঠিত বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় কমিশনের রিপোর্টে কী এমন আছে যা প্রকাশ্যে এলে তৃণমূল সরকারকেই বিড়ম্বনায় পড়তে হতে পারে?
Photo- Collected.