ত্রিপুরায় চারে তিন পদ্ম, জিতলেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক, দল পাল্টেও 'সিকান্দার' সুদীপ, তৃণমূল নির্মূল - nagariknewz.com

ত্রিপুরায় চারে তিন পদ্ম, জিতলেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক, দল পাল্টেও ‘সিকান্দার’ সুদীপ, তৃণমূল নির্মূল


উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ এতটাই নগণ্য যে চারটি কেন্দ্রের একটিতেও তৃণমূলের ভোট কোনও ফ্যাক্টার‌ই হয় নি। এরপরেও কি কেউ ত্রিপুরায় তৃণমূলকে ভোট কাটুয়া বলে খাতির করবে?

আগরতলা : ত্রিপুরা রাজ্যের চার বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে তিনটিতেই জয়ী শাসক বিজেপি। চারটি আসনে ভোট হলেও সবার নজর ছিল দুটি কেন্দ্রে। তার একটি টাউন বরদোয়ালি- যেখানে বড় ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। অন্যটি আগরতলা- এখানে দল পাল্টেও বাজিমাৎ করলেন সুদীপ রায় বর্মণ‌ই।

দল পাল্টেও নিজের গড় ধরে রাখলেন সুদীপ রায় বর্মণ।

নিজের ক্যারিশ্মায় গড় বাঁচালেন সুদীপ

ফেব্রুয়ারিতে বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে ফিরতেই বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন সুদীপ। সম্মানরক্ষার লড়াইয়ে সুদীপ রায় বর্মণ যে মূলতঃ নিজের ক্যারিশ্মার জোরেই গড় আগলে রাখতে পারলেন, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই ত্রিপুরার রাজনৈতিক মহলের। এই নিয়ে টানা ছয়বার আগরতলা আসনে বিজয়ী হলেন সুদীপ। বিজেপির অশোক সিনহাকে হাজার ১৬৩ ভোটে পরাস্ত করেছেন তিনি। ১৯৯৮ সালে প্রথমবার আগরতলা আসনে কংগ্রেসের প্রতীকে জিতেছিলেন সুদীপ রায় বর্মণ।

জেতার পর উচ্ছ্বসিত অনুগামীদের সঙ্গে মানিক সাহা ( মধ্যে )।

সসম্মানেই জয়ী মুখ্যমন্ত্রী মানিক

সুদীপের সঙ্গেই বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে ফিরে এসেছেন আশীষকুমার সাহাও। বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ায় আশীষের টাউন বরদোয়ালি- কেন্দ্রেও উপনির্বাচন করতে হয়। প্রতীক বদলে সুদীপ পার পেলেও আটকে গেলেন আশীষ। বিজেপির প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার কাছে হাজার ১০৪ ভোটে হারের মুখ দেখতে হয়েছে আশীষকুমার সাহাকে। মানিক পেয়েছেন ১৭ হাজার ১৮১ টি ভোট। আশীষের ভোট ১১ হাজার ৭৭। প্রদ‌ত্ত ভোটের ৫১.৬৩ শতাংশ পেয়ে সম্মানের লড়াইয়ে বেশ ভালভাবেই জয়ী হলেন‌ মানিক সাহা। দলের নির্দেশে বিপ্লব দেবের পদত্যাগের পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন মানিক সাহা। পেশায় দন্তচিকিৎসক মানিক ছিলেন ত্রিপুরা প্রদেশ বিজেপির সভাপতি। বরদোয়ালি আসনে জিতে এই প্রথম বিধানসভায় গেলেন তিনি।

যুবরাজ নগর ধরে রাখতে ব্যর্থ সিপিএম

আগরতলা আসনটি ধরে রাখতে ব্যর্থ হলেও যুবরাজ নগর সিপিএমের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে পেরেছে বিজেপি। এই আসনে সিপিএম প্রার্থী শৈলেন্দ্রচন্দ্র নাথকে হাজার ৫৭২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন বিজেপির মলিনা দেবনাথ। মলিনাদেবী পেয়েছেন ১৮ হাজার ৭৬৯ টি ভোট। শৈলেন্দ্রর ভোট ১৪ হাজার ১৯৭টি। প্রদত্ত ভোটের ৫১.৮৩ শতাংশ পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থী।

সুরমায়  দাগ কাটতে পারল না টিপ্রামোথা

ধলাই জেলার সুরমা কেন্দ্র‌ নিয়েও প্রচার পর্বে জোর চর্চা চলেছিল। উপজাতীয়দের সংগঠন টিপ্রামোথা এই আসনে বিজেপিকে বড় বেগ দেবে বলে মনে করেছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। টিপ্রামোথার বাবুরাম সাতনামিকে হাজার ৫৮৩ ভোটে পরাস্ত করে শেষ পর্যন্ত আসনটি ধরে রাখতে সক্ষম হল বিজেপি। এই আসনে বিজেপির স্বপ্না দাস (পাল) পেয়েছেন ১৬ হাজার ৬৭৭ ভোট। টিপ্রামোথার প্রার্থী পেয়েছেন ১২ হাজার ৯৪ টি ভোট। সুরমায় টিপ্রামোথাকে সমর্থন জানিয়ে প্রার্থী দেওয়া থেকে বিরত থাকে কংগ্রেস। এই কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী অঞ্জন দাসের প্রাপ্ত ভোট হাজার ৪১৫টি।

প্রচারে শোরগোল তুলে ফলে ফক্কা তৃণমূল

ত্রিপুরার চার উপনির্বাচনে সবথেকে শোচনীয় ফল তৃণমূল কংগ্রেসের। বহুদিন থেকেই দেশের দ্বিতীয় বাঙালি অধ্যুষিত রাজ্যের দিকে ‌নজর তৃণমূল নেতৃত্বের। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ত্রিপুরা থেকে জোড়াফুলের প্রাপ্তি বলতে শুধুই শূন্য। একুশে বিপুলভাবে বাংলায় ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই ভিনরাজ্যে সংগঠন বিস্তার নিয়ে চরম মাতামাতি শুরু হয়ে যায় তৃণমূলের। পিকের পরামর্শে ছোট ছোট রাজ্যগুলিকে টার্গেট করে তৃণমূল। গোয়ায় নির্বাচনের আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এমন হাবভাব দেখাতে শুরু করেছিলেন যেন মনে হচ্ছিল সৈকতরাজ্যে ঘাসফুল ফোটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। ফল বেরোনোর পর দেখা গেল গোয়ায় তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের হার সাকুল্যে চার শতাংশ আর আসন শূন্য। ত্রিপুরায় চার আসনের উপনির্বাচনেও প্রচারে বেজায় শোরগোল তুলে ফলে ফক্কা তৃণমূল।

ত্রিপুরায় তৃণমূলের প্রাপ্তি মাত্র ২.৮৫ শতাংশ ভোট!

চার আসন মিলিয়ে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের হার মাত্র ২.৮৫ শতাংশ। যেখানে পদ্ম শিবির পেয়েছে ৪৪.৯০ শতাংশ। কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের হার ২০.১০ শতাংশ। বামেদের ২২.০২ শতাংশ। নোটার ভোট ১.০৫ শতাংশ। এত ঢাকঢোল পিটিয়েও নোটা থেকে ১.২২ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছে তৃণমূল। চার আসনেই জামানত তো গেছেই এমনকি তৃণমূলের ভোট কোথাও চার শতাংশ‌ও ছোঁয় নি! আগরতলা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী পান্না দেবের ভোট মাত্র ২.১ শতাংশ। যুবরাজ নগরে ঘাসফুল প্রার্থীর ঝুলিতে ২.৯৮ শতাংশ ভোট, সুরমায় ৩.৪ শতাংশ। টাউন বরদোয়ালিতে তৃণমূল প্রার্থী সংহিতা ভট্টাচার্য (ব্যানার্জি) পেয়েছেন মাত্র ২.৯৬ শতাংশ ভোট।

ত্রিপুরায় তৃণমূল ভোট কাটুয়াও নয়!

ত্রিপুরায় চার উপনির্বাচনের প্রচারে বামেদের অভিযোগ ছিল- ভোট কেটে বিজেপিকে সুবিধা করে দেওয়াই হল তৃণমূলের উদ্দেশ্য। রবিবার ফল প্রকাশের পর কিন্তু ভোট কাটুয়া বদনাম থেকে রেহাই দাবি করতেই পারেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। কারণ তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ এতটাই নগণ্য যে চারটি কেন্দ্রের একটিতেও তৃণমূলের ভোট কোনও ফ্যাক্টার‌ই হয় নি। আগরতলা আসনে যেমন তৃণমূলের সমস্ত ভোট বিজেপিতে যোগ হলেও বিজেপি প্রার্থী জিততে পারতেন না। তেমনই বাকি তিন আসনেও তৃণমূলের ভোট বিরোধীদের ঘরে গেলেও ভোটের ফলে কোন‌ও‌ই হেরফের হত না।

অভিষেকের মান নিয়ে টানাটানি

গোয়ার ভোটের পর ত্রিপুরা উপনির্বাচন নিয়েও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তেমন একটা মাথা ব্যথা ছিল না। গোয়া হোক আর ত্রিপুরা, আসাম কিম্বা মেঘালয়- সর্বত্র‌ই তৃণমূলের অধিনায়কের ভূমিকায় অভিষেক। গোয়ার পর ত্রিপুরার উপনির্বাচনেও তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের নাক কাটা গেল। অভিষেকের কারণে দলের ভেতরে যে প্রবীণেরা কোনঠাসা তাঁরা হাতে অস্ত্র পেলেন বৈকি।

Photo Credits- Official FB page of Tripura BJP.




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *