সেমসাইড গোল কেন খেতে যাবে? - nagariknewz.com

সেমসাইড গোল কেন খেতে যাবে?


যদি ঐহিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ওঠে তবে মানবেতিহাসে আমরাই সবথেকে ভাগ্যবান। হয়তো আগামী দিনে আরও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের নাগাল পাবে মানুষ। জাগতিক এই সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের পুরোটাই প্রায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দাক্ষিণ্য। রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক নানা বিপ্লবের‌ও কিছুটা ভূমিকা নিঃসন্দেহে আছে। জীব মাত্রেই সুখবোধের পাশাপাশি দুঃখবোধ আছে। তবে মানুষের দুঃখবোধ প্রাণীকুলে সবথেকে প্রবল। মানুষের উন্নত মস্তিষ্ক‌ই তার কারণ। জীবনে এত দুঃখ কেন? কারণ খুঁজতে আড়াই হাজার বছর আগে এক রাজপুত্র গৃহত্যাগী হয়েছিলেন। সাধনান্তে দুঃখ নাশের একটা নিদান তিনি দিয়েছিলেন বটে কিন্তু তাতে যে সব মানুষের দুঃখ লাঘব হয় নি তার প্রমাণ তো আমরা নিজেরাই।

বস্তুগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধির চেষ্টা মানুষের মজ্জাগত। ন‌ইলে বল্কলধারী গুহাবাসী থেকে আজকে আমরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষবাসী হতে পারতাম না। মাত্র একশ বছর আগেও রাজাবাদশাহরা পর্যন্ত যেই সুখের কথা কল্পনা পর্যন্ত করতে পারত না সেই সুখ আজ অতি সাধারণের নাগালে। কিন্তু বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও সামাজিক বিপ্লবের কৃপায় প্রাপ্ত এই জাগতিক সুখ‌ও আমাদের সম্পূর্ণ সুখী করতে ব্যর্থ। যেই সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, সুযোগ-সুবিধা, আরাম-আয়েস, বিলাসিতা তিরিশ বছর আগেও সুলভ ছিল না, সেইসব হাতের কাছে পেয়েও মানুষের মন আজ ভরছে না। যে অতৃপ্তি মানুষকে বড় খোঁজের পেছনে ছোটায়। বিশ্বের সঙ্গে নিজের যোগ ঘটায় তাতে নিজের এবং জগতের লাভ। তা থেকে একটা গৌতম বুদ্ধ, একটা রবীন্দ্রনাথ, একটা আইনস্টাইনের জন্ম হয়। কিন্তু যেই অতৃপ্তি আত্মসুখের নামে আত্মকূপের অন্ধকার থেকে উৎসারিত তার পরিণাম ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজ- সবার ‌জন্য‌ই খারাপ।

যেই অবসাদ অবসাদ বলে চারদিকে এত চর্চা, সেই অবসাদের মূল কারণ বোধ হয় এই আত্মকূপ থেকে উঠে আসা হতাশা। মানুষের দুঃখ-কষ্ট-বিরহ-বিয়োগজনিত ব্যথা আগেও ছিল। এখনও আছে। বরং সত্যিকারের অনেক দুঃখ-কষ্ট আজ অনেকাংশেই লাঘব হয়েছে মানব জাতির। কিন্তু যে মানসিক অবসাদ আজ প্রায় নীরব মহামারীতে পরিণত হয়েছে আগে কখনও তা দেখা যায় নি। হয়তো তিরিশ-চল্লিশ বছর আগেও মধ্যবিত্ত বাঙালি নিজের মন নিয়ে ভাবার এতটা অবকাশ পেতো না।‌ বিশেষ করে একটু বড় পরিবারের গৃহিণীরা তো নয়‌‌ই। নিজেকে নিয়ে ভাবা ভাল। আমাদের মা-ঠাকুমারা অন্ততঃ সেই সুযোগ পান নি। আজকের দিনের ছেলেমেয়েরা কৈশোর থেকেই সেই সুযোগ পাচ্ছে। মেয়েদের জন্য এই সুযোগ প্রাপ্তিটা একটা সামাজিক বিপ্লব। কিন্তু আত্মকে নিয়ে অধিক ভাবতে ভাবতে আত্মঘাতী হয়ে‌ পড়াটা জীবনের খেলায় একটা সেমসাইড গোল খেয়ে হেরে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। সেমসাইড গোল খেও না।‌ বরং সেমসাইড গোল খাওয়ার যত রকমের পরিস্থিতি তোমার জীবনে আসতে পারে, আগে থেকেই সে’সব গুণে গুণে আটকে দাও। ঋণ করে ঘি খাওয়ার আগে দশবার ভাবো।

Feature image is representational. Photo credit-The Print.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *