বোকা তপন! মরল তবু পাল্টি মারল না - nagariknewz.com

বোকা তপন! মরল তবু পাল্টি মারল না


এই বাজারে এমন বোকামি কেউ করে! আর এই জন্যই তপন কান্দুর মৃত্যু পাহাড়ের থেকেও ভারী।

বাংলায় দল পাল্টানো এখন গায়ের জামা পাল্টানোর থেকেও সহজ। কেউ কেউ ভয়ে পাল্টায়। চাপ নিতে পারে না। বেশিরভাগই পাল্টায় লোভে। খড়্গপুরের বিজয়ী এক মহিলা কাউন্সিলর। সিপিআইয়ের টিকিটে জিতেছেন। এখন বলছেন তাঁর হৃদয়ে নাকি বহু আগে থেকেই জোড়াফুল ফুটে আছে। চোখের সামনে পাঁচবারের এক সিপিএম কাউন্সিলরকে পুরভোটের আগে জার্সি বদলাতে দেখলাম। কত জ্ঞানী-তাত্ত্বিক ডক্টরেট অধ্যাপক এই ক‌’বছরে রাতারাতি ভোল পাল্টে ফেললেন। এক বিশিষ্ট সাংবাদিক। প্রাক্তন বিধায়ক।‌ ভোটের আগে বিজেপিতে গেলেন। ভোটে হারলেন। তেসরা মে সকালেই বিজেপির ধরাচূড়া ত্যাগ করলেন সেই মহান সাংবাদিক। গেরুয়া ত্যাগী আরও এক ভোটে হেরো সাংবাদিক মাননীয়ার দৃষ্টি আকর্ষণের প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই সব দেখার পর ঝালদার নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুকে তো “বীর নায়ক” বলে সম্বোধন করতে ইচ্ছে করছে। কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে কার্যত সাইনবোর্ডে পরিণত হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেসের কত রথী-মহারথী, মহীরুহ অম্লানবদনে শিবির বদলে পদ-পদবী ইত্যাদি ইত্যাদি বাগিয়ে তোফা আছেন। তপন কান্দু তৃণমূলে যোগ দিলে কংগ্রেসের কেউ তাঁকে আটকে রাখতে পারত না। আবার সুবিধা মতো কংগ্রেসে ফিরে এলেও তাঁর মুখের উপর কেউ দরজা বন্ধ করে দিত না। দল পাল্টালে তাঁর প্রাণ তো‌ বাঁচতো‌ই উপরি পাওনা হিসেবে জুটত বড় কোনও পদপ্রাপ্তি। হয়তো পুরবোর্ডের চেয়ারম্যানের চেয়ারটাও জুটে যেতো। পুরুলিয়ার প্রান্তিক একটা শহর ঝালদা। তাঁর স্ত্রীও কংগ্রেসের কাউন্সিলর। স্বামী-স্ত্রী মিলে শাসকদলে গেলে তো কোন‌ও কথাই ছিল না। দল পাল্টে দিব্যি সুখেশান্তিতে বাস করতে পারতেন‌ কান্দু দম্পতি। কলকাতা মহানগরীর এক বিশিষ্ট বিদ্বান কংগ্রেস নেতা, যিনি একদা নিত্য সন্ধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে তুলোধুনো করতেন এক-একদিন এক-এক চ্যানেলে বসে, সহধর্মিণীর আঁচল ধরে পাল্টি খেয়ে দিব্যি আছেন।

একটি ক্ষুদ্র শহরের সামান্য রাজনৈতিক নেতা হয়ে মানুষটি নিজের আদর্শে অটল থাকলেন লোভকে জয় করে। লোভ ব্যর্থ হ‌য়ে ফিরে যাওয়ার পর আসলো ভয়। ভয়েও অবিচল থাকলেন মানুষটি। এরপর আসল তপ্ত বুলেট এবং তিনি তা গ্রহণ করলেন বক্ষে। প্রাণ দিলেন কিন্তু নত হলেন না তপন কান্দু। বাংলার একটা প্রান্তিক পুরসভার কাউন্সিলর। এতদিন তাঁর নাম জানতাম না। বেঁচে থাকলে হয়তো জানতাম‌ও না কোনও দিন। তপন কান্দু বোকা। এই বাজারে এমন বোকামি কেউ করে! আর এই জন্যই তপন কান্দুর মৃত্যু অযোধ্যা পাহাড়ের থেকেও ভারী।

Feature Photo Credit- Facebook.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *