বিধানসভায় ঝালদা থানার আইসি’র বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে কোনও গুরুত্বই দিলেন না মুখ্যমন্ত্রী! ভাইরাল অডিওর বিষয়বস্তু নয় অডিও ভাইরাল করাকেই দুষেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিশেষ প্রতিবেদন :ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু হত্যা রহস্যের আদৌ কোনও সমাধান হবে কিনা তা নিয়ে ধন্ধে মৃতের পরিবার। সংশয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বও। বুধবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি এই সংশয়কে আরও দৃঢ় করেছে।
ঝালদা থানার আইসি সঞ্জীব ঘোষের বিরুদ্ধে নিহত কাউন্সিলরের পরিবারের সদস্যদের তোলা অভিযোগকে যে তিনি মোটেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না তা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যেই স্পষ্ট।
ইতিমধ্যেই ঝালদা থানার আইসির সঙ্গে তপন কান্দুর ভাইপো মিঠুন কান্দুর মোবাইলে কথোপকথন বলে দাবি করা একাধিক অডিও ক্লিপ ( নাগরিক নিউজ অডিওর সত্যতা যাচাই করে নি) সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও অডিওগুলি সম্প্রচারিত হয়েছে। অডিও ক্লিপগুলিতে মিঠুনকে তার কাকার তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে জোরাজুরি করতে শোনা যাচ্ছে। যিনি জোরাজুরি করছেন তিনি ঝালদা থানার আইসি সঞ্জীব ঘোষ বলে দাবি করেছেন মিঠুন। অডিও ভাইরাল হতেই রাজ্য জুড়ে তোলপাড় উঠলেও নির্বিকার মুখ্যমন্ত্রী। উল্টে বিধানসভায় অডিও ভাইরাল করাকেই দোষ দিয়ে বসলেন তিনি! বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,“আজ সাংঘাতিক ঘটনা ঘটেছে। ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছি, তা রেকর্ড করে ভাইরাল করা হচ্ছে। তার মানে কারও সঙ্গে কথা বলব না ? পুলিশের ক্ষেত্রে যেমন হচ্ছে, সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও হতে পারে। তা হলে তো কেউ কারও সঙ্গে কথা বলতে পারবে না।” বিজেপিকে দোষ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,“সব বন্ধ ( অর্থাৎ ফোনে কথা বলা) করে দিয়েছে বিজেপি। বিশ্বাস করে কারও সঙ্গে কথা বললে সে রেকর্ডটা বের করে দেয়। আমাকে হাজার জন ফোন করে, বলব ধরব না? এটা ( অর্থাৎ ফোনে কথোপকথনের রেকর্ডিং ভাইরাল করা ) অপরাধ। মনে রাখবেন সরকারের একটা আইন আছে।”
ভাইরাল অডিওর বক্তব্যকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কোনও গুরুত্ব তো দিচ্ছেনই না উল্টে ভাইরাল করার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বসলেন তিনি। তপন কান্দুর মৃত্যুর পরদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান তাঁর স্ত্রী পূর্ণিমা। পূর্ণিমা কান্দু নিজেও ঝালদা পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। পূর্ণিমার অভিযোগের তীর ছিল ঝালদা থানার আইসির বিরুদ্ধেই। খুনের দু’দিন আগে থানায় ডেকে নিয়ে তাঁর স্বামীকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য আইসি সঞ্জীব ঘোষ হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন পূর্ণিমা কান্দু। একই অভিযোগে সরব নিহত তপনের ভাইপো মিঠুন কান্দুও।
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2022/03/IMG_20220317_184327_837.jpg)
ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপে তাকে যাঁর সঙ্গে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে তিনি আইসি সঞ্জীব ঘোষ বলে মিঠুনের দাবি। কাকা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলে ঝালদা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের পদটি ছেড়ে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন ওই ব্যক্তি। কাকাকে সঙ্গে নিয়ে পুরোনো থানায় এসে আলোচনা করতেও বলতে শোনা যাচ্ছে ব্যক্তিটিকে। আলাপচারিতা চলাকালে মিঠুনকে খারাপ ভাষায় গালিও দেন ব্যক্তিটি। কাকা তৃণমূলে যোগ না দিলে মামলায় মামলায় তাঁর জীবন জেরবার করে দেওয়া হবে বলে আইসি হুমকি দেন বলে সংবাদ মাধ্যমের সামনে অভিযোগ করেছেন মিঠুন কান্দু।
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2022/03/IMG_20220317_184308_091.jpg)
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শোনার পর বিরোধীদের প্রশ্ন- তবে কি মুখ্যমন্ত্রী শাসকদলের হয়ে পুলিশের তদ্বিরের মধ্যে দোষের কিছুই দেখেন না ?রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কি তাহলে থানার আইসি’দের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য বিরোধী দলের যে কোনও জনপ্রতিনিধির ওপর চাপ সৃষ্টি করার অবাধ লাইসেন্স দিয়েই রেখেছেন? পুরবোর্ড ত্রিশঙ্কু হলে তৃণমূল যাতে বোর্ড গঠন করতে পারে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কি পুলিশের?
কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই আইসি সঞ্জীব ঘোষ সহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতের স্ত্রী। এখনও পর্যন্ত ঝালদা থানার আইসির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করে নি প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আর মনে করছে না রাজনৈতিক মহল। ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর খুনকে পারিবারিক বিবাদ বলে চালাতে চাইছে সরকার। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতিতেও সেই ইঙ্গিত আছে।
নিহতের পরিবারের তরফে দায়ের করা এফআইআরে আইসির নাম থাকার পরেও পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভা মুরুগান সংবাদ মাধ্যমের সামনে দাবি করেছেন, আইসি সঞ্জীব ঘোষের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই নেই। এই পরিস্থিতিতে, তপন কান্দু হত্যা রহস্যের কিনারায় রাজ্য পুলিশ সিট গঠন করলেও তাতে আস্থা নেই নিহত নেতার পরিবারের সদস্যদের। সিবিআই তদন্ত ছাড়া প্রকৃত ঘটনা আড়ালেই থেকে যাবে বলে ভাইপো মিঠুন কান্দুর ধারণা। তপনের আরেক ভাইপো দীপক কান্দুর ( ভোটে তপনের বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রার্থী) গ্রেফতারি কি তবে কেবলই আই ওয়াশ?
ভাইরাল অডিওর অংশ বিশেষ-
Photo and audio clips- Collected.