এমন আজব কান্ড ভূ-ভারতে ঘটে নি। মাথায় হাত জেলা ক্রীড়া সংস্থার।
জলপাইগুড়ি : রাতের অন্ধকারে গেটের তালা ভেঙে ঢুকে ক্লাবের খেলার মাঠকে উটের খোঁয়াড় বানালো পুলিশ! এমনই অভিযোগ জলপাইগুড়ি তথা সমগ্র উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব জেওয়াইএমএ ( জলপাইগুড়ি ইয়ং ম্যান’স অ্যাসোসিয়েশন ) কর্তৃপক্ষের। শহরের করলা বাঁধের পাশেই শতবর্ষ প্রাচীন জেওয়াইএমএ’র খেলার মাঠ। বুধবার গভীর রাতে পুলিশের দল ক্লাবের গেটের বাইরে জড়ো হয়ে হল্লাচিল্লা শুরু করে বলে জানা গেছে। ক্লাবের নৈশপ্রহরীর স্ত্রী এগিয়ে এলে তাঁকে গেট খুলে দিতে বলে পুলিশ। এত রাতে পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে যান রীতা মন্ডল নামে ওই মহিলা। রীতাদেবী গেট খুলতে অস্বীকার করলে পুলিশ তাঁকে গালিগালাজ করে বলেও আভিযোগ।
এরপর কী করল পুলিশ ?
এরপরের ঘটনা আরও মারাত্নক। অত রাতে জেওয়াইএমএ’র মতো শহরের ঐতিহ্যশালী ক্লাবের গেট ভেঙে পুলিশ ভেতরে ঢোকে বলে অভিযোগ। সীমানা প্রাচীর পর্যন্ত পুলিশ ভেঙে ফেলে বলে অভিযোগ। ভেঙে খেলার মাঠে উট ভর্তি দশ চাকার দুটি বড় গাড়ি এবং একটি জেসিবি মেশিন ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। বারোটি উট মাঠে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে এই ঘটনা জানাজানি হতেই শহরের ক্রীড়ামহল বিস্ময়ে তাজ্জব হয়ে যায়। ছুটে আসেন জেওয়াইএম’এর কর্মকর্তা এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক কুমার দত্ত সহ অন্যান্য সদস্যরা।
খেলার মাঠ বেহাল
জেওয়াইএমএ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ- দশ চাকার গাড়ি এবং জেসিবি মেশিনের চাকার চাপে মাঠ আর খেলার উপযুক্ত নেই। সামনেই সুপার ডিভিশনের খেলা। মাঠ ডিএসএ-র অধীন। ডিএসএ-র সম্পাদক কুমার দত্ত বলেন, ” পুলিশ সুস্থ ছিল না। সুস্থ থাকলে তারা জোর করে ঢুকে খেলার মাঠ নষ্ট করতে পারত না। এই প্রথম শহরের একটি ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের তালা রাতের অন্ধকারে ভাঙা পড়ল। তাও আবার পুলিশের দ্বারা! এই লজ্জা রাখার জায়গা নেই।” কুমারবাবু জেলার পুলিশ সুপারের কাছে ঘটনা নিয়ে অভিযোগ জানালে সুপার বলেন,ওনার কিছুই জানা ছিল না। কোতোয়ালী থানার আইসিও নাকি কিছুই জানতেন না। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদকের প্রশ্ন- তাহলে কার নির্দেশে খেলার মাঠের এমন সর্বনাশ করল পুলিশ?
পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে যাবে ক্লাব
জেওয়াইএমএ’র সহ-সম্পাদক কানাই দত্ত বলেন,” ক্লাবের এত বড় ক্ষতির কথা আমরা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারি নি। মাঠ শেষ। আমরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানাবো। ” পুলিশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টেরও দ্বারস্থ হবেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ। জেওয়াইএমএ ক্লাবের সদস্য ও আইনি পরামর্শদাতা সন্দীপ দত্তের অভিযোগ, সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ করেছে পুলিশ। জোর করে ক্লাবে ঢুকেছে। নৈশ প্রহরীর স্ত্রীকে ধাক্কা পর্যন্ত দিয়েছে। পুলিশ মোটেই স্বাভাবিক ছিল না। খেলার মাঠের ক্ষয়ক্ষতির যাবতীয় দায় পুলিশকেই নিতে হবে।”
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2022/02/IMG_20220210_191930_030.jpg)
গভীর রাতের আতঙ্ক দিনেও কাটিয়ে উঠতে পারেন নি জেওয়াইএমএ ক্লাবের নৈশ প্রহরীর স্ত্রী রীতা মন্ডল। ঘরে একা ছিলেন তিনি। এত পুলিশ দেখে স্বাভাবিক ভাবেই ভয় পেয়ে যান রীতা দেবী। তিনি বলেন, ” পুলিশদের বললাম স্যার খেলার মাঠ নষ্ট কইরেন না। শুনে আমাকে গালিগালাজ করা শুরু করল।” অসহায় ভাবে নিজের চোখের সামনে খেলার নষ্ট হয়ে যেতে দেখেন রীতা মন্ডল।
প্রতিবাদে মিছিল
ছিঃ ছিঃ পড়ে গেছে শহরে। পুলিশের দ্বারা শহরের বনেদী ক্লাবের খেলার মাঠের বরবাদ হয়ে যাওয়া বরদাস্ত করতে রাজি নন জলপাইগুড়ি শহরের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে মিছিল বের করেন জেওয়াইএমএ সহ শহরের বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠনের সদস্যরা। ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মী ও আধিকারিকদের ধিক্কার জানান মিছিলে সামিল জনতা। শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে মিছিলটি।
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2022/02/IMG_20220210_192159_393.jpg)
মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে জেওয়াইএমএ’র সম্পাদক তপন বাগচী বলেন, ” এত কষ্ট করে এই মাঠ বানিয়েছি। মাঠটা নষ্ট করে দিল পুলিশ। সারা বছর খেলা হয়। খেলার মাঠ কি উট চড়ানোর জায়গা?” এখনই এইসব বন্ধ না করলে পুলিশ পেয়ে বসবে বলে আশঙ্কা তপনবাবুর। এর পর পুলিশ যখনতখন শহরের যে কোনও খেলার মাঠে ঢুকে মালপত্র আনলোড করে চলে আসবে বলে মনে করছেন জেওয়াইএম-এর সম্পাদক।
পুলিশ উট পেল কোথা থেকে ?
বুধবার গভীর রাতে ট্রাকে চাপিয়ে উট জাতীয় সড়ক দিয়ে ময়নাগুড়ির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে কোতয়ালী থানা সূত্রে জানা গেছে। চালক সহ ট্রাকে থাকা অন্যরা বৈধ কাগজ দেখাতে না পারায় উট সহ ট্রাক বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। ঘটনায় ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু উট এনে খেলার মাঠ কেন নষ্ট করা হল ? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর পাওয়া যায় নি পুলিশের কাছে। বারোটি উটের কানে স্টিকার ও গায়ে সিল মারা আছে বলে খবর।
ভিডিওতে খবরটি দেখুন-
Photo & Video- Reporter.