সফল কেরিয়ার ছেড়ে রাজনীতিতে! বহরমপুরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে পদ্ম ফোটাতে মরীয়া আর্কিটেক্ট অনির্বাণ - nagariknewz.com

সফল কেরিয়ার ছেড়ে রাজনীতিতে! বহরমপুরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে পদ্ম ফোটাতে মরীয়া আর্কিটেক্ট অনির্বাণ


শিবপুর বিই’র পোস্ট গ্র্যাজুয়েট। সফল কেরিয়ার ছেড়ে আজ পুরোপুরি রাজনীতিতে। ক্যাম্পাসে এস‌এফ‌আই করলেও ক্রমে বামপন্থায় মোহ ঘুচে সংঘের শরণে। বহরমপুর পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী আর্কিটেক্ট অনির্বাণ বিশ্বাস। তেরোতে পদ্ম ফোটাতে মরীয়া অনির্বাণ।একটি বিশেষ প্রতিবেদন-

বয়স সবে চল্লিশ পেরিয়েছে। পেশায় আর্কিটেক্ট। কিন্তু নেশা পলিটিক্স। পকেটে শিবপুর বি‌ই কলেজের (Indian Institute of Engineering Science and Technology- IIEST,Shibpur ) স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি। রাজনীতির আকর্ষণে মোটা বেতনের চাকরি ধেৎতেরি বলে ছেড়ে দিয়ে সোজা প্রাণপ্রিয় পার্টিতে- এখন একপ্রকার সর্বক্ষণের কর্মী বলা যেতে পারে। এই গৌরচন্দ্রিকা যাঁর সম্পর্কে তাঁর নাম-অনির্বাণ বিশ্বাস। বন্ধুমহল চেনে পিট্টু নামে। বহরমপুর পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী। ওয়ার্ডের খাগড়া ভৈরবতলার বাসিন্দা।

ছাত্রবয়স থেকেই রাজনীতিতে টান

উচ্চমাধ্যমিকের গন্ডি পেরোনোর পর থেকেই উচ্চশিক্ষা ও পেশার খাতিরে অনির্বাণের অধিকাংশ সময় কেটেছে নিজের শহরের বাইরে। ২০০৫ সালে শিবপুর বিই কলেজ থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি নিয়ে বেরোনোর পর পরই কলকাতায় উচ্চ বেতনের লোভনীয় চাকরি লাভ। স্থাপত্যের পাশাপাশি নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনার বিদ্যা‌ও জানা আছে অনির্বাণের। কিন্তু রাজনীতি যাকে চুম্বকের মতো টানে তার কি আর ঠান্ডাঘরে বসে কাজ করার ধৈর্য্য থাকে। তাই সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে বছর দুয়েক হল ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে পুরোদমে রাজনীতিতে ।

বহরমপুর পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ বিশ্বাস ঘরে ঘরে প্রচারে।

একটা সময় ছিল এই দেশ, এই রাজ্যে মেধাবীরাই দেশসেবার টানে বিলাসী জীবন ছেড়ে রাজনীতিতে নামতেন। কিন্তু এখন রাজনীতির নাম শুনলেই উচ্চশিক্ষিত মধ্যবিত্তরা ৪৪০ ভোল্টের শক লাগার মতো আর্তনাদ করে ওঠেন। তা উল্টোপথের যাত্রী কেন ইঞ্জিনিয়ার অনির্বাণ? বিজেপি প্রার্থীর চটজলদি জবাব- ”রাজনীতিই রাষ্ট্রকে, সমাজকে চালায়। তাই রাজনীতিটা দিনের শেষে শিক্ষিতদের ‌জন্য‌ই। ”

বামপন্থা থেকে রামপন্থায়

ছাত্রবয়স থেকেই দেশ, সমাজ ও রাজনীতিতে আগ্রহ ভৈরবতলার অনির্বাণের। পড়তে পড়তে সরাসরি রাজনীতিতে‌ও। বিই কলেজে চুটিয়ে এস‌এফ‌আই করেছেন। তা বামপন্থা থেকে সংঘবাদ, মার্কস থেকে ‌দীনদয়াল- সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে আদর্শের এমন উল্লম্ফন কীভাবে সম্ভব করলেন অনির্বাণ? অনির্বাণের উত্তর- ”বয়স বাড়ার সাথে সাথে বামপন্থার ভ্রান্তিগুলি চোখের সামনে স্পষ্ট হতে শুরু করে। তাই দ্রুত‌ই বিদেশি মার্কসবাদে মোহ কেটে গিয়ে স্বদেশি সংঘবাদে মোক্ষলাভ। ” এককালের বামপন্থী অনির্বাণ এখন ঘোরতর ভারতীয় জাতীয়তাবাদী। অনির্বাণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন- সনাতন ভারতবর্ষের‌ই আরেক নাম বহুত্ববাদ।

পেশার জগতকে বিদেয় দিয়ে এখন পুরোপুরি রাজনীতিতে আর্কিটেক্ট অনির্বাণ।

মতবাদ পাল্টালেও জীবনযাপন পাল্টায় নি অনির্বাণ বিশ্বাসের। সংসারে থেকেও উদাসীন। ব্যক্তিগত চাহিদা খুবই অল্প। বন্ধুবৎসল। একটু বেশিদিন পরের উপকার করা থেকে বিরত থাকলেই শরীরে অস্বস্তি শুরু হয়ে যায়। কোনও কিছুই অন্ধভাবে বিশ্বাস করা অনির্বাণের স্বভাবে নেই। রাজনীতি মানেই পড়ালেখার পাট চুকিয়ে দেওয়া নয়- এই আপ্তবাক্য এখনও মেনে চলেন অনির্বাণ বিশ্বাস। তাই শত ব্যস্ততা,‌ পার্টির কাজের মধ্যেও পড়াশোনাটা করেন।

ভয় জয় করেই ঘরে ঘরে

ইতিহাসের শহর বহরমপুর। পাশ দিয়ে ব‌ইছে মা গঙ্গা। গঙ্গার গা ঘেঁষেই ১৩ নম্বর ওয়ার্ড। অনির্বাণের জন্ম বহরমপুরেই। নিজের ওয়ার্ড, নিজের এলাকাকে দেখে আসছেন ছোটবেলা থেকেই। এবার নিজের হাতে নিজের ওয়ার্ডের সেবা করতে চান অনির্বাণ। নাওয়াখাওয়া ভুলে রাতদিন ওয়ার্ডে ঘুরছেন। যদিও জনসংযোগের কাজটি মোটেই সহজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করলেন এই বিজেপি প্রার্থী। ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকেই এলাকায় চাপা সন্ত্রাস চলছে। সঙ্গে কর্মী নিয়ে বেরোলেই মার্ক করে রাখছে শাসকদলের লোকেরা- অভিযোগ অনির্বাণ বিশ্বাসের।

গণদেবতার আশীর্বাদ চাইছেন অনির্বাণ বিশ্বাস। পাশে অভিনেতা কৌশিক রায়।

বাধাবিপত্তি, চাপা সন্ত্রাস উপেক্ষা করেই প্রচার সারছেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ বিশ্বাস। ঘরে ঘরে যাচ্ছেন। সাড়া কেমন পাচ্ছেন? জবাবে অনির্বাণ বললেন- “যথেষ্ট। ওয়ার্ডের মানুষ পরিবর্তন চাইছেন। পুর পরিষেবা তলানিতে। মানুষ বিরক্ত। ”

পদ্ম ফোটানোর অঙ্গীকার

বহরমপুর পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে এবার চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা। বিজেপি ছাড়াও তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেস লড়াইয়ে আছে। যদিও অনির্বাণের দাবি- ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হলে লড়াই হবে তাঁর সঙ্গে কংগ্রেস প্রার্থীর। বাকিরা অলসো রান। মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারলে তেরোতে এবার পদ্ম‌ই ফুটবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন অনির্বাণ।

অনির্বাণ স্থপতি এবং নগর পরিকল্পনাকারী। পরিকল্পনাকারীর চোখ দিয়েই নিজের ওয়ার্ডের সমস্যাগুলি দেখছেন বিজেপি প্রার্থী। বিরাট ওয়ার্ড। অনেক অলিগলি। অজস্র সমস্যা। সাড়ে চার হাজার ভোটার। নাগরিকদের অনেক ক্ষোভ-অভিযোগ। কাউন্সিলরের দায়িত্ব পেলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কোন‌ কাজটি আগে করবেন সেই পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই নেওয়া সারা অনির্বাণের।

ইঞ্জিনিয়ারের কাজ‌ই গড়া। মেধাবী অনির্বাণ নিজের ঝকঝকে কেরিয়ার গড়েছেন। কর্মজগতে প্রবেশ করে স্থাপত্য গড়েছেন। এবার নিজের পাড়া । নিজের ওয়ার্ড। নিজের শহর গড়তে গণদেবতার থানে থানে ঘুরছেন ভৈরবতলার অনির্বাণ।

Photo- Collected.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *