স্কুল না খুললে সর্বনাশের আর বেশি বাকি নেই , সতর্ক করলেন বিশ্ব ব্যাংকের গ্লোবাল এডুকেশন ডিরেক্টর জাইমে সাভেদ্রা - nagariknewz.com

স্কুল না খুললে সর্বনাশের আর বেশি বাকি নেই , সতর্ক করলেন বিশ্ব ব্যাংকের গ্লোবাল এডুকেশন ডিরেক্টর জাইমে সাভেদ্রা


স্কুল খোলায় সংক্রমণ বেড়ে গেছে – এমন প্রমাণ এখনও কোনও দেশ থেকেই পাওয়া যায় নি। বলছেন বিশ্ব ব্যাংকের গ্লোবাল এডুকেশন ডিরেক্টর জাইমে সাভেদ্রা। বরং অতিমারিতে দু’বছর ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় ভারতে লার্নিং পোভার্টি অনেক বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন সাভেদ্রা।

হোটেল-রেস্তোরাঁ-মল-মদের ঠেক। সব‌ই প্রায় খোলা। সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ শুধু স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ! এবার মুখ খুললেন বিশ্ব ব্যাঙ্কের গ্লোবাল এডুকেশন ডিরেক্টর জাইমে সাভেদ্রা। সাভেদ্রা পেরুর প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। সারা বিশ্ব জুড়েই অতিমারিতে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাব্যবস্থা। দ্বিতীয় ঢেউ স্তিমিত হ‌ওয়ার পর ভারতে ঢিমেতালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি খুলতে শুরু করেছিল। ওমিক্রন পর্ব শুরু হতেই তড়িঘড়ি ফের ক্যাম্পাসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এইভাবে আর কতদিন ? প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন অভিভাবক-পড়ুয়ারা। এমনকি চিকিৎসকরাও চাইছেন, এবার পড়ুয়াদের ক্লাসরুমে ফেরানোর পদক্ষেপ শুরু করুক সরকার। যদিও সরকারের সবথেকে কম মাথাব্যথা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে। শোনা যাচ্ছে অনূর্ধ্ব পাঁচ শিশুদের ভ্যাকসিনেশন সম্পূর্ণ না হ‌ওয়া পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে গরজ দেখাবে না সরকার। ভ্যাকসিন পর্ব কবে সম্পূর্ণ হবে,আদৌ কোনও দিন‌ও সম্পূর্ণ হবে কিনা স্পষ্ট নয়। তাহলে ততদিন পর্যন্ত কি পড়ালেখা কার্যত বন্ধ‌ই থাকবে? কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারগুলির শিক্ষাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কোন‌ও সুনির্দিষ্ট রূপরেখা আছে বলে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রমাণ মেলে নি।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের গ্লোবাল এডুকেশন ডিরেক্টর জাইমে সাভেদ্রা : সংক্রমণ চললেও স্কুল খুলে দেওয়া হোক, চাইছেন সাভেদ্রা।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের গ্লোবাল এডুকেশন ডিরেক্টর জাইমে সাভেদ্রার বক্তব্য খুব পরিস্কার। তিনি মনে করেন, শিশুদের ভ্যাকসিনেশন সম্পূর্ণ না হ‌ওয়া পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা মেরে রাখার পেছনে কোন‌ও যুক্তি নেই। করোনায় শিশু-কিশোরদের সংক্রমিত হ‌ওয়ার ঝুঁকি কতটা কিম্বা সংক্রমিত হলেও তা কতটা মারাত্মক হতে পারে – এই ব্যাপারে স্পষ্ট কোনও চিত্র মানুষের সামনে রাখতে ব্যর্থ বিশেষজ্ঞরা। গত প্রায় দু’বছর‌ ধরে বিশ্ব জুড়ে শিক্ষার হালহকিকত পর্যবেক্ষণ করার সুবাদে সাভেদ্রার মনে হয়েছে, ” শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি খুলে দেওয়া হলে সংক্রমণ জনিত কারণে পড়ুয়াদের যতটা না ক্ষতি হবে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ করে রাখলে। ” মোদ্দাকথা তিনি যেটা বলতে চেয়েছেন তা হল , এবার বন্ধ ক্লাসরুমগুলি খুলে দেওয়া না হলে মানবজাতির একটা গোটা প্রজন্ম পথে বসবে।

বলা হচ্ছে করোনার তৃতীয় ঢেউ পার করছি আমরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ব্যতীত জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক। গোটা পৃথিবীতেই এক চিত্র। ভারতে তো খেলা-মেলা-উৎসব কোনটাই স্থগিত নেই। বিশ্ব ব্যাঙ্কের গ্লোবাল এডুকেশন ডিরেক্টর জাইমে সাভেদ্রা বলছেন উল্টোকথা। তিনি মনে করেন,” করোনার তৃতীয় অথবা আরও কোনও নতুন ঢেউ ভবিষ্যতে বাড়াবাড়ি পর্যায়ে উঠলেও স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্তটি হতে পারে একেবারে লাস্ট অপশন। স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার কারণে কোন‌ও দেশে সংক্রমণ হার হু হু করে বৃদ্ধি পেয়েছে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও প্রমাণ পায় নি বিশ্ব ব্যাংকের গ্লোবাল এডুকেশন কমিটি। হোটেল-বার-রেস্তোরাঁ খোলা রেখে স্কুল বন্ধ রাখাটা একটা নিকৃষ্ট অজুহাত বলে কটাক্ষ করেছেন জাইমে সাভেদ্রা।

অতিমারির অজুহাতে দুই বছর ধরে বন্ধ স্কুল- শিশুদের একটা বড় অংশের মধ্যে বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে শেখার দারিদ্র।

ভারতের মতো দেশে যেখানে শিক্ষা ক্ষেত্রেও বিরাট বৈষম্যের ছবি স্পষ্ট, সেখানে বছরের পর বছর স্কুল বন্ধ রাখার পরিণাম ভেবে শিউরে উঠছেন সাভেদ্রা। পড়ুয়ারাদের একটা অংশ পড়ালেখাই ছেড়ে দিয়েছে, এমন প্রমাণ ইতিউতি মিলতে শুরু করেছে। এই সংখ্যাটা কত গভীর তা যাচাইয়ে সরকারের কোনও মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। জাইমা সাভেদ্রা ঘটনাটিকে লার্নিং পোভার্টি বা শেখার দারিদ্র্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অর্থাৎ যা শেখা তাদের ন্যায্য প্রাপ্য পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । অতিমারির আগেও এই সমস্যাটা দেশে ছিল। কিন্তু গত প্রায় দুই বছরে শিশুদের শেখার দারিদ্র্য বেড়ে গেছে আমাদের কল্পনার‌ও অতীত। এই শিশুরা, এই কিশোরেরা বড় হতে থাকবে। সবাই একদিন কৈশোর পেরিয়ে যুবক হবে। সেদিন করোনা থাকবে না। কিন্তু সেদিন যোগ্যতাহীন, দক্ষতাহীন একটা প্রজন্মের ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে দেবে রাষ্ট্র ?

Photo Credit – Twitter of Jaime Saavedra and one world center.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *