টানা বর্ষণে রুদ্রমূর্তিতে তিস্তা : পাহাড় জুড়ে ধস, যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত,পর্যটকেরা আটকে,প্লাবিত সমতলের বহু এলাকা - nagariknewz.com

টানা বর্ষণে রুদ্রমূর্তিতে তিস্তা : পাহাড় জুড়ে ধস, যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত,পর্যটকেরা আটকে,প্লাবিত সমতলের বহু এলাকা


অরুণকুমার : পাহাড়ে টানা বৃষ্টির জেরে রুদ্রমূর্তিতে তিস্তা। বিপর্যয়ের মুখে সিকিম রাজ্য ,‌ দার্জিলিং-কালিম্পং জেলা ও হিমালয় সংলগ্ন উত্তরবঙ্গ । মঙ্গলবার থেকে পাহাড়ের অনেক জায়গায় ধস নেমেছে । জাতীয় সড়কে থমকে গিয়েছে যান চলাচল। পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়েছেন পর্যটকরাও। ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে কালিঝোরা থেকে রংপোর মাঝে বহু জায়গায় ছোট-বড় ধস নেমেছে। এছাড়াও রংলি-রংলিয়ট হয়ে তাকদা-তিনচুলে যাওয়ার রাস্তায় ধস নেমে আটকে পড়েছেন পর্যটকরা। বড় বিপদ এড়াতে আপাতত সান্দাকফু ট্রেকিং বন্ধ করেছে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন।কার্সিয়াং-সুকনা ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কের মহানদী এলাকায় ধস নেমেছে। তবে রোহিনী, পাঙ্খাবাড়ি এলাকা দিয়ে যান চলাচল করছে। ধসের জেরে রাস্তার পাশে থাকা বেশ কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পোখরিয়াবং-সুখিয়াপোখরি এবং ঘুম-বিজনবাড়ি রোডেও ধস নেমেছে। সেখানে ধস সরিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হচ্ছে। মানেভঞ্জন-রিম্বিক রোডে একটি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে, লাভা-গরুবাথান রোডও ধস নেমে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের এলাকা ছাড়তে নিষেধ করা হয়েছে। এভাবে টানা ভারী বৃষ্টি চলতে থাকলে আরও অনেক জায়গায় ধস নামতে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন।

গরুবাথানে মেঘভাঙা বৃষ্টি ।

সমতলে প্রবল বৃষ্টির জেরে বসে গিয়েছে শিলিগুড়ি লাগোয়া মাটিগাড়ার বালাসন সেতু। এর জেরে সেতুটির উপর দিয়ে ভারী যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বাস, ট্রাক সহ বিভিন্ন যানবাহন নৌকাঘাট হয়ে যাতায়াত করছে। অন্যদিকে সেন্ট্রাল ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকায় টানা দু’দিনের প্রবল বৃষ্টিতে ফুঁসতে শুরু করেছে জলঢাকা নদীও। মঙ্গলবার গভীর রাতে খরস্রোতা ওই পাহাড়ি নদী জল টইটম্বুর হয়ে প্রবল বেগে বইতে শুরু করে। যার জেরে আতঙ্ক ছড়ায় ঝালং ও সংলগ্ন এলাকায়। বুধবার সকালে জল একটু কমলেও পরিস্থিতি দেখে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জানা গিয়েছে, ঝালংয়ে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা রিসর্টেই বন্দী হয়ে রয়েছেন।

ফুঁসছে তিস্তা।

সিকিমের সাথে সংযোগকারী রাস্তা সহ বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে ত্রিবেণীতে তিস্তার জল চলে এসেছে রাস্তার উপর। এছাড়াও প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত সংশ্লিষ্ট এলাকা। খারাপ অবস্থা কালিম্পংয়ের । আলগারা এবং লাভার মধ্যে তিন মাইল এলাকায় গাড়ির ওপর গাছ পড়ে মৃত্যু হয়েছে একজনের।‌ জখম গাড়ির দুই যাত্রী। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কালিম্পং পুরসভা এলাকায় টানা বৃষ্টির কিছু বাড়ি, ফুটপাথ, গার্ডওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুরসভা ও বিপর্যয় মোকাবিলা দল পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজ চালাচ্ছে। সেইসঙ্গে চলছে ত্রাণের কাজও। তিস্তায় জলস্তর বাড়তে শুরু করায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকে সতর্ক করা হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। অনেক পরিবারকে কাছাকাছি কমিউনিটি হলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কালিম্পংয়ের জেলাশাসক আর বিমলা জানিয়েছেন, ‘আমরা টুর অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, কোথাও কোনও পর্যটক যাতে আটকে না থাকেন তা দেখা হচ্ছে।’ অন্যদিকে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে ২৯ মাইলের কাছে ধস পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর তা আংশিক খোলা সম্ভব হয়েছে।

কালিম্পং জেলা জুড়ে ধস।

তিস্তার উপর সব গুলি ব্যারেজের গেট খুলে দেওয়া হয়েছে । জল ছাড়ার ফলে জলপাইগুড়ি জেলার তিস্তা নদী সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন তিস্তাও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। তিস্তার জলে প্লাবিত হয়েছে কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ ব্লকের নিজতরফ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকায়। সেখানে প্রায় একহাজার বাড়িতে জল ঢুকে পড়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে জলপাইগুড়ি জেলার প্রতিটি নদীর জলস্তর বেড়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে । তিস্তা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে জলঢাকা নদীতে হলুদ সঙ্কেত জারি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকেই একটানা বৃষ্টিপাত চলছে ।‌ এর জেরে জলবন্দি হয়ে পড়েছে জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি, বিন্নাগুড়ি ও বানারহাটের বিস্তীর্ণ এলাকা। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সেচ দফতর ।

ভিডিও

তিস্তার জলে জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন সারদাপল্লী ও সুকান্তনগরের পাশাপাশি মৌয়ামারি, চাঁপাডাঙা, নন্দনপুর, বোয়ালমারি, পাতকাটা প্রভৃতি এলাকা প্লাবিত । এই সব এলাকা থেকে জলবন্দী মানুষদের উদ্ধার করে ত্রাণশিবিরে আনা হয়েছে । নদীবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ময়নাগুড়ির দোমহনি ১-এর‌ বাসুসুবা গ্রাম প্লাবিত। মঙ্গলবার রাত থেকেই জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শন করছেন জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু সহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্তারা। গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে প্রশাসন। উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। বালির বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষা চেষ্টা । –

Photos and Video – Collected.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *