কুণাল গৃহে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় , ' দিদি 'র মন গলার অপেক্ষায় ডোমজুড়ের প্রাক্তন বিধায়ক - nagariknewz.com

কুণাল গৃহে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় , ‘ দিদি ‘র মন গলার অপেক্ষায় ডোমজুড়ের প্রাক্তন বিধায়ক


তর সইছে না রাজীবের ।। কখন আসে দিদির ডাক কখন আসে দিদির ডাক ।। প্রহর গুনছেন তৃণমূল ছুট হেরো বিধায়ক

বিশেষ প্রতিবেদন : শুক্রবার ছেলে শুভ্রাংশু সহ তৃণমূলে ফিরলেন মুকুল রায় । শনিবার সন্ধ্যায় কুণাল গৃহে গমন করলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় । ২রা মের পর থেকেই বিজেপি থেকে কোন কোন নেতার ঘর ওয়াপসি হবে তা নিয়ে জোর চর্চা রাজনৈতিক মহলে । ভোটের ফল প্রকাশের পর বিধায়কদের শপথ গ্রহণ পর্ব থেকে মুকুলকে নিয়ে কানাঘুষো শুরু হলে ট্যুইটারে বিজেপিতে থাকার সঙ্কল্প ঘোষণা করে পোস্ট দিয়েছিলেন মুকুল রায় । যদিও সঙ্কল্প করার মাস পেরোতে না পেরোতেই পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে মুকুল তাঁর পুরোনো ঘরে । এত তাড়াতাড়ি মুকুলের তৃণমূলে ফিরে আসাটা রাজনৈতিক মহলের কাছে খানিকটা অপ্রত্যাশিত‌ই ছিল । রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় যদিও ফল প্রকাশের রাত থেকেই বিজেপির থেকে দূরে দূরে । ডোমজুড়ে পরাজয়ের পর তেরাত্তির যেতে না যেতেই নাকি দিদির ঘরে প্রত্যাবর্তনের জন্য ধরাধরি শুরু করে দেন রাজীব । কিন্তু মুকুল রায়ের মতো চৌকস নেতাকে দলে ফিরিয়ে নিতে মমতার যতখানি আগ্রহ ছিল হেরো রাজীবকে ফিরে পেতে ততটা গরজ স্বাভাবিক কারণেই নেই তৃণমূল সুপ্রিমোর ।

নির্বাচন ঘোষণার মাস খানেক আগে চার্টার্ড বিমানে চড়িয়ে দিল্লিতে এনে যে ক’জন তৃণমূল নেতাকে বিজেপিতে ঢোকানো হয় তাঁদের মধ্যে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়‌ই ছিলেন সবথেকে হেভিওয়েট । এই ঘটনার কয়েক দিন আগেই মমতার মন্ত্রিসভা থেকে চোখে জল আর হাতে মমতার ফটো নিয়ে পদত্যাগ করেন রাজীব ।ভাবমূর্তি স্বচ্ছ হলেও শুভেন্দুর মতো ডাকাবুকো কিম্বা মুকুলের মতো সংগঠক কোনোটাই নন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় । যদিও দল ছাড়তেই রাজীবের বিরুদ্ধে ফোঁস করে ওঠেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ভরা মঞ্চে তাঁর বিরুদ্ধে বন দফতরে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করেন মমতা । পাল্টা রাজীব হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কেঁচো খুঁড়তে চাইলে কেউটে বের করে ছাড়ব । যে জামানায় সকালে এক দলের হয়ে কথা বলে বিকেলেই আরেক দলের ঝান্ডা ধরা যায় সেই জামানায় চারমাস আগে কে কার বিরুদ্ধে কী হুমকি দিয়েছিল সেসব নিয়ে মাথা ঘামায় না কেউ । পশ্চিমবঙ্গে এখন পলিটিক্স মানেই নির্ভেজাল প্রেজেন্ট কন্টিনিউয়াস টেন্স । জোড়াফুল ছেড়ে পদ্মফুলে দাঁড়িয়ে জনগণের মন পান নি স্বচ্ছ ভাবমূর্তির রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় । ভোটের রেজাল্ট আউটের পর থেকেই বিজেপির ধরাচূড়া গা থেকে খুলতে পারলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন রাজীব । ৩ মে থেকেই রাজীব বিজেপি নেতাদের নাগালের বাইরে । ফল প্রকাশের পর বিজেপির কর্মীসমর্থকেরা যখন জায়গায় জায়গায় আক্রান্ত তখন প্রতিবাদ করে একটি বিবৃতি পর্যন্ত না দিয়ে তলে তলে তৃণমূলের নেতাদের ধরে ফের নেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা চালিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

রেজাল্ট আউটের পর থেকেই বিজেপির নাগালের বাইরে রাজীব ব্যানার্জি।

চুপচাপ ফুল বদলের কোশিস চালালেও বেশ কিছু দিন মৌনী ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় । ফেসবুকে বিশিষ্টদের জন্মদিন মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো ব্যতীত রাজীবের আর কোনও সাড়াশব্দ ছিল না । তবে দিন চারেক আগে ৩৫৬ ধারা নিয়ে বিজেপির অবস্থানের বিরোধিতা করে পোস্ট দেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় । রাজীবের বক্তব্য ছিল, মানুষের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আসা নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করতে গিয়ে কথায় কথায় দিল্লি দৌড়ালে আর ৩৫৬ ধারার জুজু দেখালে বাংলার মানুষ ভালভাবে নেবে না ।

মুকুল রায়ের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের খবর শুনে অনুব্রত মণ্ডল বলেছেন, গোয়াল থেকে গরু দড়ি ছিঁড়ে পালিয়ে গেলে গরুকে ধরে গোয়ালে এনে ফের খুঁটায় বাঁধতে হয় । ঠোঁটকাটা কেষ্টবাবু আসল কথাটি বলে দিয়েছেন । শুধু মুকুলকে ধরে এনে গোঁজে বাঁধার তাগিদ মমতার থাকলেও মমতা ভাল করেই জানেন রাজীব সহ অন্যান্যরা নিজে থেকেই গোয়ালে এসে ধরা দেবে । তাদের খুঁজতে যেতে হবে না।

রাজীবের পোস্টের তিনদিনের মাথায় আদিগঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে । বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায় নাটকীয়ভাবে পুরোনো দলে ফিরেছেন । তৃণমূল ত্যাগী বিজেপি নেতাদের দুটো ক্যাটাগরিতে ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি চরমপন্থী আরেকটি নরমপন্থী । রাজীব খুব সম্ভবত নরমপন্থীদের তালিকাতেই আছেন । আর না থাকলেও নরমপন্থীদের তালিকায় নাম তোলার জন্য যা যা করণীয় তা করতে ত্রুটি রাখছেন না রাজীব । নির্বাচন পর্বে শুভেন্দুর মতো উচ্চগ্রামে না হলেও অভিষেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব ছিলেন তিনি । মমতা যাতে সেসব গুস্তাফি মাফ করে দেন তার জন্য প্রকাশ্যে রাজীব যা করছেন তার থেকে অনেক বেশি নিশ্চয় করছেন আড়ালে । কুণাল ঘোষ এখন রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক । শনিবার সন্ধ্যায় কুণালের বাড়িতে যে রাজীব গীতাপাঠ করতে যায় নি তা বলার অপেক্ষা রাখে না । ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে নাকে খত দিয়ে হলেও তৃণমূলে ফিরতে প্রস্তুত তিনি । মমতা যদি দলছুটদের ফেরাতে প্রকাশ্যে নাকে খত দেওয়ার শর্ত‌ও রাখেন শুধু রাজীব কেন হয়তো আর‌ও অনেকেই শর্তটি পালনে রাজি হয়ে যাবেন ।

দলছুটদের নিয়ে আসল কথাটি বলে দিয়েছেন অনুব্রত মন্ডল ।

মুকুল রায়ের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের খবর শুনে অনুব্রত মণ্ডল বলেছেন, গোয়াল থেকে গরু দড়ি ছিঁড়ে পালিয়ে গেলে গরুকে ধরে গোয়ালে এনে ফের খুঁটায় বাঁধতে হয় । ঠোঁটকাটা কেষ্টবাবু আসল কথাটি বলে দিয়েছেন । শুধু মুকুলকে ধরে এনে গোঁজে বাঁধার তাগিদ মমতার থাকলেও মমতা ভাল করেই জানেন রাজীব সহ অন্যান্যরা নিজে থেকেই গোয়ালে এসে ধরা দেবে । তাদের খুঁজতে যেতে হবে না।

Photo Credits – Official Facebook page of Rajeev Banerjee and Kunal Ghosh.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *