ইজরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রী কট্টর ইহুদি জাতীয়তাবাদী নাফটালি বেনেট - nagariknewz.com

ইজরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রী কট্টর ইহুদি জাতীয়তাবাদী নাফটালি বেনেট


জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে নেতানিয়াহুর থেকেও চরমপন্থী বেনেট || সরকার বদলালেও বদলাচ্ছে না ইজরায়েলের বজ্রতুল্য নীতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বারো বছর পর ইজরায়েলে সরকার পাল্টালেও পাল্টাচ্ছে না সরকারের নীতি । রবিবার ৬০-৫৯ ভোটে নতুন আটদলীয় জোট সরকারকে অনুমোদন দেয় ইজরায়েলের পার্লামেন্ট ‘ নেসেট ‘ । মাত্র একটি ভোট কম পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয় লিকুদ পার্টির প্রধান বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে । টানা বারো বছর ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নেতানিয়াহু । ডান-বাম ও মধ্যপন্থী আট দলের জোট সরকারের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার বুঝে নিয়েছেন ৪৯ বছরের নাফটালি বেনেট । তিনি ইয়ামিনা পার্টি নামে ছোট একটি দক্ষিণপন্থী দলের নেতা ।

ইজরায়েলের পার্লামেন্ট ‘নেসেটে ‘ বেনেটকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন নেতানায়াহু ।

ইহুদি জাতিগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে নেতানিয়াহুর থেকেও এক কাঠি ওপরে নাফটালি বেনেট । নেতানিয়াহু সরকারের চিফ অব স্টাফ হিসেবে দুই বছর কাজ করা বেনেট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে জায়নবাদী লিকুদ পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে এসে আরও বেশি কট্টরপন্থী একটি ছোট ইহুদি জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দিয়ে ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো সংসদে নির্বাচিত হন । অধিকৃত ভূখন্ডে ইহুদিদের বসতি স্থাপন , ইহুদিদের স্বার্থ রক্ষায় প্যালেস্টানিয় অধ্যুষিত গাজা ও পশ্চিম তীরে সামরিক অভিযান কিম্বা ইরানকে চোখে চোখে রাখার প্রশ্নে নাফাটালি বেনেটের রাজনৈতিক অবস্থানে কোনও রাখঢাক নেই । বেনেট নিজে ছিলেন পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের নেতা । অধিকৃত পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং সিরিয়ার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া গোলান মালভূমির ওপর ইহুদিদের অধিকারের প্রশ্নে কোনও আপোষে যেতে রাজি নন ইজরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রী । যে কোন‌ও কট্টর ইহুদি জাতীয়তাবাদীদের মতো নাফটালি বেনেট‌ও বিশ্বাস করেন এই সব এলাকা হিব্রু বাইবেলে জুদেয়া-সামারিয়া নামে উল্লেখিত ইহুদিদের আদি বাসভূমির অন্তর্গত ।

ইহুদি জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে নেতানিয়াহুর থেকেও কট্টর নাফটালি বেনেট ।

কয়েক বছর ধরেই ইজরায়েলের রাজনীতিতে অস্থিরতা চলছে । ২০১৯ থেকে ২০২১ এর মধ্যে চারবার সংসদ নির্বাচন হয়েছে দেশটিতে । বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে বলা হয় ৭৩ বছরের ইহুদি জাতিরাষ্ট্রের সবথেকে শক্তিশালী ও কট্টর জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রনায়কদের একজন । যদিও উনিশ থেকেই দুর্নীতির অভিযোগে জড়িয়ে গিয়ে বারংবার বিরোধীদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে । মার্চে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনের পরেও ক্ষমতায় টিকে যান এই শক্তিশালী নেতা । যদিও ১৩ জুন পার্লামেন্টের ভেতর ভোটাভুটিতে মাত্র একটি ভোটের জন্য বিরোধীদের জোটের কাছে হেরে পদত্যাগ করতে হল নেতানিয়াহুকে । সব মিলিয়ে প্রায় পনেরো বছর ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেঞ্জামিনন নেতানিয়াহু । ইজরায়েলের ইতিহাসে যা একটি রেকর্ড । ইজরায়েলের জনক বলে খ্যাত ডেভিড বেন গুরিয়ানের ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড‌ও ভেঙে দিয়েছেন নেতানিয়াহু । বলা হয় পররাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ইজরায়েলের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা করেছেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু । প্যালেস্টানিয় ইস্যুতে রাশিয়া সহ ইউরোপের যেসব রাষ্ট্র ইজরায়েলের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখত তাদের সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন নেতানিয়াহু । তাঁর আমলেই আফ্রিকা-এশিয়ায় মিত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ইজরায়েলের । এমনকি আরব বিশ্বেও সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ একাধিক রাষ্ট্র প্রকাশ্যে অথবা আড়ালে নেতানিয়াহুর সঙ্গে সম্পর্ক পাতিয়েছে । নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হ‌ওয়ার পর ভারত-ইজরায়েলের কূটনৈতিক বোঝাপড়া সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় । ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে রীতিমত উচ্ছ্বসিত ছিলেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।

বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু : যাঁকে বলা হয় ইজরায়েলের সব থেকে শক্তিশালী রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে অন্যতম ।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নেতানিয়াহু পিছু হটলেও ইজরায়েলের রাজনীতি থেকে বিদায় নেন নি । বরং তিনি সুযোগের অপেক্ষায় আছেন । কট্টর দক্ষিণপন্থী থেকে বামপন্থীদের সমন্বয়ে তৈরি জোট সরকারের আয়ুষ্কাল নিয়ে রীতিমতো সংশয়ে রাজনৈতিক মহল। জোট সরকার গঠনের চুক্তির শর্ত অনুযায়ী দুই বছর পর কট্টরপন্থী ইহুদি জাতীয়তাবাদী বেনেটকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে মধ্যপন্থী নেতা ইয়ার লাপিডের হাতে । নেতানিয়াহুর মতো জনপ্রিয় নেতা আপাতত বিরোধী আসনে বসলেও যে কোনও ধরণের নাটকীয় পট পরিবর্তনের সূত্র ধরে ফের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসাটা তাঁর জন্য কোনও কঠিন কাজ নয়। গাজায় এগার দিন ধরে চলা হামাস-ইজরায়েল সংঘাতে যুদ্ধবিরতি ঘটেছে ২১ মে । এগার দিনের যুদ্ধে গাজাকে প্রায় ধংসস্তুপে পরিণত করেছে ইজরায়েলের বায়ুসেনা । যেই সরকার‌ই ক্ষমতায় থাকুক ইজরায়েলের সার্বভৌমত্ব ও ইহুদি জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে এক চুলও ছাড় দিতে প্রস্তুত নয় কেউই । মধ্যপ্রাচ্যে এখন একমাত্র ইরানকেই গণ্য করার মতো শত্রু মনে করে ইজরায়েল । ইজরায়েলের অস্তিত্বেই বিশ্বাস করে না ইরান । তাই ইরানের পরমাণু কার্যক্রম প্রশ্নে কোন‌ও রকমের নমনীয়তা দেখাতে তিনি রাজি নন বলে প্রথম দিন‌ই জো বাইডেনকে জানিয়ে দিয়েছেন নতুন প্রধানমন্ত্রী নাফটালি বেনেট । ইরানের পরমাণু অস্ত্রে বলীয়ান হয়ে ওঠার কোনও চেষ্টা ইজরায়েল বরদাস্ত করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বেনেট ।

Photo Credits – The Jerusalem Post and CP24


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *