নাগরিক ওয়েব ডেস্ক , ২ এপ্রিল ,২০২১ : শুক্রবার রাজ্যের উত্তর থেকে প্রচার শুরু করে দক্ষিণে শেষ করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ । কোচবিহার-কালচিনি থেকে বারুইপুর-আরামবাগ – অর্থাৎ হিমালয়ের পাদদেশ থেকে গাঙ্গেয় সমভূমি – ভোট প্রচারে বেলাবেলি চষে বেড়ালেন শাহ । সকালে কোচবিহারের শীতলকুচিতে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে বিশাল সমাবেশে ভাষণ দেন অমিত শাহ । এরপরেই যান আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনিতে । কালচিনির সভা সেরেই উড়ে যান দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর পশ্চিম কেন্দ্রে । সেখানে রোড শোয়ে অংশ নেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী । রোড শোতে জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো । তবে বারুইপুর পশ্চিমকেও ছাপিয়ে যায় হুগলির আরামবাগ । শুক্রবার বিকেলে আরামবাগে অমিত শাহের রোড শো রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয় ।
আরামবাগে অমিত শাহের রোড শো । |
বাংলায় একের পর এক নির্বাচনী কর্মসূচীতে জনসমাগমের বহর দেখে স্বাভাবিক ভাবেই আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে শাহের । শেষ হয়ে যাওয়া দুই দফার ভোটে ৬০টির মধ্যে পঞ্চাশটিই বিজেপি পাবে বলে দাবি করেছেন তিনি । সকালে শীতলকুচির সভাতেই শাহ জানিয়ে দেন নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হারছেনই । লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে আশাতীত সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি । বিধানসভাতেও এই ধারা বজায় রাখতে চান মোদী-শাহ । রাজনৈতিক মহল বলছে উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সম্প্রদায়ের মধ্যে বিজেপির জনভিত্তি বাড়ছে । এদিন কোচবিহারের শীতলকুচির সভা থেকে রাজবংশী সম্প্রদায়ের মন জয়ে চেষ্টার ত্রুটি রাখেন নি অমিত শাহ ।
কোচবিহারের শীতলকুচির সভায় অমিত শাহ জনতাকে অভিবাদন জানাচ্ছেন । |
কোচবিহার জেলার মাটিতে দাঁড়িয়ে কামতাপুর রাজ্যের সেনাপতি বীর চিলা রায় ও রাজবংশী সম্প্রদায়ের মহান সংস্কারক রায়সাহেব ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী । অমিত শাহ বলেন , ‘ সেনাপতি বীর চিলা রায়ের ভূমি কোচবিহার । চিলা রায়ের মতো বাহাদুর সেনাপতি উত্তরবঙ্গের মাটিতে দিল্লির মোগলদের পর্যন্ত পা রাখতে দেন নি । ‘ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার উত্তরবঙ্গের প্রতি বঞ্চনা করেছেন বলে অভিযোগ করেন শাহ । রাজবংশী সম্প্রদায়ের সঙ্গেও সতছেলের মতো আচরণ করা হয়েছে । একবার বিজেপিকে সরকার গড়ার সুযোগ দিলেই উত্তরবঙ্গ ও রাজবংশী সমাজের প্রতি সকল বঞ্চনার নিরসন করা হবে বলে আশ্বাস দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ।
শীতলকুচির সভায় বক্তৃতা করছেন অমিত শাহ । |
শীতলকুচির সভায় অমিত শাহ মমতাকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘ কোচবিহারের সঙ্গে কলকাতার দূরত্ব ৭০০ কিলোমিটার । কিন্তু দিদির হৃদয়ের সঙ্গে কোচবিহারের দূরত্ব ৭০০০ কিলোমিটার । ‘ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবা , কৃষি থেকে কর্মসংস্থান – কোনও দিকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নজর দেয় নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে কীভাবে উত্তরবঙ্গের উন্নতি করবে সভায় তার একটি রূপরেখা তুলে ধরেন অমিত শাহ ।
অমিত শাহ সভায় বলেন, ‘ বিজেপি জিতলে সরকার উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে । ‘ উত্তরবঙ্গের বিকাশের জন্য বোর্ড গঠন করা হবে বলে আশ্বাস দেন শাহ । উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্য প্রত্যেক বছর বোর্ডের হাতে দুই হাজার কোটি টাকা করে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। বীর চিলা রায়ের নারায়ণী সেনার স্মরণে আধা সামরিক বাহিনীতে নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন গঠন করা হবে । নারায়ণী ব্যাটেলিয়নের সদর দফতর কোচবিহারেই হবে । নারায়ণী ব্যাটেলিয়নে রাজবংশী সম্প্রদায়ের যুবকেরাই চাকরি পাবে বলে ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কোচবিহারে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে বলে জানান অমিত শাহ । কোচবিহার জেলায় এইমস স্থাপন করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি ।
শীতলকুচিতে বিজেপির সভায় জনসমাগম । |
বিজেপির ক্ষমতায় এলে আড়াইশো কোটি টাকা খরচ করে কোচবিহারে ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা স্মারক নির্মাণ করা হবে বলে জানান অমিত শাহ। ৫০০ কোটি টাকার প্যাকেজের মাধ্যমে জেলার ঐতিহ্যবাহী রাস মেলাকে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সঙ্গে পরিচিত করা হবে বলে সভায় প্রতিশ্রুতি দেন অমিত শাহ ।
বারুইপুর পশ্চিমে শাহের রোড শো । |
আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনির সভায় অমিত শাহর উপস্থিতিতে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন মোহন শর্মা । মোহন শর্মা ডুয়ার্সে তৃণমূলের বড় নেতা ছিলেন । তিনি তৃণমূল পরিচালিত আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের মেন্টর পদেও আসীন । ডুয়ার্সের চাবলয়ে দাঁড়িয়ে চাশ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আশ্বাস দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী । অমিত শাহ বলেন , ‘ বাংলায় বিজেপির সরকার তৈরি হলে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ২১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা করা হবে । ‘ বাগান এলাকায় বসবাসরত শ্রমিকদের সরকার পাট্টা দেবে বলেও জানান তিনি ।