ব্যাটেল অব নন্দীগ্রাম : রক্তপাতহীন ব্যালটযুদ্ধ‌ই সবার প্রার্থনা - nagariknewz.com

ব্যাটেল অব নন্দীগ্রাম : রক্তপাতহীন ব্যালটযুদ্ধ‌ই সবার প্রার্থনা


   

নাগরিক পলিটিক্যাল ডেস্ক,৩১ মার্চ,২০২১ : রাত পোহালেই নন্দীগ্রামে মহাযুদ্ধ । রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোট  হচ্ছে বাঁকুড়া , পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩০টি আসনে । যদিও সবার নজর নন্দীগ্রামে । বাংলা তো বটেই এমনকি গোটা ভারতের‌ও । জমি আন্দোলনের সূত্রে পূর্ব মেদিনীপুরের  নন্দীগ্রামকে চিনেছিল পৃথিবী। পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম রাজত্বের অবসানে নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের ভূমিকা আজ ইতিহাস । নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  জমি আন্দোলনের প্রসাদেই  আজ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। সেদিন তাঁর প্রধান সেনাপতি ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী । রক্তক্ষয়ী জমি আন্দোলনের ১৪ বছর‌ পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ আবার নির্ধারণ করে দেবে সেই নন্দীগ্রাম‌ই । পার্থক্য একটাই সেদিনের সহযোদ্ধাদ্বয় আজ যুযুধান দুই প্রবল প্রতিপক্ষ ।

সহযোদ্ধা থেকে প্রতিপক্ষ : সাক্ষী থাকল সেই নন্দীগ্রাম !

গত ১৪ বছরে অনেক জল গড়িয়ে গেছে হলদি নদী দিয়ে । ২০১১ থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । প্রবল পরাক্রান্ত যে বঙ্গীয় বামেদের হারিয়ে মমতার রাজ্য লাভ সেই বামেরা আজ বাংলার রাজনীতিতে প্রান্তিক শক্তি । উনিশের লোকসভা নির্বাচনের পর  বামেদের হটিয়ে রামের জোয়ার এসেছে বাংলায় । ক্ষমতায় আসার পর বিরোধী দল ভাঙাকে প্রায় অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছিলেন মমতা । বাংলায় ক্ষমতায় আসতে তাঁর দলকেই ভাঙিয়ে কলেবর স্ফীত করার নীতি নেয় বিজেপি । উনিশের লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসন জয়ের পরেই রক্তের স্বাদ পেয়ে যান মোদী-শাহ । বাংলা জয়ের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েন এই জুটি । অবস্থা বেগতিক বুঝে প্রশান্ত কিশোরকে হায়ার করে আনেন মমতা । যদিও তাতে ঘরের ভাঙন আটকানো যায় নি।  তৃণমূলের একের পর নেতাকে কব্জা করে ফেলে বিজেপি । বিজেপির সবথেকে বড় প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে তৃণমূল থেকে শুভেন্দু অধিকারীকে বের করে এনে মমতার বিরুদ্ধে লড়িয়ে দেওয়া ।  কাঁথির শান্তিকুঞ্জের গোটা অধিকারী পরিবারটাই আজ জোড়াফুল ছেড়ে পদ্মফুলে ।

নন্দীগ্রামে অমিত শাহের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী : তৃণমূল থেকে শুভেন্দুকে বের করে এনে মমতার বিরুদ্ধে লড়িয়ে দেওয়া বিজেপির জন্য একটি বড় সাফল্য ।


মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অথবা শুভেন্দু অধিকারী – ২০২১ এর  পয়লা এপ্রিল  যেকোনও একজনের রাজনৈতিক জীবনকে বড় রকমের জখম  করবে নন্দীগ্রাম । কথায় আছে মিত্র যখন শত্রু হয় তখন  তার চেয়ে ভয়ঙ্কর আর কেউ হয় না । যাকে বলে ফাইট টু ফিনিশ । নন্দীগ্রামে একে অপরকে রাজনৈতিক ভাবে ফিনিশ করার নির্মম খেলাতেই মেতে উঠেছেন শুভেন্দু ও মমতা । পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে নন্দীগ্রামের ভোটযুদ্ধ শান্তিপূর্ণ রাখাটাই এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্বাচন কমিশনের সামনে । গোটা বিধানসভা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন । শুধু মাত্র নন্দীগ্রাম বিধানসভাতেই ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নন্দীগ্রাম বিধানসভার ৩৫৫টি বুথ‌ই থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে । প্রতিটি বুথে চারজন করে জ‌ওয়ান মোতায়েন থাকবে ।  অতিরিক্ত দুই কোম্পানিকে  রিজার্ভে রাখা হয়েছে । গোটা বিধানসভা এলাকায় টহল দেবে ২২ সেকশন ক্যুইক রেসপন্স টিম ( QRT ) । প্রতি সেকশনে থাকবে আট জন করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জ‌ওয়ান । ভোট চলাকালে আকাশপথে নজরদারি চালাতে প্রশাসন হেলিকপ্টার‌ও উড়াবে বলে জানা গেছে ।

২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে নন্দীগ্রামে । 

ব্যাটেল অব নন্দীগ্রামের পরিণাম জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে দোসরা মে দুপুর পর্যন্ত । টেনশন যত‌ই চড়ুক  গণতন্ত্রের এই ব্যালট যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত  রক্তপাতহীন হোক এটাই সবার প্রত্যাশা । 


ছবি- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীর অফিসিয়াল ফেসবুক থেকে সংগৃহীত ।  কেন্দ্রীয় বাহিনীর ছবি প্রতীকি ও india.com থেকে প্রাপ্ত ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *