২,৮১৯ জন চাকরি প্রার্থীর ওএমআর শিটে জালিয়াতি! ১,৯১১ জনকে নিয়োগ। কাদের অঙ্গুলিহেলনে বেনিয়ম? জানতে চান বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
কলকাতা: হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্যে ১,৯১১ জন গ্রুপ ডি কর্মীর চাকরি গেল। স্কুল সার্ভিস কমিশনের সুপারিশে এদের বিভিন্ন স্কুলে নিয়োগপত্র দিয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। শুক্রবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে নিজেদের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওই ১,৯১১ জনকে চাকরি দেওয়ার সুপারিশপত্র প্রত্যাহার করে নিল এসএসসি। এসএসসি ওই প্রার্থীদের সুপারিশপত্র প্রত্যাহার করা মাত্রই তাদের চাকরি বাতিল করে দিতে পর্ষদকে নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
যে ১,৯১১ জনের চাকরি গেল, তাদের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় বেনিয়ম হয়েছিল বলে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে স্বীকার করে নেন এসএসসি-র আইনজীবী। বিচারপতি এসএসসি-র আইনজীবীর কাছে জানতে চান, সেই সময় সংস্থার চেয়ারম্যান কে ছিলেন? আইনজীবী সুবীরেশ ভট্টাচার্যর নাম বলেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সমস্ত নিয়োগ নিয়েই সিবিআই তদন্ত চলছে। এসএসসি-র মাধ্যমে স্কুলে স্কুলে গ্রুপ ডি কর্মীর নিয়োগ নিয়েও ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। গ্রুপ ডি নিয়োগ নিয়ে আদালতে হলফনামা জমা দিতে এসএসসি কর্তৃপক্ষের কাছে আগেই নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি।
শুক্রবার হলফনামায় এসএসসি স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয় যে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়েছে। ওএমআর শিটে কারচুপি করে নম্বর বাড়ানো হয়েছে। কারচুপি করে যাদের নম্বর বাড়ানো হয়েছে, তাদের নামেই পর্ষদের কাছে চাকরির সুপারিশপত্র পাঠানো হয়েছিল। এসএসসি-র এই স্বীকারোক্তির পর দুর্নীতি করে চাকরি পাওয়া ১,৯১১ জনের চাকরি বাতিল করার নির্দেশ দিতে দেরী করেন নি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়ে সুবীরেশ ভট্টাচার্য এখন জেলে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে আসীন হওয়ার আগে সুবীরেশ ছিলেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান। এদিন সুবীরেশ ভট্টাচার্যকেও গ্রুপ ডি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার পার্টি করে নেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “কাদের কথায় এত বিপুল সংখ্যকের বেআইনি নিয়োগ হয়েছে, অবিলম্বে তাদের নাম জানাতে হবে সুবীরেশবাবুকে।” অর্থাৎ দুর্নীতির পেছনে যে প্রভাবশালীরা আছে, তাদের খুঁজে বের করতে চায় আদালত।
সুবীরেশের ডক্টরেট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
যাদের চাকরি গেল, প্রয়োজনে তাদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে পারবে আদালত, এমনই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এরা আর অন্য কোনও চাকরির পরীক্ষাতেও বসতে পারবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত সুবীরেশ ভট্টাচার্যর ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি কার্যত কেড়েই নিলেন বিচারপতি। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সুবীরেশ আর ডক্টরেট উপাধি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বিপুল টাকার ভাগ কারা পেল?
গ্রুপ ডি নিয়োগ পরীক্ষায় মোট ২,৮১৯ জনের ওএমআর শিটে ঘাপলা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে এসএসসি-র সুপারিশে নিয়োগপত্র পেয়েছে ১,৯১১ জন। এসএসসি-র গ্রুপ ডি নিয়োগ নিয়ে তিনি যে বড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন, বৃহস্পতিবারের শুনানিতেই তা খোলসা করে দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এক একটি পদ কম করে ১০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে বলে বাতাসে গুঞ্জন। এই হিসেব ধরলে শুধু গ্রুপ ডি ঘোটালা থেকেই জড়িতরা আয় করেছে ১,০০০,০০০× ২৮১৯= ২৮১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। এখন প্রশ্ন একটাই- এই বিপুল টাকা কাদের মধ্যে কীভাবে ভাগাভাগি হয়েছে?
Feature Image is representational.