২০২৫-এ চাঁদে ফের মানুষ পাঠানোর আগে চন্দ্রপৃষ্ঠে উল্কাপাতের একটা হিসেব করেছে নাসা। সংখ্যাটা বছরে ৩৩ হাজার!
সায়েন্স ডেস্ক :খালি চোখে পূর্ণ শশীর রূপ দেখে মুগ্ধ হয় না এমন মানুষ পৃথিবীতে বিরল। যদিও চোখে দূরবীন লাগিয়ে দেখলেই চাঁদকে আর ততটা মায়াবী মনে হয় না। কারণ ছোট-বড় অজস্র গহ্বরে ক্ষতবিক্ষত চাঁদমামার সর্বাঙ্গ। বায়ুশূন্য, ধূসর চাঁদের বুকে এইসব গহ্বরের ( লুনার ক্র্যাটার) কারণ উল্কাপাত।
মহাকাশে মেটেরয়েড ২৫ মিলিয়ন!
পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে দূরত্ব ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। গ্রহ-উপগ্রহ এবং ধূমকেতু ছাড়াও এই সৌর জগতে রয়েছে অসংখ্য ছোটবড় গ্রহাণু ( অ্যাস্টেরয়েড ) ও উল্কাখন্ড (মেটেরয়েড)। এখনও পর্যন্ত সৌর জগতে ১১ লক্ষ ১৩ হাজার ১২৭টি গ্রহাণুর হদিস পেয়েছে নাসা। এর মধ্যে অধিকাংশেরই নিবাস মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝে অ্যাস্টেরয়েড বেল্টে।
উল্কাখন্ড বা মেটেরয়েড গ্রহাণুদের থেকে আকারে ছোট হয়। মহাকাশে ২৫ মিলিয়ন উল্কা বা মেটেরয়েড ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। সূর্যকে কেন্দ্র করে গ্রহাণুগুলির পরিক্রমা বড়ই বিশৃঙ্খল। প্রত্যেক বছর ছোট-বড় অনেক গ্রহাণু পৃথিবীর কান ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উল্কাখন্ডগুলি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করা মাত্রই জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা বলেন, বায়ুশূন্য চাঁদ নিজের বুকে গ্রহাণুদের টেনে নিয়ে রক্ষা করছে পৃথিবীকে।
১৯৬৯ সালে আমেরিকা যখন চাঁদে প্রথমবারের মতো মানুষ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল তখন নাসার বিজ্ঞানীদের একটা বড় মাথা ব্যথার কারণ ছিল চাঁদে ঘন ঘন উল্কাপাতের বিষয়টি। পৃথিবীর মতো বায়ু না থাকায় যে কোনও মহাজাগতিক বস্তুই চাঁদের মাটিতে সরাসরি আঘাত করে। মোট ছয়বারের মিশনে এখনও পর্যন্ত বারোজন অভিযাত্রীকে চাঁদে পাঠিয়েছে নাসা। অ্যাপেলো-১৭’র শেষ অভিযানটি সম্পন্ন হয়েছিল ১৯৭২-এর ৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে। সৌভাগ্য বশতঃ কোনও বারই চাঁদের মাটিতে উল্কাপাতের কারণে চন্দ্রাভিযাত্রীদের বড় কোনও অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় নি।
চাঁদে একশ উল্কাপাত দিনে!
৫৩ বছর পর ২০২৫-এ আবার চন্দ্রপৃষ্ঠে মানুষ প্রেরণ করতে চলেছে নাসা। এবার বেশ কয়েক দিনের জন্য চাঁদে ঘাঁটি গাড়ার কথা অভিযাত্রীদের। তাই আগের অভিযানগুলির চেয়ে এবার চাঁদে উল্কাপাত জনিত বিপদ নিয়ে আরও বেশি সতর্ক বিজ্ঞানীরা। প্রতিদিন কী পরিমাণ মহাজাগতিক উপলখন্ড চাঁদকে আঘাত করে তার একটি হিসেব পেতে চাইছেন নাসার গবেষকেরা। নাসার মেটেরয়েড এনভায়রনমেন্ট অফিসের গবেষণা বলছে প্রায় একশোর কাছাকাছি উল্কাখন্ড, যাদের আকার পিং পং বলের মতো, চাঁদের বুকে প্রতিদিন পড়ছে। মেটেরয়েড এনভায়রনমেন্ট অফিসের প্রধান বিল কুক জানিয়েছেন, বছরে প্রায় ৩৩ হাজার উল্কা চাঁদে আঘাত করে। আকারে পিং পং বলের মতো হলেও চন্দ্রবক্ষে এক-একটি পাথরের আঘাত সাত পাউন্ড ( ৩.২ কেজি ) ওজনের ডিনামাইট বিস্ফোরণের সমান শক্তি নির্গত করে।
আকারে বড় উল্কাও চাঁদে পড়ে। ৮ ফিট বা ২.৫ মিটার ব্যাসের পাথর চাঁদের বুকে পড়ে প্রতি চার বছরে একবার। এই ধরণের উল্কাপাতের অভিঘাত চাঁদের মাটিতে এক কিলো টন বা এক হাজার টন ( ৯০০ মেট্রিক টন ) টিএনটি-র সমান শক্তি নিঃসরণ করে। বিল কুকের হিসেব অনুযায়ী উল্কাপাতের ফলে প্রতিদিন ১১ থেকে ১১০০ টনের ( ১০ থেকে ১,০০০ মেট্রিক টন) মতো ধুলো জমে চাঁদের বুকে। বিজ্ঞানীরা হিসেব কষে দেখেছেন চন্দ্রপৃষ্ঠে আছড়ে পড়ার সময় উল্কার গতিবেগ থাকে ঘন্টায় ৪৫,০০০ থেকে ১৬০,০০০ মাইল ( ২০ থেকে ৭২ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড )। চাঁদের বয়স ৪.৫ বিলিয়ন বছর। চাঁদের শরীর কেন বড় বড় গহ্বরে ক্ষতবিক্ষত তা সহজেই অনুমান করা যায়।
চন্দ্রপৃষ্ঠের পরিধি ১৪.৬ মিলিয়ন বর্গমাইল ( ৩৮ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার)। প্রতি এক বর্গ কিলোমিটার জায়গায় পিংপং বলের সমান উল্কার আঘাত করার সম্ভাবনা প্রতি হাজার বছরে একবার। সেই দিক দিয়ে দেখলে চাঁদে মনুষ্য প্রেরণের ভবিষ্যতের অভিযানগুলি মোটের উপর ঝুঁকি মুক্ত বলেই মনে করেন নাসার মেটেরয়েড এনভায়রনমেন্ট অফিসের প্রধান বিল কুক।
Information Source- www.space.com / Photo credit- NASA. Feature image is representational.