অরুণকুমার : ক্যাঙারু প্রাণীটি বাঙালির কাছে পরিচিত কোনও প্রাণী নয়। আমরা ক্যাঙারু টিভি-ইউটিউবেই দেখে থাকি। কিন্তু স্বচক্ষে এই ক্যাঙারু কেউ দেখেছন কি? প্রশ্নের উত্তরটা না হওয়াই স্বাভাবিক। কারন এই দেশের জঙ্গলের প্রানী ক্যাঙারু নয়, প্রানীটি অস্ট্রেলিয়ার জঙ্গলের অন্যতম পরিচিত একটি জীব। ভারতবর্ষে ক্যাঙারু দেখা গেলেও তা রয়েছে মাত্র কয়েকটি নির্দিষ্ট চিড়িয়াখানায়। সেই ক্যাঙারু এবার উদ্ধার হয়েছে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবার কাছে ক্যানেল রোড থেকে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে,উদ্ধার হওয়া টি ক্যাঙারু শাবক, পাশাপাশি শিলিগুড়ির ফাঁড়াবাড়ি থেকে উদ্ধার ১টি ক্যাঙারু। বনদপ্তর সূত্রে খবর সেদিন স্থানীয়রা ১টি ক্যাঙারু দেখতে পেয়ে তাকে উদ্ধার করে বনদপ্তরে খবর দেয়। খবর পেয়ে বনদপ্তরের কর্মীরা এসে জলপাইগুড়ি জেলার গাজোলডোবা এলাকার ক্যানেল রোড থেকে দুটি ক্যাঙ্গারু উদ্ধার করে একটি স্করপিও গাড়ি থেকে। তবে প্রশ্ন হল, প্রথমে ২ টি ও পরে ১টি ক্যাঙারু কি করে বা কোথা থেকে আসলো শিলিগুড়িতে?
সম্পূর্ন ঘটনার তদন্ত শুরু করে বনবিভাগ। সেই তদন্তেই উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য । চলুন এবিষয়ে একটু দেখে নেওয়া যাক। এর আগে আলিপুরদুয়ার জেলার শামুকতলা পোস্টেও নাকা চেকিংয়ের সময় ক্যাঙারু ধরা পড়ে। এবার চলুন একটু গভীরে যাওয়া যাক। ভারতবর্ষ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে আকাশপথে সর্বনিম্ন দূরত্ব ৭৯৮৮.৮৬ কিলোমিটার । কীভাবে এতো বৃহৎ প্রাণী পাচার চক্র চলছে প্রশাসনের চোখের আড়ালে, বর্তমানে এটি অন্যতম বড়ো একটি প্রশ্ন। কারন এহেন প্রাণী পাচারের খবর এই এলাকায় নতুন কিছু নয়। জলপাইগুড়ি জেলার বেলাকোবা রেঞ্জে পশু পাচারের পথে আটক হওয়ার খবরের সংখ্যা বেড়েছে সম্প্রতি বনদপ্তর ও অফিসারদের তৎপরতায় তক্ষক থেকে শুরু করে একাধিক বেআইনি পশু পাচার রোধ হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হল এতোদিন কি তবে চোখ বন্ধ করে ছিল প্রশাসন? আদৌ কী সমস্ত পাচার আটকানো সম্ভব হচ্ছে ? নাকি বড়োসড়ো পাচার আড়াল করতে ছোট কিছু পাচারের সংবাদ তুলে ধরা হচ্ছে। আড়ালে কি রমরমিয়ে চলছে পশু পাচারের ব্যাবসা? রয়েছে একাধিক প্রশ্ন। কিন্তু উত্তর দেবে কে? এই পরিপ্রেক্ষিতে আরও কয়েকদিন পর শিলিগুড়ি থেকে ব্রাজিলের অ্যানাকোন্ডা উদ্ধার হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা। পাচার চোখের আড়ালেই হচ্ছে নাকি জেনে শুনেই চোখ বন্ধ রয়েছে প্রশাসনের? উত্তর জানা নেই। সবই চলছে একটু অন্যরকম ভাবে গোপনে রেখে ঢেকে।
আর এই কারনেই সম্প্রতি “জলপাইগুড়ির” নামটি সারা দেশে তো বটেই বিশ্ব মানচিত্রে উঠে এসেছে উদ্ধার ক্যাঙারু এবং পরবর্তীতে ক্যাঙারু মৃত্যুর ঘটনায় পরিপ্রেক্ষিতে। রীতিমতো শান্তশিষ্ট আইন-শৃংখলার দিক থেকে অত্যন্ত হিমশীতল এলাকা বলে পরিচিত জলপাইগুড়ি হঠাৎ ক্যাঙারু উদ্ধারের পরিপ্রেক্ষিতে সারা ভারত জুড়ে ও বিশ্বের মানচিত্রে চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথমে সাতটি ক্যাঙারু পাওয়া যায় ও তারপরে ৩ টি মারা যায়। পর পর প্রায় আধ ডজনের বেশি ক্যাঙ্গারুর পদার্পণ জলপাইগুড়ি জেলায় হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাভাবিকভাবেই একটা প্রশ্ন করতে আরম্ভ করেছে তাহলে কি জলপাইগুড়ি ক্যাঙ্গারুর বাচ্চা পাচারের অন্যতম ট্রানজিট হয়ে দাঁড়িয়েছে? এ বিষয়ে বন দফতরের কর্তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন বন্য প্রাণী প্রেমী সংগঠন গুলির কর্তারাও তাদের যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তাতে এমনটাই মনে হওয়াটা স্বাভাবিক।
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2022/04/IMG-20220416-WA0001-1024x473.jpg)
জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন এলাকা ও সমগ্র জেলা ক্যাঙ্গারু পাচারের অন্যতম পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে কেন? বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে এই প্রতিনিধি যা তথ্য পেয়েছেন তা হল ঠিক এরকম- এই জেলার সীমানা তিন দিক থেকে বেষ্টিত বিদেশি রাষ্ট্রের দ্বারা। খুব কম দূরত্বের মধ্যে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমানা থেকে নেপাল ভুটান ও মায়ানমার এবং উত্তর-পূর্ব ভারত। চীনও প্রায় কাছাকাছি। জলপাইগুড়ি লাগোয়া চিকেন নেক। সীমান্তে নজরদারি প্রহরা বিগত দিনের তুলনায় মজবুত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পাচারকারীদের নজর – বিকল্প পথ খুঁজতে গিয়ে তারা এই জেলাকে বেছে নিয়েছে। একটা সুষ্ঠু চলাচলের পথ প্রয়োজন পাচারকারীদের। হয়তো বা সেই কারণেই জলপাইগুড়ির বৈকুন্ঠপুরের জঙ্গল পথ বেছে নিয়েছে ক্যাঙ্গারু পাচারকারীরা।
এই তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেল বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবক সংস্থার প্রতিনিধিদের কাছ থেকে।জলপাইগুড়ির বন্যপ্রাণী বান্ধব বিষয়ক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি এসপি পান্ডের মতে, শহর ও আশপাশের এলাকা বর্তমানে বন্যপ্রাণ পাচারের অন্যতম নিরাপদ ট্রানজিট রুট পরিণত হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে অন্যান্য জায়গায় নজরদারি জোরদার হওয়ার কারণে। এ বিষয়ে বলতে গিয়ে সোসাইটি ফর প্রটেক্টিং অ্যানিম্যাল রাইটস-এর সভাপতি এস পি পান্ডে বলেছেন, প্রায় তিন বছর আগে তিনি একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দিতে গিয়ে বক্তাদের কাছ থেকে যা জানতে পেরেছেন তা হল এই বন্যপ্রাণী দেহাংশ পাচারকারীদের একটা বড় অংশ বিকল্প পথ খুঁজতে গিয়ে বেশ কিছু জায়গা কে চিহ্নিত করেছে। সম্ভবত এ বিকল্প পথ মধ্যে অন্যতম জলপাইগুড়ি নাম রয়েছে বলে পান্ডের অভিমত।
উত্তরবঙ্গের পরিবেশ সংরক্ষণ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সৌমিত্র ঘোষের মতে, বন্যপ্রাণ কিম্বা তার দেহাংশ পাচারের ক্ষেত্রে জলপাইগুড়ি রুট নতুন কিছু নয়। স্থানীয় ক্ষেত্রে পোচিং এর ঘটনা কমে গেলেও আন্তর্জাতিক বাজারে বন্যপ্রাণ বা তার দেহাংশের চাহিদা যথেষ্ট রয়েছে। আর সেই কারণেই পাচারকারীরা তাদের বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে যে পথে নিরাপদ সবচেয়ে বেশি সে গুলোকে ব্যবহার করতে তৎপর হয়ে উঠেছে যার ফলে জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন অংশে পাচারকারীদের আনাগোনা গতিবিধি বৃত্তি পেয়েছে যার অন্যতম হলো ক্যাঙ্গারু ধরা পড়া। পরিবেশ আন্দোলন কর্মী সৌমিত্র ঘোষের মতে ,জলপাইগুড়ি রুট বন্যপ্রাণ প্রচারের ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে যেহেতু এই এলাকা দিয়ে প্রধানত চীন ভিয়েতনাম কম্বোডিয়া থাইল্যান্ড ভায়া বাংলাদেশ পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোতে এই বন্যপ্রাণ দেহাংশ গুলি চলে যাচ্ছে সুপরিকল্পিতভাবে।।
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2022/04/IMG_20220417_160406_869-1024x515.jpg)
উত্তরবঙ্গের এই অঞ্চল ও উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর ও তার দেহাংশ প্রচন্ড চাহিদা রয়েছে এই সমস্ত দেশগুলিতে। সব থেকে আশ্চর্যজনক বিষয় হল এই যে, সম্প্রতি একটার পর একটা অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙ্গারুর বাচ্চা উদ্ধারের ঘটনা ও তারপর কয়েকটি মৃত্যু যারপরনাই অবাক করে দিয়েছে বন্যপ্রাণ প্রেমী মানুষদের। প্রথমে ক্যাঙ্গারু ধরা পড়ে আলিপুরদুয়ার জেলার শামুকতলা কুমারগ্রাম থানার অধীনে। এরপর ক্যাঙ্গারু উদ্ধার ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে শিলিগুড়িতে।
এ বিষয়ে উত্তরবঙ্গ বনজন শ্রমজীবী মঞ্চের আহবায়ক লাল সিং ভুজেলের মত হলো, উত্তরবঙ্গে ক্যাঙ্গারু পাওয়া সত্যিই এটা আশ্চর্য ঘটনা কোন সন্দেহ নেই। যারা বন্যপ্রাণ নিয়ে দেহাংশ নিয়ে পাচার কাজ করে থাকেন তারা সবকিছু নজরদারি করে থাকেন। পুলিশের ব্যারিকেড নজরদারি বনদপ্তরের নজরদারি সবই তারা ভালোমতো জানে। আর জেনে শুনেই তারা বেছে নিয়েছে ক্যাঙ্গারুর মত নিরীহ প্রাণীকে এমন রুট যেখানে নজরদারি তেমন শক্তপোক্ত নয়। জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবা বৈকন্ঠপুর জঙ্গল দিয়ে ট্রানজিটকে রুট বানিয়ে সহজেই তারা এ কাজ করতে পারবেন এটা ধরে নিই বন্যপ্রাণী দেহাংশ পাচারকারীরা এই কাজ করে চলেছে। আরেকটি সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে যে এই ক্যাঙ্গারুর প্রজনন ঘটানো হচ্ছে প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কায়। অসমর্থিত সূত্রে উঃ পূর্ব ভারতের কোনো এক অজ্ঞাত যায়গায়। আর সেখান থেকে সে গুলোকে পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন দেশে লক্ষ্য ভারতের একটি বড় প্রতিবেশী দেশ সেখানে এই কাঙ্গারু পৌঁছে দেওয়া।এসব দুটি রুটে পাঠানো হয়েছে বলে প্রাথমিক সূত্রের খবর প্রথমত সিকিম এবং অপর একটি জায়গা দিয়ে প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দিয়ে উক্ত দেশে প্রেরণ করা। এক্ষেত্রে জলপাইগুড়ি হয়ে উঠেছে সব থেকে নিরাপদ ট্রানজিট রুট। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কি করনীয় রয়েছে আমাদের? এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সদস্য জানিয়েছেন, এ ধরনের পাচারকারী কাণ্ডের সঙ্গে যারা মূল পান্ডা রয়েছেন তারা অধিকাংশই ভারতের বাইরে থেকে পরিচালনা করছেন। বেশকিছু মিডলম্যান রয়েছেন এবং স্থানীয় কিছু মানুষ রয়েছেন যারা এই কাজগুলো করছে। অত্যন্ত সুক্ষভাবে একে অপরকে কেউ চেনে না কিন্তু তারা এই কাজ করে চলেছে বলে তাঁর দাবি।
এই পাচার চক্রের সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছেন তাদের মূল পান্ডা কে ধরা সত্যি খুব কঠিন কারণ মিডলম্যান বা স্থানীয় যারা মানুষ রয়েছেন তারা কেউ কখনো এই পান্ডা কে দেখেনি সরাসরি তাদের সাথে কথা হয়নি বলে জেরায় ধৃতরা স্বীকার করেছেন। এটা বাস্তব সত্য। মিডলম্যান বা স্থানীয় মানুষ যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তারা অর্থের বিনিময় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বন্যপ্রাণীর দেহাংশ বা এই ধরণের কাজকারবার করে চলেছেন।
লানসিং ভূজেল, এসপি পান্ডে কিংবা আরো অনেকের মতে এই অঞ্চলের জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার মানুষ এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি জঙ্গল ও বন্যপ্রাণ রক্ষার ক্ষেত্রে সচেতন হয়ে উঠেছেন এবং তারা বন দপ্তর ও প্রশাসনকে সাহায্য করে চলেছেন বলে তাদের দাবি। কেন এই স্থানীয় মানুষ ও মিডলম্যান যারা রয়েছেন এই কাজকে বেছে নিচ্ছেন তার সব থেকে বড় কারণ হল দারিদ্রতা অভাব। করোনা পরবর্তী সময়ে অনেকেই আর্থিক কারণে বিভিন্ন পথ বেছে নিয়েছেন অর্থোপার্জনের যার মধ্যে বন্যপ্রাণ দেহাংশ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার মতো অপরাধ মূলক পেশাকে তারা বেছে নিয়েছে। এমনটাই মনে করছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার এসপি পান্ডে। অপর এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রতিনিধি সুন্দর সিং রাভা জানিয়েছেন, আজ থেকে প্রায় তিন দশক আগেও বন্যপ্রাণীর দেশনা দেহাংশ পাচারের ঘটনা ভীষণভাবে দেখা যেত এই অঞ্চলে। বন্যপ্রাণী ধ্বংসের পাচারের অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছিল ভীষণভাবে। কিন্তু তা বর্তমানে যথেষ্টই রাজ পেয়েছে। এর পরিবর্তে জায়গা করে নিয়েছে একটু অন্য ধরনের বন্যপ্রাণ পাচারের কর্মকান্ড যার অন্যতম হচ্ছে এই ক্যাঙ্গারু উদ্ধারের ঘটনা। এটা সত্যি আশ্চর্য জনক এবং চিন্তার বিষয় অবশ্যই। আরও একটি উল্লেখ করার বিষয় হলো যে সম্প্রতি ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো রাজ্য সরকারের বনদপ্তরের একটি সংস্থা তারাও যথেষ্ট তৎপর এ ধরনের বন্যপ্রাণী দেখার ক্ষেত্রে। ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো ইতিমধ্যেই সীমান্ত রক্ষী বাহিনী যেমন বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স, সশস্ত্র সীমা বল, রাজ্য পুলিশ ও বনবিভাগের বিভিন্ন উইংস কে কাজে লাগিয়ে এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্য লাভ করতে পেরেছে বলে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সহ বনদপ্তর আধিকারিকরা দাবি করেছেন যার ফলে এই অঞ্চলে বন্যপ্রাণী ও তার দেহাংশ পাচারের ঘটনা ক্রমশ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অপরদিকে এছাড়াও বন্যপ্রাণীদের ছোট ছোট দেহাংশ এগুলো কিন্তু নানাভাবে কৌশলে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তাদের দাবি। এই দেহাংশ গুলির মধ্যে রয়েছে বন্যপ্রাণীদের অংশ যেমন পায়ের নখ, গায়ের চামড়া, ফার, মাথার খুলি, দাঁত হাড়, সিং প্রভৃতি এগুলো নানান কৌশলে চোখের আড়ালে বিভিন্ন মানুষের হাত ধরে এক যায়গা থেকে গন্তব্য স্থলে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রতিনিধিরা।
এই ক্যাঙ্গারু আমাদের দেশের আবহাওয়ার অনুকূল প্রাণী নয় তো এই প্রাণীকে যখন আমরা দেখাশোনা করছি তখন তার আচরণ প্রকৃতির বিরুদ্ধে আচরণ করছি এ বিষয়ে একটু ভাবা উচিত চিন্তাভাবনা করা উচিত বিষয়টি সরকারের নজরে আনা দরকার এবং উচ্চমানের একটা কমিটি তদন্ত কমিটি করে এর আসল কারণ খুঁজে বের করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। পরিবেশ আন্দোলনকারীদের মতে,এটা এক ধরনের প্রকৃতি বিরুদ্ধ আচরণ বন্য প্রাণীদের সাথে। এ বিষয়ে রাজা রাউত গুরুত্বপূর্ণ যে কথা বলেছেন তা হলো, আমাদের প্রতিবেশী একটি বৃহত্তম দেশে বন্যপ্রাণী দেহাংশ নিয়ে খামার এবং সেখান থেকে বেশ কিছু ওষুধ তৈরীর প্রক্রিয়া সরকারি ভাবেই আরম্ভ হয়েছে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলে অনেকেই অবহিত রয়েছেন সুতরাং এটা অসম্ভব কিছু নয়। এই বন্য প্রাণীদের দেহের নানা ধরনের সামগ্রী পাচার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যে এক শক্তিশালী সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন। তবে এই ধরনের যে অবৈধ কাজকর্মের উপর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে তিনি মনে করছেন বন্য প্রাণী পরিবেশ সংরক্ষণ প্রেমীদের মতে, উদ্ধার হওয়া ক্যাঙ্গারু গুলোকে দেখে যেটা প্রাথমিকভাবে ধারণা হয়েছে যে এগুলো স্বাভাবিকভাবেই জন্ম গ্রহণ করেনি । কৃত্রিম উপায়ে জন্ম গ্রহণ করার ফলে তাদের আচরণ অন্যান্য প্রাণীদের মতো স্বাভাবিক নয় অর্থাৎ আর বেশিদূর যেতে পারছে না বা দৌড়াতেও পারছে না বা তাদের শারীরিক ছোটাছুটি বিষয়টা সেটা কিন্তু তেমন ভাবে দেখা যাচ্ছে না এবং তাদের খাদ্যাভাস খাদ্য সামগ্রী সেটা সঠিকভাবে না হওয়ার ফলে শারীরিক দিক থেকে যথেষ্ট দুর্বল বলে মনে হয়েছে তাঁরা এই অভিমত পোষণ করেছেন।
অর্থাৎ এরকম একটা পরিস্থিতিতে আমরা উত্তরের জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া ক্যাঙ্গারু প্রাণীর বিষয়টি যথেষ্ট চিন্তাভাবনার মধ্যে রয়েছে যে আগামী দিনে এই বিষয়ে সরকার বা বিভিন্ন পক্ষ কী ভাবনা চিন্তা করছেন সেটাও যেমন দেখার বিষয় সেরকম এই রুট দিয়ে যেভাবে পাচার করার সময় বন্যপ্রাণী দেহাংশ উদ্ধার ও বিশেষ করে এই ধরনের জীব ধরা পড়ছে তাতে নিঃসন্দেহে ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল বোর্ডকেও যথেষ্ট শক্তিশালী হতে হবে এবং নজরদারি বাড়াতে হবে এবং সরকারকেও এ বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।
অস্ট্রেলিয়ান ক্যাঙারু উদ্ধার প্রসঙ্গে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বক্তব্য, এই পাচার কান্ডে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৯৫৭-র ফরেস্ট অ্যাক্টের ধারায় মামলা করা হয়েছে ধৃতদের বিরুদ্ধে, যার সর্বনিম্ন ৭ বছর এবং সর্বোচ্চ ১৭ বছর জেল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ক্যাঙ্গারুগুলিকে চোরাই পথে বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে নেপাল দিয়ে চীনে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। উদ্ধার হওয়া ক্যাঙ্গারুগুলিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর উত্তরবঙ্গের বেঙ্গল সাফারি তে ছাড়া হয়েছে। পাচার চক্রের সক্রিয়তা সম্পর্কে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান,পাচার চক্র আগে অনেক বেশি ছিল বর্তমান সরকারের আমলে অনেকটাই কমেছে। এটা হল সরকারি বক্তব্য মন্ত্রীর বক্তব্য।
এ বিষয়ে জলপাইগুড়ি সায়েন্স এন্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক রাজা রাউতের অভিমত হলো, অবিলম্বে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি টাস্কফোর্স জাতীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে আসল ঘটনা জানা এবং সেগুলিকে আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরা যার সঙ্গে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি যুক্ত রয়েছে তাদের নজরে বিষয়টি আইনি সমস্যার সমাধানে ব্রতী হতে হবে যৌথভাবে ।বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর সংবেদনশীল তাই এক্ষেত্রে সরকারকে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটু তৎপরতা মূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগোতে হবে বলে তিনি মনে করেন। এখন দেখার বিষয় আগামী দিনে ক্যাঙ্গারু রহস্য উদ্ধার এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা কি হতে চলেছে আগামী দিনে।
ছবি-প্রতিবেদক।