ডেস্ক রিপোর্ট: পাঁচ বারের সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী পরাজিত। এতদিনে মমতার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হল। যাঁদের সঙ্গে মমতার শত্রুতা রাজনৈতিক মতবিরোধকে ছাপিয়ে ব্যক্তিগত রেষারেষিতে পরিণত হয়েছে, অধীর চৌধুরী তাঁদের একজন। অধীরের সঙ্গে মমতার কোনও দিন বনিবনা হয় নি। এমনকি কংগ্রেসে থাকতেও নাকি দু’জনের মধ্যে সখ্যতা ছিল না। বহরমপুরে এবার চিরশত্রুকে জব্দ করতে গুজরাট থেকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে উড়িয়ে এনেছেন মমতা। এবং মমতার কার্যসিদ্ধি হয়েছে। বহরমপুরের ভোটারদের বড় অংশ সংখ্যালঘু। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই বহরমপুরেই হিন্দু হয়েও পর পর পাঁচবার জিতেছেন অধীর। ষষ্ঠবার মেরুকরণের জেরে ভোট ভাগাভাগির পাল্লায় পড়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির ভাগ্য গোল্লায় গেল।
ইউসুফ পাঠানের কাছে ৮৫ হাজার ২২ ভোটে হেরে গেছেন অধীর। পাঠান পেয়েছেন ৫ লক্ষ ২৪ হাজার ৫১৬ ভোট। অধীরের ভোট ৪ লক্ষ ৩৯ হাজার ৪৯৪। বিজেপির ডা. নির্মলকুমার সাহা পেয়েছেন ৩ লক্ষ ৭১ হাজার ৮৮৫ ভোট। চিকিৎসক হিসেবে বহরমপুরের মানুষের কাছে নির্মলের জনপ্রিয়তা রয়েছে। হিন্দু ভোটের একটা বড় অংশ গিয়েছে বহরমপুরের জনপ্রিয় চিকিৎসক নির্মলের দখলে। মুসলিম ভোটের অধিকাংশ টেনে নিয়েছেন ইউসুফ পাঠান। ফলে এ যাত্রায় অধীর চৌধুরীর পক্ষে আর গড় রক্ষা করা সম্ভব হয় নি। ২০১৪ থেকেই অধীরকে ধরাশায়ী করতে তৎপর মমতা। ঊনিশে মাটি কামড়ে লড়ে জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। জয়ের মার্জিন যদিও সাড়ে তিন লক্ষ থেকে কমে ৮৭ হাজারে নেমে এসেছিল।
ভোটে পর্যুদস্ত হওয়ার পর বহরমপুরের পাঁচবারের সাংসদের আক্ষেপ, “আমি হিন্দুও হতে পারি নি। আমি মুসলিমও হতে পারি নি। হিন্দু ও মুসলমানের মাঝে পড়ে আমি স্যান্ডুইচ হয়েছি। এক দিকে হিন্দু ভোটের বিভাজন, অন্যদিকে মুসলমান ভোটের বিভাজনের ফলে আমার হার হয়েছে।” পরাজয়ের পর অধীর চৌধুরীর উপলব্ধি, “বাংলার রাজনীতি ক্রমশ ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। উদার ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির পক্ষে নির্বাচন কঠিন হয়ে যাচ্ছে।”
মল্লিকার্জুন খড়্গেরা চাইলেও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অনড় থাকায় রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতা ভেস্তে গিয়েছে বলে মনে করা হয়। প্রদেশ কংগ্রেসের একাংশও তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু অধীর বামেদের সঙ্গে জোট বাঁধেন। জোট ভেস্তে যাওয়ায় অধীরকেই কাঠগড়ায় তুলেছিলেন মমতা। মঙ্গলবার দলের বিপুল জয়ের পর সাংবাদিকদের সামনে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট না হওয়ায় ফের অধীরের দিকেই আঙুল তোলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। অধীর চৌধুরীর জয়ের জন্য তাঁর দলের শীর্ষ নেতৃত্বেরও কোনও মাথাব্যথা ছিল না। অধীরের হয়ে প্রচারে আসেন নি রাহুল কিম্বা প্রিয়াঙ্কা। ভোটের মাঝ পর্বেই মমতাকে কেন্দ্র করে দলের সভাপতির সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। মমতাকে কটাক্ষ করায় রেগে গিয়ে অধীরকে দল পর্যন্ত ছাড়তে বলেছিলেন মল্লিকার্জুন খড়্গে।
অধীররঞ্জন চৌধুরীকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করার চেষ্টা মমতার বহু দিনের। মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের সংগঠন ভেঙে খান খান। অধীরের ডান হাত-বাম হাতদের ভাঙিয়ে এনেছেন। পুরসভা, জেলা পরিষদ কংগ্রেসের হাতছাড়া। বাকি ছিল শুধু অধীরের সাংসদ পদটুকু। মঙ্গলবার সেটা কেড়ে নেওয়ার পর মমতার মুর্শিদাবাদ বিজয় সম্পূর্ণ। রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু হয় না। তারপরেও প্রশ্ন জাগে, ৬৮ বছরের প্রবীণ রাজনীতিক কি আর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন? তাঁর রাজনৈতিক জীবনেই ইতি পড়ে গেল না তো?