বিশেষ প্রতিবেদন: লোকসভার ‘ম্যাজিক ফিগার’ ২৭২। ইতিমধ্যেই চিত্র পরিষ্কার যে বিজেপি একার জোরে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত বিজেপি জিতেছে ১৩টি আসন। এগিয়ে ২৩১টিতে। শেষ পর্যন্ত ফাইনাল ফিগার যাই দাঁড়াক, বিজেপিকে ২৭২-এর অনেক আগেই থামতে হবে। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে বিজেপির আসন সংখ্যা ছিল ২৮২। ম্যাজিক ফিগার থেকে ১০ বেশি। উনিশে বিজেপি একাই ৩০৩। এবারে জোটগতভাবে এনডিএ-র আসন সংখ্যা ৩০০-র কাছাকাছি পৌঁছালেও ইতিমধ্যেই চন্দ্রবাবু নায়ডু ও নীতিশকুমারকে টোপ দিয়ে দলে টানতে চাইছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট।
কোনও দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সংখ্যার বিচারে সর্ববৃহৎ দলকে সরকার গঠনের জন্য ডাকতে বাধ্য রাষ্ট্রপতি। সংবিধানে তেমনটাই বলা আছে। সেই হিসেবে ধরেই নেওয়া যায় বিজেপি সরকার গঠনের সুযোগ পাচ্ছেই। কিন্তু বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ সরকার গঠিত হলেও একটা বিষয় স্পষ্ট, মোদীর সেই মহিমা আর ফিরবে না। নরেন্দ্র মোদী যেভাবে দল ও সরকার চালিয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন, এবার তাঁর সামনে সেই সুযোগ থাকবে না। বিজেপির মধ্যে যে যৌথ নেতৃত্বের ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিল, মোদী ও শাহ তাকে ধ্বংস করেছেন। রাজনীতিতে ‘যো জিতা ওহি সিকান্দার’। যতক্ষণ মোদীর ম্যাজিক বিজেপিকে সাফল্য দিয়েছে, ততক্ষণ দলের ভেতরে বিক্ষুব্ধরা চুপ ছিলেন। কিন্তু এখন তো নীতিন গড়কড়ি, শিবনাথ সিং চৌহান ও রাজনাথ সিংয়ের মতো মোদী-শাহ বিরোধী নেতারা আর মুখ বন্ধ করে রাখবেন না।
দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর এনডিএ জোটকে প্রায় অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বিজেপির নিজেরই ৩০৩-এর বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। ফলে নিজের খুশি মতো সরকার চালাতে মোদীকে বেগ পেতে হয় নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চালচলন আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মতো হয়ে উঠেছিল। সেরকমই প্রশাসনিক কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা ফলিয়েছেন। নিজের ক্যারিশ্মাতেই একের পর এক নির্বাচনে তিনি দলকে বিশাল জয় এনে দিতে পারেন, এই আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটতেন মোদী। সেই দম্ভের বেলুনটা কিন্তু এবার জনগণ ফুটো করে দিল।
সন্ধ্যা নামতে আর বেশি দেরি নেই। এতক্ষণে সমর্থক ও অনুগামীদের প্রবল হর্ষোল্লাসের মধ্যে দীনদয়াল ভবনের ঝলমলে বিজয়োৎসবে আবির্ভূত হওয়ার কথা ছিল মোদীর। কিন্তু পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এক্সিট পোলের পূর্বাভাস মেলে নি। বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ-র সরকার তৈরি হলেও নরেন্দ্র মোদীই শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হবেন কিনা, এই প্রশ্নও রাজনৈতিক মহলে উঠে গেছে।
ভারতের রাজনীতিতে পর পর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। জওহরলাল নেহেরুর পরে আর কারও সেই সৌভাগ্য হয় নি। এখনও পর্যন্ত অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের ফল যা বলছে, মোদী চাইলে নেহেরুর রেকর্ড স্পর্শ করতে পারেন। সেই সুযোগ তিনি হাতছাড়া করবেন বলেও মনে হয় না। তবে একটা ব্যাপার পরিষ্কার, জুনের ৩ তারিখ পর্যন্ত ভারতের রাজনীতিতে মোদী যা ছিলেন, জুনের ৪ তারিখের পর থেকে মোদী আর তা থাকছেন না। নরেন্দ্র মোদী তৃতীয় বারের মতো সাউথ ব্লকে গিয়ে বসলেও তিনি কি আর আগের মতো পরাক্রম দেখাতে পারবেন? পারবেন না।