দেবী সরস্বতীর উপরে ‘ফিচার’টি মাত্র ৩ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডে দেখে নেওয়ার সুযোগ আপনার সামনে। নিচের এমবেডেড ভিডিওটিতে ক্লিক করুন –
ইনফোয়ানা ফিচার: বাঙালির কাছে মাঘ মাস মানেই দেবী সরস্বতীর পুজো। মাঘের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে দেবী পূজিতা হন। এই তিথি বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। দেবী সরস্বতীর আরেক নাম বাগদেবী। অর্থাৎ শুভ্রবর্ণা এই দেবী আমাদের বাকশক্তির নিয়ন্ত্রা। এখানে বাক অর্থ জ্ঞান। সরস্বতী নামের অর্থ জ্যোতির্ময়ী। সাধারণ ভাবে ‘জ্যোতি’ মানে আলো। আবার জ্যোতিকেই জ্ঞান রূপে অলঙ্কৃত করেছে বেদ। বৃহদারণ্যক উপনিষদ বলছে, ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়’। অর্থাৎ অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে চলো। এই আলো হল জ্ঞান। দেবী সরস্বতী জ্ঞান শক্তিতে পরিপূর্ণা। তাই তিনি জ্যোতির্ময়ী। সরস্বতী আমাদের জ্ঞান, বিদ্যা, বুদ্ধি ও মেধা প্রদান করে থাকেন। শ্বেতবর্ণা দেবী সরস্বতী শ্বেতবসনায় শ্বেতপদ্মে আসীন এবং তাঁর বাহন শ্বেত রাজহংস।
ঋকবেদ বলছে ভূঃ ভুবঃ স্বঃ- অর্থাৎ এই ত্রিলোক ব্যাপী দেবী সরস্বতী প্রকাশিত জ্ঞানময়ী রূপে। সংস্কৃত ভাষায় সরস্বতীর আরেক অর্থ যাতে জল রয়েছে এমন। লুপ্ত সরস্বতী একদা ছিল বিপুলা তটিনী ও স্রোতস্বিনী। হিমালয়ের সিমুর পর্বতের প্লক্ষ প্রস্রবণ থেকে উৎসারিত এই নদী তিনশ-চারশ খ্রীস্ট পূর্বাব্দে উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে প্রবাহিত হত। সরস্বতী নদী ছিল বৈদিক সভ্যতার প্রাণ স্বরূপা। সপ্তসিন্ধু বাহিত বৈদিক সংস্কৃতির ছত্রে ছত্রে সরস্বতী নদীর মহিমা বর্ণিত আছে। ঋকবেদের এক জায়গায় বলা হয়েছে ‘অম্বিতমে নদীতমে দেবীতমে সরস্বতী’ অর্থাৎ সরস্বতী যুগপৎ দেবীশ্রেষ্ঠা এবং নদীশ্রেষ্ঠা। সরস্বতী নদীর দুই তীর জুড়ে ছিল বৈদিক ঋষিদের তপোবন। সরস্বতীর পাড়ে চলত ঋষিদের সারস্বত চর্চা। পুণ্য সলিলা তটিনী সরস্বতীই কালক্রমে দেবী ভগবতীর রূপ পরিগ্রহ করেন বলে অনেক পন্ডিতের ধারণা।
বৈদিক শাস্ত্র মতে ব্রহ্মার সঙ্গে সরস্বতীর নিবিড় যোগ। ব্রহ্মার স্ত্রীশক্তি হিসেবে সরস্বতীকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ব্রহ্মার মুখগহ্বর থেকে সরস্বতীর উদ্ভব। আবার ব্রহ্মার কন্যা হিসেবেও সরস্বতীর পরিচিতি আছে স্কন্দ পুরাণে। অন্যদিকে ভগবান বিষ্ণুর সঙ্গেও সরস্বতীর সম্পর্ক পাচ্ছি। দেবী ভাগবত পুরাণ অনুসারে নারায়ণের জিহ্বাগ্র থেকেই দেবী সরস্বতীর উদ্ভব। মার্কেন্ডেয় পুরাণেও পাই দেবী সরস্বতীকে। শ্রীশ্রী চন্ডী কর্তৃক শুম্ভ-নিশুম্ভ নামে দুই অসুর বধকালে বাগদেবী অষ্টভূজা মহাসরস্বতী রূপে উপস্থিত ছিলেন। অর্থাৎ মুনি-ঋষির সাধনভূমি থেকে মহামায়া দেবী চন্ডীর রণভূমি- সর্বত্রই বীণাপাণি সরস্বতী উপস্থিত জ্ঞানশক্তি ও জ্ঞানদাত্রী রূপে। ভগবান বিষ্ণু কৃষ্ণ হয়ে ধরায় এসে জ্ঞানদায়িনীকে বর প্রদান করেন। পুরাণের একটি কাহিনীতে পাই, মাঘ মাসের শুক্লা পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে বৃন্দাবনে দেবী সরস্বতীর পুজোর প্রথম প্রচলন করেন শ্রীকৃষ্ণ।
অর্থাৎ বেদ-পুরাণ জুড়ে বীণাপাণি বাগদেবীর মাহাত্ম্যের শেষ নেই। তবে বাঙালির তিনি মা সরস্বতী। ভারতের অন্যত্র দেবী সরস্বতীর বিগ্রহ ময়ুর বাহনা এবং তিনি চতুর্ভূজা। বীণা বাদনরতা দেবীর এক হাতে অক্ষমালা। আরেক হাতে বেদপুস্তক। রাজহংসের পৃষ্ঠে আসীনা বাঙালির সরস্বতী দ্বিভূজা। দেবীর বামহস্তে বীণা দক্ষিণ হস্তে বরাভয় মুদ্রা। বাঙালির ঘরে ঘরে জ্যোতির্ময়ী সরস্বতীর আসন পাতা। দেবী জ্যোতির্ময়ী জ্ঞানের আলো দান করে আমাদের মনের অন্ধকার ঘুচিয়ে দিন।
Feature graphic designed by NNDC. Video Credit- Infoyana YouTube channel.