কলকাতা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিরোধী টুকরে টুকরে গ্যাঙকে উপড়ে ফেলতে দলের ছাত্র-যুব সংগঠনের কাছে আহ্বান জানালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার বিকেলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকায় যুব মোর্চার অবস্থান বিক্ষোভে ভাষণ দেন শুভেন্দু অধিকারী। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র মৃত্যুর প্রতিবাদে সেখানে তিন দিনের অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপির যুব সংগঠন। দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচিতে শুভেন্দুর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন রাহুল সিনহাও। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মেইন হস্টেল’-এ প্রথম বর্ষ বাংলা অনার্সের ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য রাজ্য সরকারকেও দায়ী করেন শুভেন্দু।
গত বুধবার রাতে মেইন হস্টেলের ‘এ’ ব্লকের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় সাড়ে সতেরো বছরের ওই ছাত্রের। নদীয়ার হাঁসখালির বগুলা থেকে যাদবপুরে পড়তে এসেছিল মেধাবী ছাত্রটি। হস্টেলে অন্য এক ছাত্রের সঙ্গে গেস্ট হিসেবে থাকত সে। তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল নাকি ভয়ে-আতঙ্কে ছাত্রটি তিনতলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। ঘটনার দিন রাত পৌনে বারোটা নাগাদ যখন ছেলেটিকে হস্টেলের ‘এ’ ব্লকের নীচ থেকে উদ্ধার করা হয়, তখন তার দেহে কোনও জামাকাপড় ছিল না। সদ্য ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের এই ছাত্র হস্টেলে র্যাগিং-এর শিকার বলে বাবার অভিযোগ। এমনকি তাকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চারজন প্রাক্তনী সহ নয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পরিবার চাইলে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে আইনি লড়াই
যাদবপুরের সভায় শুভেন্দু বলেন, “এখানকার পুলিশের তদন্তের উপর আমাদের আস্থা নেই। ছাত্রটিকে যারা অত্যাচার করে মেরেছে, তাদের কঠোর সাজা চাই।” শুক্রবার দুপুরে মৃত ছাত্রের বাড়িতে যাবেন বিরোধী দলনেতা। সঙ্গে যাবেন বিজেপির ১৫জন বিধায়ক। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রটির বাবা-মা যদি অনুমতি দেন, তাহলে এই মামলা যাতে মমতা ব্যানার্জির নিয়ন্ত্রিত কোনও সংস্থা নয়, নিরপেক্ষ কোনও সংস্থা তদন্ত করে সেই দাবিতে বৃহত্তর আইনি লড়াইয়ের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেব। শুধুমাত্র যারা র্যাগিংয়ে সরাসরি যুক্ত তারা নয়, তাদের পেছনে যে মাথারা আছে, এখানে যারা মাদক সাপ্লাই করে। এখানকার রেজিস্ট্রার, এখানকার প্রশাসন, প্রত্যেকের যাতে বিচার হয়। এটাই যাতে পশ্চিমবঙ্গে শেষ ঘটনা হিসেবে নজির থেকে যায়, আগামী দিনে এই রকম ঘটনা আর একটাও যাতে না হয়, সেই লক্ষ্যে যা করার দরকার, আমরা করব।”
মমতার মদতেই ‘নো ভোট টু বিজেপি’র দখলে যাদবপুর
যুব মোর্চার সভায় বিরোধী দলনেতা অভিযোগ করেন, যারা ছাত্রটিকে মেরেছে, তারাই একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘নো ভোট টু বিজেপি’ ও বাংলাপক্ষের ব্যানারে মমতা ব্যানার্জির হয়ে দালালি করেছিল। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় প্রথম ধরা পড়েছে সৌরভ চৌধুরী। এই সৌরভ হল বাংলাপক্ষের নেতা। কারা এই বাংলাপক্ষ? যাদের সৃষ্টি করা হয়েছিল ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভারতীয় জনতা পার্টিকে অবাঙালিদের পার্টি বলে প্রচার করার জন্য।” নন্দীগ্রামের বিধায়কের অভিযোগ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে যারা রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির দুর্গ বানিয়েছে, নেশাভাঙের ঠেক বানিয়েছে, তাদের নেতারা মমতা ব্যানার্জির ‘পে রোলে’ আছেন। শুভেন্দু কটাক্ষ করে বলেন, “এদের একজন এখন বড় নেতা, সরকারি পোস্টে আছেন। তাঁকে মমতা ব্যানার্জি বেতন দেন। গাড়ি দেন। তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন।” বিরোধী দলনেতা বলেন, “এদের একজন সামিরুল। তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠানো হয়েছে। এদের প্রত্যেকের চরিত্র আপনারা জানেন। এদের দ্বারা পরিচালিত তিন-চারটে অর্গানাইজেশন ২০২১ সালে ‘নো ভোট টু বিজেপি’ ক্যাম্পেইন করেছিল। এরা হচ্ছে মমতা ব্যানার্জির বি টিম। এরা মমতা ব্যানার্জির ফান্ডেড অর্গানাইজেশন।” সভায় শুভেন্দু অধিকারীর বিস্ফোরক অভিযোগ, এদেরকে বলা হয়েছে গোটা হস্টেলটাকে অত্যাচারের জায়গায় পরিণত কর। মাদক ছড়িয়ে দাও। যা খুশি কর।
ব্রাত্যকে বিধানসভায় চেপে ধরে জবাব চাইব
আগামী সোমবার থেকে রাজ্য বিধানসভার বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরু হবে। যাদবপুর কান্ড নিয়ে বিধানসভায় বিরোধীরা সরকারকে চেপে ধরবে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়ে দেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ব্রাত্য বসু, আপনি কান খুলে শুনে রাখুন, পালাবেন না, ভাগবেন না মঙ্গলবার হাউস থেকে। আপনার কাছ থেকে হিসাব বুঝে নেবেন বিজেপির এমএলএ-রা। হিসাব আমরা বুঝে নেবো। অ্যাকশান টেকেন রিপোর্ট চাইব। কেন সিসি টিভি লাগান নি? কেন চোর পার্থ অভিজিৎবাবুকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে ছিল? কেন মমতা ব্যানার্জি ‘নো ভোট টু বিজেপি’, বাংলা পক্ষ নাম দিয়ে যাদবপুরের দেশবিরোধী শক্তিকে হৃষ্ট, পুষ্ট, বলিষ্ঠ, লালিত-পালিত করেছেন, এর উত্তর মঙ্গলবার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে দিতে হবে। না হলে আমরা বিধানসভা অচল করে দেবো।”
একমাত্র বিজেপিই পারবে যাদবপুরকে লাইনে আনতে
যুব মোর্চার অবস্থান বিক্ষোভে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আমার কাছে অভিযোগ এসেছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি দিলে আক্রান্ত হতে হয়। ভারতবর্ষের মধ্যে একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে বন্দেমাতরম নিষিদ্ধ।” এরপরেই বিরোধী দলনেতা হুঙ্কার দেন, “যাদবপুর থেকে রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির এই বীজ আমরা ঝাড়েবংশে উপড়ে ফেলব। যে পার্টি কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা উপড়ে ফেলে দিয়েছে, একমাত্র সেই পার্টির পক্ষেই যাদবপুর থেকে দেশদ্রোহীদের আগাছা তুলে ফেলা সম্ভব। আমরা এখান থেকে এই তথাকথিত টুকরে টুকরে গ্যাঙ, দেশ বিরোধী শক্তি, ইনকিলাবি নাড়াবাজি, চিন যাদের বাপ আর মা, মমতা ব্যানার্জি যাদের ‘গার্ডিয়ান’; তাদেরকে তুলে ফেলব।”
সভায় দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের কর্মীদের যাদবপুরের মাটি কামড়ে পড়ে থেকে বাম-অতিবাম শক্তিকে উৎখাত করতে পরামর্শ দেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “কুকুরের লেজ যেমন টানলে সোজা হয় না। এরাও তেমনি ভাল কথায় সোজা হওয়ার লোক নয়। কয়লার যেমন দুধ দিয়ে ধুলেও রঙ পাল্টায় না, এদের তেমনি স্বভাবের পরিবর্তন হয় না। এদেরকে লেগে থেকে উৎখাত করতে হবে। আপনারা যদি একবার প্রতিবাদ করেই জায়গা ছেড়ে চলে যান, এরা আবার এখানে অত্যাচার শুরু করবে।” যুব মোর্চার প্রতি বিরোধী দলনেতার আহ্বান, “আমি যুব মোর্চাকে বলব, আগামী সপ্তাহে ‘যাদবপুর ইউনিভার্সিটির গেট চলো’ অভিযান ডাকো। যদি অভিযান করেন, আমি সামনে থাকব বলে কথা দিয়ে গেলাম। এর শেষ দেখে ছাড়তে হবে। আমাদের লড়াই চলছে। আমাদের লড়াই চলবে।”
Feature image/ graphic is representational.