জ্ঞানবাপীর পুরাতাত্ত্বিক সমীক্ষা হচ্ছেই, বারাণসী জেলা আদালতের রায়ই বহাল রাখল এলাহাবাদ হাইকোর্ট - nagariknewz.com

জ্ঞানবাপীর পুরাতাত্ত্বিক সমীক্ষা হচ্ছেই, বারাণসী জেলা আদালতের রায়ই বহাল রাখল এলাহাবাদ হাইকোর্ট


ডেস্ক রিপোর্ট: বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদের পুরাতাত্ত্বিক সমীক্ষায় অনুমতি দিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। মসজিদ চত্বরে যে কোনও ধরণের সমীক্ষার বিরোধিতা করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি’। বৃহস্পতিবার অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়ার আর্জি খারিজ করে দিল এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। তবে জ্ঞানবাপী চত্বরের ‘ওজুখানা’ ও সংলগ্ন এলাকা পুরাতাত্ত্বিক সমীক্ষার আওতা থেকে বাদ রাখার যে নির্দেশ‌ বারাণসী জেলা আদালত দিয়েছিল, তা বহাল রেখেছে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশের ফলে হিন্দুদের দাবি মেনে জ্ঞানবাপী মসজিদের পুরাতাত্ত্বিক সমীক্ষায় বাধা রইল না। ‘ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ’ বা ‘আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’ এই সমীক্ষা চালাবে। যদিও, হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যা‌ওয়ার কথা ভাবছে ‘জ্ঞানবাপী মসজিদ কমিটি’।

জ্ঞানবাপী ওজুখানার কূপে এই সেই কাঠামো, যাকে শিবলিঙ্গ বলে দাবি করছে হিন্দুরা। ছবি সংগৃহীত

কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একেবারে গা ঘেঁষেই বিতর্কিত জ্ঞানবাপী মসজিদ, বলা যায় বিশ্বেশ্বর ও অন্নপূর্ণার মন্দিরের উঠোনেই মসজিদটির অবস্থান।‌ জ্ঞানবাপী মসজিদের জায়গায় ‘মা শৃঙ্গার গৌরী’র মন্দির ছিল বলে হিন্দুদের দাবি। মুঘল আমলে মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে মা শৃঙ্গার গৌরীর অবস্থান ও মসজিদের পশ্চিম দিকের দেওয়ালের গায়ে খোদাইকৃত দেবদেবীর মূর্তি সেই সাক্ষ্য‌ই দেয় যে হিন্দুদের অভিযোগ মিথ্যে নয়। জ্ঞানবাপী মসজিদের ওজুখানার কূপের ভেতরে ‘শিবলিঙ্গ’ আছে বলেও হিন্দুদের দাবি। যদিও ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি’ বলছে, যেটিকে ‘শিবলিঙ্গ’ বলে দাবি করা হচ্ছে, তা আসলে একটি ফোয়ারার কাঠামো।

জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে মা শৃঙ্গার গৌরীর মূর্তি। ছবি- সংগৃহীত

১৯৪৭-এর আগে-পরেও জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে মা শৃঙ্গার গৌরীর পূজা চলত বলে জানা গেছে। এখন আবার ‘শৃঙ্গার গৌরী’ চত্বরে পূজাআচ্চার অধিকার ফেরত চাইছে বারাণসীর হিন্দুরা। ২০২১ সালের অগাস্টে জ্ঞানবাপী চত্বরে অবস্থিত ‘মা শৃঙ্গার গৌরী’র পূজার্চনার আর্জি জানিয়ে আদালতে গিয়েছিলেন বারাণসীর হিন্দু সম্প্রদায়ের তরফে পাঁচ মহিলা। হিন্দু মহিলাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জ্ঞানবাপী মসজিদ ভেতরের পরিকাঠামো ‘এ‌এস‌আই’-কে ভিডিওগ্রাফি করার নির্দেশ দেন বারাণসীর নিম্ন আদালতের বিচারক রবিকুমার দিবাকর। ভিডিওগ্রাফিতে ওজুখানার জলাধারে শিবলিঙ্গের আকৃতির একটি কাঠামো স্পষ্টত‌ই দৃশ্যমান হয়। মসজিদ কমিটি বস্তুটিকে ফোয়ার বলে দাবি করলে‌ও ‘কার্বন ডেটিং’ পদ্ধতির মাধ্যমে কাঠামোটির বয়স নির্ধারণ করার আওয়াজ তোলে হিন্দুরা।

যে নির্দেশ দিয়েছিল বারাণসী জেলা আদালত

অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২-এর ২০ মে এই মামলার শুনানির দায়িত্ব বারাণসী জেলা আদালতের কাছে হস্তান্তর করে সুপ্রিম কোর্ট। গত ২১ জুলাই মামলার রায় দেয় বারাণসী জেলা আদালত। ওজুখানা ও সংলগ্ন এলাকা বাদ রেখে বাকি জ্ঞানবাপী মসজিদের চত্বরের পুরাতাত্ত্বিক সমীক্ষা করতে’আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’-কে নির্দেশ দেন বিচারক অজয়কুমার বিশ্বেস। জেলা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে না গিয়ে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে জ্ঞানবাপী মসজিদ কমিটি। গত ২৪ জুলাই ৪৮ ঘন্টার জন্য বারাণসী জেলা আদালতের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি‌ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ। তবে মামলার আবেদনকারীদের এলাহাবাদ হাইকোর্ট দেখিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মামলাকারীদের এলাহাবাদ হাইকোর্টে আবেদন করতে নির্দেশ দেন শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা।

স্থাপত্যের ক্ষতি না করেই সমীক্ষার আশ্বাস পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের

২৬ জুলাই এলাহাবাদ হাইকোর্টে আবেদন জানায় ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি’। এ‌এস‌আই-কে সমীক্ষার অনুমতি দিলে মসজিদের কাঠামোর ক্ষতি হতে পারে, এই আশঙ্কায় সমীক্ষা বন্ধ রাখতে হাইকোর্টের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন মসজিদ কমিটির আইনজীবী। মসজিদ কমিটির আশঙ্কার ব্যাপারে এ‌এস‌আই-এর বিশেষজ্ঞদের মতামত জানতে চায় এলাহাবাদ হাইকোর্ট। এ‌এস‌আই-এর বিশেষজ্ঞরা হাইকোর্টকে জানান, ‘গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার’ এর সাহায্যে কোন‌ও প্রকার খননকার্য ছাড়াই সমীক্ষা করা সম্ভব। এর ফলে মসজিদের প্রাচীন কাঠামোর ক্ষতির আশঙ্কা দূর হবে।

পুরাতাত্ত্বিকদের আশ্বাসেই ভরসা রাখল হাইকোর্ট

পুরাতাত্ত্বিকদের আশ্বাসের পর সমীক্ষায় আর বাধা দেওয়া উচিত নয় বলেই মনে করছে এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। এএস‌আই-এর আশ্বাসের পরেও মামলাকারীদের সংশয় দূর হচ্ছে না দেখে গত ২৬ জুলাই প্রধান বিচারপতি প্রীতিনকর দিবাকর বলেছিলেন, “আপনারা যদি এ‌এস‌আই-এর বিশেষজ্ঞদের আশ্বাসেও ভরসা না রাখতে পারেন, তা হলে কিছুই বলার নেই।’ বৃহস্পতিবার ( ৩ অগাস্ট) রায় দিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত বারাণসী জেলা আদালতের নির্দেশকেই বহাল রাখল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। অর্থাৎ ওজুখানা সংলগ্ন এলাকা বাদ রেখে জ্ঞানবাপী মসজিদের সমীক্ষা করবে ‘ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ’।

সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ইঙ্গিত এআইএমপিএল-এর

এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে খুশি হিন্দু সম্প্রদায়ের আইনজীবী বিষ্ণু জৈন। পুরাতাত্ত্বিক সমীক্ষা সত্য উদঘাটন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তবে ১৯৯১ সালের ‘ধর্মীয় উপাসনাস্থল রক্ষা আইন’ ও ১৯৯৫ সালের ‘সেন্ট্রাল ওয়াকফ আইন’-কে ঢাল করে সমীক্ষা বন্ধের আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড’।

Feature image/graphic is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *