পঞ্চায়েতের প্রচার থেকে উধাও! জিজ্ঞাসাবাদ পর্বেই কেন সায়নী থেকে মুখ ফেরাল তৃণমূল? - nagariknewz.com

পঞ্চায়েতের প্রচার থেকে উধাও! জিজ্ঞাসাবাদ পর্বেই কেন সায়নী থেকে মুখ ফেরাল তৃণমূল?


বিশেষ প্রতিবেদন: নিয়োগ দুর্নীতিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-এর জেরার মুখে পড়তেই সায়নী ঘোষের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করল তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার যখন তুঙ্গে, তখন যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রীর মতো দায়িত্বশীল পদে থাকা সায়নীকে সভা-সমাবেশে বক্তৃতা দিতে ডাকাডাকি করছে না দল। অথচ ইডির তলব আসার আগে পর্যন্ত তৃণমূলের ‘স্টার ক্যাম্পেনারের’ তালিকার ওপরের দিকেই ছিল সায়নীর নাম। ২৭ জুন (মঙ্গলবার) রাতে তাঁর দক্ষিণ কলকাতার বিক্রমগড়ের বাড়িতে যখন ইডির নোটিশ পৌঁছায়, তখন বর্ধমানের মন্তেশ্বরে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন সায়নী। ৩০ জুন (শুক্রবার) সকালে সায়নী ঘোষকে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির থাকতে বলে ইডি। তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২ জুন (রবিবার) পর্যন্ত ঠাসা কর্মসূচি ছিল যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রীর।

ইডির নোটিশ নোটিশ পাওয়ার পর দু’দিন ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন সায়নী ঘোষ। শোনা যায়, দলের নেতারাও নাকি তাঁর হদিস পাচ্ছিলেন না। যদিও তৃণমূলের ভেতরে কানাঘুষা অন্য রকম- সায়নীই নাকি অনেক চেষ্টা করেও দলের শীর্ষ নেতাদের নাগাল পান নি। কানাঘুষা সত্যি হলে মানতে হবে, ইডির ডাক পাওয়া মাত্রই দলের যুব সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রীকে খরচের খাতায় ফেলে দিয়েছে তৃণমূল।

ইডির তলব পাওয়ার আগে পর্যন্ত ঠাসা কর্মসূচি ছিল সায়নীর। নিজের ফেসবুক পেজে কর্মসূচির বিস্তারিত দিয়েছিলেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী।

৩০ জুনের পর সায়নীকে ঘিরে ঘটনাক্রম কিন্তু সেই দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। শুক্রবার যথা সময়ে ইডির দফতরে হাজিরা দিয়েছিলেন সায়নী ঘোষ। ১১ ঘন্টার ম্যারাথন জেরা শেষে সিজিও কমপ্লেক্স থেকে ঘরে ফেরার পথে সাংবাদিকদের সায়নী বলেছিলেন, “যতবার ডাকবে ততবার আসব।” আগামী বুধবার (৫ জুলাই) সায়নী ঘোষকে আবার ডেকেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ইডির প্রথম দফার জেরার পর দু’দিন কেটে গেছে। এই ৪৮ ঘন্টায় কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায় নি যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রীকে।

কেসে ফেঁসে গেলে ঝেড়ে দাও

প্রশ্ন হচ্ছে, ইডির তলব পাওয়া মাত্রই কেন সায়নীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করল তৃণমূল? ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের সঙ্গে লেনদেন সংক্রান্ত ব্যাপারে ফেব্রুয়ারি থেকেই তদন্তকারীদের নজরে ছিলেন সায়নী ঘোষ। জেরায় কুন্তল যাঁদের নাম বলেছিলেন, তাঁদের মধ্যে সায়নী অন্যতম। কিন্তু ইডি তলব না করা পর্যন্ত দলে সায়নীর কদর কমে নি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন কয়েক পরেই টলিউডের এই সুপরিচিত অভিনেত্রীকে যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রীর পদে নিয়োগ করেন খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই একটি ঘটনাই প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট যে, তৃণমূলে সায়নীর প্রভাব কতটা গভীর। কিন্তু সায়নীকে ঘিরে তদন্তের গতিপ্রকৃতির দিকেও কড়া নজর রাখছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে কুন্তলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে যত সাফাই-ই সায়নী দিন না কেন, তাঁকে এখন‌ই ‘ক্লিনচিট’ দিতে নারাজ ইডির আধিকারিকেরা। বরং যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রীর নতুন কেনা দুটি ফ্ল্যাট ঘিরে কিছুতেই সন্দেহ দূর হচ্ছে না তদন্তকারীদের। এই পরিস্থিতিতে সায়নী ঘোষ শেষ পর্যন্ত ফেঁসে গেলে দল যাতে দায় ঝেড়ে ফেলতে পারে, সেই রাস্তা এখন থেকেই তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব তৈরি রাখছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

গল্ফগ্রিনের দুটি ফ্ল্যাট ঘিরে যত রহস্য

গল্ফগ্রিন এলাকায় সায়নী ঘোষের কেনা দুটি ফ্ল্যাটের একটির দাম ৩৫ লক্ষ টাকা। অপরটির দাম ৮০ লক্ষ। ইডির আধিকারিকদের প্রশ্নের জবাবে সায়নী জানিয়েছেন, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ৬০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছি, সাথে নিজের সেভিংস ও পরিবারের টাকাও ছিল। সত্যতা যাচাই করতে সায়নী ঘোষের ব্যাঙ্ক লোনের নথি এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দেখতে চাইছেন তদন্তকারীরা। ৫ জুন এইসব নথি সঙ্গে করে আনতে সায়নীকে নির্দেশ দিয়েছেন ইডির আধিকারিকেরা। সায়নী ঘোষ রাজ্য যুব তৃণমূলের কান্ডারী হ‌ওয়ার পরেই যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক পদে কুন্তল ঘোষের উত্থান। কুন্তল ছিলেন হুগলি জেলার নেতা। কুন্তলের রাজ্য নেতৃত্বে প্রমোশন পাওয়ার পেছনে সায়নীর কোন‌ও ভুমিকা ছিল কিনা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। কুন্তলের রাজনৈতিক উত্থানে সায়নীর কোন‌ও ভূমিকা থাকলে ঠিক কী কারণে কুন্তলকে এতটা ‘ব্যাকআপ ‘ দিলেন সায়নী, তাও খুঁজে দেখা হচ্ছে।

বিপদে পড়লে দল চেনে না

আগামী বুধবারের জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে সায়নী ঘোষের দেওয়া জবাবে ইডির আধিকারিকেরা কতটা সন্তুষ্ট হন, এটাই দেখার। তবে কুন্তল কান্ডে সায়নীর ভূমিকা ইতিমধ্যেই সিবিআই-এর স্ক্যানারেও চলে এসেছে বলে জানা যাচ্ছে। তদন্ত শেষে সায়নী ঘোষের কী পরিণতি হয়, তা সময়‌ই বলবে। তবে তৃণমূল যে সায়নীকে নিয়ে এখন থেকেই যথেষ্ট‌ সাবধানী, তা ঘটনাক্রম থেকেই পরিস্কার।‌দল কার্যত মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর অন্তরালে বসে কী ভাবছেন অভিনেত্রী থেকে রাতারাতি বিরাট নেত্রী বনে যাওয়া সায়নী ঘোষ? ‘বিপদে পড়লে দল চেনে না’- বুঝতে হয়তো‌ বড্ড দেরিই করে ফেললেন সায়নী।

Feature Image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *