ডেস্ক রিপোর্ট: পাঁচ দিন পরেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। ভোট আছে অথচ বীরভূমে কেষ্ট নেই। মানতে কষ্ট হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর। সোমবার দুবরাজপুরের সভায় ভার্চুয়ালি ভাষণ দিতে গিয়ে আক্ষেপ গোপন রাখতে পারলেন না মমতা। বললেন, “আমাদের কেষ্ট আজ নেই!” গরু পাচার মামলায় ফেঁসে প্রায় এক বছর হতে চলল, বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল জেলে। এখন তাঁর ঠাঁই তিহাড় জেলে। কন্যা সুকন্যাকেও একই মামলায় গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। মেয়ের সঙ্গেই তিহাড়ে আছেন কেষ্ট। দিল্লির আদালতে একের পর এক জামিনের আবেদন নাকচ হয়ে ঘরে ফেরা হচ্ছে না অনুব্রত মণ্ডলের। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, তাঁর কেষ্টকে ফাঁসানো হয়েছে।
পঞ্চায়েত ভোটের ময়দানে বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডল না থাকায় রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন- এ’বার বীরভূমে কী হবে? আঠারোতে বীরভূম জেলায় পঞ্চায়েত ভোট করার ল্যাঠা মনোনয়ন পর্বেই চুকিয়ে দিয়েছিলেন দিদির কেষ্ট। বিরোধীদের যাতে কষ্ট করে মনোনয়ন জমা দিতে না হয়, প্রশাসনের সহাযোগিতায় সেই ব্যবস্থা খুব সুন্দরভাবেই করেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই বীরভূম দখল হয়ে গিয়েছিল তৃণমূলের। এ’বারেও গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে বহু আসন বিনা লড়াইয়ে শাসকদল জিতে নিলেও পরিস্থিতি আগের বারের তুলনায় অনেক আলাদা। কেষ্ট হীন বীরভূমে এবারে বিরোধীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভালোই লড়াই দেবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। হয়তো এই কারণেই তাঁর স্নেহের কেষ্টের অভাবটা বুকে বাজছে মমতার।
দিন কয়েক আগে উত্তরবঙ্গে প্রচারে গিয়ে হেলিকপ্টারের জরুরি অবতরণের সময় কোমড়ে চোট পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতায় ফিরেই চিকিৎসকদের পরামর্শে ঘরবন্দী। সোমবার থেকে ভার্চুয়াল মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। প্রথমটাই ফেলেছেন কেষ্টর জেলায়। এদিন বীরভূমের দুবরাজপুরের সারদা ময়দানে নির্বাচনী সভায় দলের হয়ে উপস্থিত ছিলেন ফিরহাদ হাকিম। ববির মোবাইল থেকেই সভায় ভার্চুয়ালি ভাষণ দেন মুখ্যমন্ত্রী। কেষ্টহীন বীরভূমে দল কেমন ফল করবে, এ নিয়ে মমতা যথেষ্ট চিন্তায় বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মমতার ভাষণেও উদ্বেগের ক্ষীণ একটা আভাস ধরা পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ আঘাত পাওয়ায় তাঁর পক্ষে ভোট প্রচারে বীরভূমে আসা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ভোটপর্ব মিটলেই চলে আসবেন। এরপরেই আসে দলের জেলবন্দী জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের কথা। মমতা বলেন, “কেষ্ট আজকে নেই। কিন্তু কেষ্ট আমাদের সবার ঘরের ছেলে। ওকে ইচ্ছে করে ফাঁসানো হয়েছে।”
নিয়োগ সহ নানা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে জেলে যাওয়া বাকি তৃণমূল নেতাদের জন্য মমতাকে এমন আক্ষেপ করতে শোনা যায় না। গ্রেফতার হওয়ার কয়েক দিন পর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো হেভিওয়েট নেতাকেও দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের বেলায় শুরু থেকেই সোচ্চার মুখ্যমন্ত্রী। গ্রেফতার হয়ে প্রায় এক বছর হতে চলল অনুব্রত কারাগারে। তারপরেও দিদির কেষ্ট স্বপদে আসীন। অনুব্রতের অভাবে বীরভূম জেলা তৃণমূল গোষ্ঠীকোন্দলে জেরবার। অনুব্রত বিরোধী কাজল শেখ দলে বড় দায়িত্ব পেয়ে হম্বিতম্বি করছেন বটে, তবে কেষ্টর দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে বীরভূমে তৃণমূলের মাজার জোর যে আগের মতো নেই, তা বিরোধীদের সভার বহর দেখলেই টের পাওয়া যায়।
Feature image is representational.