ব্রাত্যর সঙ্গে বৈঠক‌ই সার, কোনও আশার আলো দেখছেন না চাকরিহারারা

ব্রাত্যর সঙ্গে বৈঠক‌ই সার, কোনও আশার আলো দেখছেন না চাকরিহারারা


কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে এমন ডামাডোলের নজির নেই। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়ে গেছে। শুক্রবার চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। আন্দোলনরত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের হয়ে ১৩ জন প্রতিনিধি বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। বৈঠক শেষে অবশ্য কোনও আশার আলো নিয়ে ফিরছেন না চাকরিচ্যুতরা। চাকরিহারাদের প্রতিনিধিদের রাজ্যের তরফে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন মাত্র ব্রাত্য।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাকরিহারাদের স্বান্তনা দেওয়া ছাড়া এই মুহূর্তে রাজ্যের হাতে ‘অপশন’ আছে সামান্য‌ই। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের ‘গো হারা’ হার হয়েছে। এস‌এসসি-র ২০১৬-র পুরো প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। বিকাশ ভবনের বৈঠকে ব্রাত্য বসু “যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের” প্রতিনিধিদের আশ্বস্ত করেছেন, আগামী ২১ এপ্রিলের মধ্যে যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের ক্ষোভের আঁচ থেকে বাঁচতে ঢপ দিচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী। কেননা, নিয়োগ দুর্নীতি মামলা যখন হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে, তখন থেকেই এস‌এসসি-কে যোগ্য-অযোগ্য পৃথকীকরণের জন্য চাপ দিয়ে আসছে আদালত। এমনকি সুপ্রিম কোর্ট‌ও এক বছর ধরে এস‌এসসি-কে যোগ্য-অযোগ্য প্রমাণ করার সুযোগ দিয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের সামনে যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা তুলে দিতে পারলে আজ এই দিন দেখতে হত না।

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি চাকরিহারাদের অন্যতৈ প্রতিনিধি মেহেবুব মণ্ডল। ছবি: এন‌এনডিসি

বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধিরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ২২ লক্ষ পরীক্ষার্থীর ‘ওএম‌আর’ শিটের প্রতিলিপি বা মিরর ইমেজ‌ও প্রকাশ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে সরকার। ওএম‌আর শিটে ঘাপলা করে অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে প্রথম থেকেই অভিযোগ। এস‌এসসির কাছে ও‌এম‌আর শিটের হার্ডকপি নেই। আদালতকেও সে’কথা জানিয়েছে এস‌এসসি। তাহলে এখন কীভাবে ও‌এম‌আর-এর মিরর ইমেজ‌ প্রকাশ করবে এস‌এসসি? বৈঠকে ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চে’র প্রতিনিধিদের এস‌এসসি-র চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, সিবিআইয়ের কাছে ও‌এম‌আর-এর যে মিরর ইমেজ‌ রয়েছে, সে’সব‌ই সামনে আনবে সরকার। আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চাকরিহারাদের ক্ষোভ প্রশমনে এটাও সরকারের তরফে একটা চাল হতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টের সামনে রিভিউ পিটিশন দায়ের করা ছাড়া রাজ্যের সামনে আর কোনও পথ খোলা নেই। রিভিউ পিটিশন নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে চাকরিহারাদের প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছেন ব্রাত্য বসু। বৈঠক থেকে বেরিয়ে ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চে’র নেতারা বলেন, “সরকারের আশ্বাসে এখন‌ই স্বস্তি পাওয়ার কোন‌ও প্রশ্নই ওঠে না। যে দিন আমরা আইনি লড়াইয়ে জিতব, একমাত্র সে’দিন‌ই প্রকৃত স্বস্তি পাব।” মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতো অধিকাংশ চাকরিহারাই স্কুলে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে যাচ্ছেন না। চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা বুঝে গেছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাঁদের চাকরি খারিজ হয়ে গেছে। বেতন পোর্টালে ২৫,৭৫৩ জন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর নাম উঠলেও এপ্রিল মাসের বেতনের আশ্বাস সরকারের তরফে তাদের দেওয়া হয় নি। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের উপর কোনও ধরণের স্থগিতাদেশ আসার আগেই চাকরিচ্যুতদের বেতন দিলে সরকারকে আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে।

চাকরিহারাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি ব্রাত্য বসু। ছবি: এন‌এনডিসি

বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। ব্রাত্য বলেছেন, “চাকরিহারাদের দাবিগুলির সঙ্গে সরকারের মৌলিক বিরোধ নেই। তবে যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সবার চাকরি গেছে, তাই আইনি পরামর্শ ছাড়া এক পাও এগোনো সম্ভব নয়।” ব্রাত্য বসুর কথাতেই স্পষ্ট, সুপ্রিম কোর্টের রোষানলে পড়তে হয়, এমন রাস্তা থেকে দূরেই থাকবে সরকার।

Feature Image: NNDC


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *