ডিফেন্স ডেস্ক: পঞ্চশীলের দেশ ভারত কখনও পররাজ্য গ্রাস করে না। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, বৈদেশিক আগ্রাসনকারীদের হাতে বহুবার আক্রান্ত হয়েছে হিন্দুস্তান। তবে এখন ভারতবর্ষের দিকে কুনজর দেওয়ার আগে একশবার ভাবতে হবে বহিঃশত্রুদের। ৭৫ বছরে পা দেওয়া ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের জন্য গৌরবের বার্তা হল, পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম সামরিক শক্তির খেতাব ছিনিয়ে নিয়েছি আমরা। দেশের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষার সত্যিই কোনও বিকল্প নেই।
প্রতিরক্ষা খাতে ভারত বছরে খরচ করে ৭৪ বিলিয়ন ডলার। আর্মি, নেভি ও এয়ারফোর্স- তিন বাহিনী মিলিয়ে ভারতের মোট মিলিটারির সংখ্যা ৫১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫৫০। আধুনিক যুগে প্রযুক্তিই যুদ্ধের সবথেকে বড় হাতিয়ার। সামরিক প্রযুক্তিতে যেই দেশ যত এগিয়ে সেই দেশ তত বেশি সুরক্ষিত ও যুদ্ধে অপরাজেয়। যুদ্ধ এখন দূর নিয়ন্ত্রিত। দূর নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধের সবথেকে বড় হাতিয়ার মিসাইল ও ড্রোন। ভারতের মিসাইল ভান্ডার শত্রুর পিলে চমকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
‘স্ক্র্যামজেট’ ইঞ্জিনের স্থল পরীক্ষা সফল হয়েছে
শব্দের চেয়েও পাঁচ গুণ বেশি জোরে ছুটতে পারে ‘হাইপারসনিক মিসাইল’। আমেরিকা, রাশিয়া ও চিনের পর পৃথিবীতে ভারতই চতুর্থ দেশ, যার অস্ত্র ভান্ডারে খুব শীঘ্রই হাইপারসনিক মিসাইল যুক্ত হতে চলেছে। ২০২৪-এর ১৬-ই নভেম্বরের পর ২০২৫-এর একুশে জানুয়ারি- ডিআরডিও-র তরফে হাইপারসনিক মিসাইলের সফল উৎক্ষেপণ ও স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিনের সফল পরীক্ষা নিঃসন্দেহে ভারতের শত্রুদের ঘুম উড়িয়ে দেবে।
২০২৫-এর ২১ জানুয়ারি স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিনের ‘গ্রাউন্ড টেস্ট ফায়ারিং’-এ সফল ভারত। হাইপারসনিক স্ক্রুজ মিসাইলের জন্য এই ইঞ্জিন অপরিহার্য। ছবি: সংগৃহীত
সাধারণত দুই ধরণের হাইপারসনিক মিসাইল ব্যবহার করা হয়। একটি ‘হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকলস’, আরেকটি ‘হাইপারসনিক ক্রুজ মিসাইল’।যে কোনও হাইপারসনিক ক্রুজ মিসাইলকে চালনা করতে ‘স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিন’ অপরিহার্য। গত ২১ জানুয়ারি হায়দ্রাবাদের ‘ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ল্যাবরেটরি’-তে স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিনের গ্রাউন্ড টেস্ট ফায়ারিং সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমবারের মতো স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিনের ‘গ্রাউন্ড টেস্ট’ করল ভারত। ১২০ সেকেন্ডের জন্য স্ক্র্যামজেট কম্বাস্টারটিকে চালু করেছিলেন ডিআরডিও-র বিজ্ঞানীরা। পারমাণবিক বোমার প্রযুক্তির মতোই হাইপারসনিক মিসাইলের প্রযুক্তি কেউ কাউকে দেয় না। সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিন নির্মাণ করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা।
‘হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকলস’ উৎক্ষেপণেও কামিয়াব ভারত
এর আগে ২০২৪-এর ১৬-ই নভেম্বর ওড়িশার এপিজে আব্দুল কালাম দ্বীপ থেকে ‘হাইপারসনিক’ বা শব্দভেদী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ সেরে ফেলেছে ভারত। গঠনগত ভাবে যা ‘হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকলস’ ছিল বলে জানা গেছে। লঞ্চিং প্যাড থেকে রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণের পর ‘হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকলস’ অ্যারোডায়নামিক লিফ্ট ব্যবহার করে প্রচন্ড গতিতে লক্ষ্যবস্তুর দিকে ছুটে যায়।
সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে লং রেঞ্জ হাইপারসনিক মিসাইল নির্মাণে সক্ষম ভারত। ২০২৪-এর ১৬ নভেম্বর হাইপারসনিক মিসাইল উৎক্ষেপণের পরীক্ষায় সফল হয়েছে ডিআরডিও। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের তৈরি এই লং রেঞ্জ হাইপারসনিক মিসাইল ৪৮০ কেজি বিস্ফোরক বহন করতে পারে এবং ঘন্টায় কমপক্ষে পাঁচ হাজার চারশো কিলোমিটার বেগে ১,৫০০ কিলোমিটার দূরের যে কোনও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। পরমাণু বা প্রথাগত- যে কোনও ধরণের বিস্ফোরক বহন করার সক্ষমতা রয়েছে এই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের। স্থল, জল এমনকি আকাশ থেকেও একে শত্রুর ঠিকানায় পাঠানো সম্ভব। যে কোনও হাইপারসনিক মিসাইলের সবথেকে বড় সুবিধা হল, শত্রুর রাডারকে ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করতে এর জবাব নেই।
হাইপারসনিক মিসাইল পাতালেও চালায় ধ্বংসলীলা
‘গাইডেড মিসাইল’ হওয়ার কারণে এই ধরণের মারণাস্ত্র আকাশে উড়তে উড়তেই প্রয়োজন অনুসারে দিক পরিবর্তন করতে পারে। সাপের মতো এঁকেবেঁকে উড়ার ক্ষমতাও এই মিসাইল রাখে। ”টার্গেট সিকিং ডিভাইস’ বা ‘লক্ষ্য-সন্ধানকারী যন্ত্র’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় হাইপারসনিক মিসাইলের নিশানা প্রায় নির্ভুল। ভূতলে থাকা যে কোনও পরিকাঠামো তো বটেই এমনকি ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারও মুহূর্তে ধূলিসাৎ করে দিতে পারে হাইপারসনিক মিসাইল। সমুদ্রে ভাসমান শত্রু দেশের বড় বড় জাহাজ চোখের পলকে ধ্বংস হয়ে যায় এই মিসাইলের আঘাতে।
১২ টি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের হাইপারসনিক মিসাইল নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন ডিআরডিও-র বিজ্ঞানীরা। ভবিষ্যতে একটির পর একটির সফল উৎক্ষেপণ হবে বলে আমরা আশা করি। কাউকে আগ বাড়িয়ে আক্রমণ নয় কিন্তু আত্মরক্ষার স্বার্থে নিজের অস্ত্র ভান্ডারে ভয়ঙ্কর সব ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ মজুত রাখতে ভারত সংকল্পবদ্ধ। এই ভারতকে আঘাত করার আগে শত্রুর বুকে কাঁপন না ধরে কি পারে!