ডেস্ক রিপোর্ট: রাজ্যের প্রাইভেট সেক্টরের ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ চাকরি স্থানীয়দের জন্য সংরক্ষিত করতে আইন আনতে চলেছে কর্নাটকের কংগ্রেস শাসিত সরকার। খসড়া বিল (স্টেট এমপ্লয়মেন্ট অফ লোকাল ক্যান্ডিডেটস ইন ইন্ডাস্ট্রিজ, ফ্যাক্টরিজ অ্যান্ড আদার এস্টাব্লিশমেন্টস বিল) ক্যাবিনেটে পাশ হয়ে গেছে। বিলটি আইনে পরিণত হলে কর্নাটকের যে কোনও বেসরকারি ক্ষেত্রের ম্যানেজমেন্ট স্তরে ৫০ শতাংশ ও নন-ম্যানেজমেন্ট স্তরে ৭৫ শতাংশ চাকরি কন্নড় ভাষাভাষীদের জন্য সংরক্ষণ করা বাধ্যতামূলক। বিলটিতে তথ্যপ্রযুক্তি সহ যাবতীয় বেসরকারি ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সংরক্ষণের নির্দেশ না মানলে শাস্তির খাঁড়া
ক্যাবিনেটে বিলটি অনুমোদিত হওয়ার খবরটি রীতিমতো উচ্ছ্বাসের সঙ্গে এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন কর্নাটকের কংগ্রেস সরকারের শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ লাদ। এক্স হ্যান্ডেলে সন্তোষ জানিয়েছেন, “আপনাদের সবার সঙ্গে এটা ভাগাভাগি করে নিতে পেরে খুশি যে, কর্নাটকে বেসরকারি ক্ষেত্রের চাকরিতে কন্নড়দের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে বিল ক্যাবিনেটের বৈঠকে পাশ হয়েছে। বিলটি কার্যকর হয়ে যাওয়ার পরে কন্নড়রা রাজ্যের বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরিতে ৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ সংরক্ষণ পাবে।”
চাকরিতে কন্নড়দের অগ্রাধিকার দেওয়া না হলে বেসরকারি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে শাস্তিরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বিলে। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান সরকারি নির্দেশ মানবে না, তাদের উপর ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা ধার্য করা যাবে। কোনও সংস্থার বিরুদ্ধে সংরক্ষণ আইন ধারাবাহিকভাবে অগ্রাহ্য করার অভিযোগ উঠলে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার সংস্থান রাখা হয়েছে বিলটিতে। কর্নাটক রাজ্য বিধানসভার চলতি অধিবেশনেই বিলটি পেশ করা হবে জানা গেছে।
কমপক্ষে ১৫ বছর কর্নাটকে বাস করতে হবে
স্থানীয় প্রার্থী হিসেবে কারা সংরক্ষণের জন্য বিবেচিত হবেন, খসড়া বিলে তাও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। বিলটিতে বলা হয়েছে, কন্নড় ভাষা বলতে পারাটাই কর্নাটকের স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার যথেষ্ট প্রমাণ নয়। কোনও চাকরিপ্রার্থীকে স্থানীয় মানুষ হিসেবে সংরক্ষণের অধিকার পেতে হলে তাকে আগে কমপক্ষে ১৫ বছর কর্নাটকে বাস করার প্রমাণ দাখিল করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মুখোমুখি হয়ে একটি পরীক্ষায় বসে সেটায় উতরোতে হবে। কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়ের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাতে পারবে বলে বিলটিতে সংস্থান রাখা হয়েছে। সে’ক্ষেত্রে সরকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে কিছু ছাড় দিতে পারে বলে খসড়া বিলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কর্নাটকের বেসরকারি ক্ষেত্রের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সমস্ত চাকরিতে যাতে শুধু কন্নড়রাই নিয়োগ পায়, সেই ব্যবস্থা বিলে রাখা হয়েছে।
বিল নিয়ে কর্পোরেট সেক্টরের তীব্র অসন্তোষ
একুশের মে মাসে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে কর্নাটকের ক্ষমতা দখল করে কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হন সিদ্দারামাইয়া। গত ফেব্রুয়ারিতে বিধানসভায় রাজ্যের কন্নড় ভাষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রী শিবরাজ এস তনগাদাগি বলেছিলেন, রাজ্যে কাজ করা সমস্ত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে তাদের প্রতিষ্ঠানে কতজন কন্নড়ভাষী মানুষ কাজ করেন, সেই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য নোটিশ বোর্ডে উল্লেখ করতে হবে। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান এই নির্দেশ অগ্রাহ্য করবে তাদের অনুমোদন প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মন্ত্রী। সে’সময় শিবরাজ এস তনগাদাগির কথায় কর্নাটকের কর্পোরেট সেক্টরের কর্ণধারদের মধ্যে চাঞ্চল্য তৈরি হলে রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমার তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, “বেঙ্গালুরু একটি গ্লোবাল সিটি। এখানে এই ধরণের পদক্ষেপ করার কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই।”
তখন শিবকুমার আশ্বাস দিলেও কর্নাটকের কংগ্রেস শাসিত সরকার শেষ পর্যন্ত এমন একটি বিল পাশ করেছে, যা আইনে পরিণত হলে উগ্র প্রাদেশিকতাকে ইন্ধন জোগাবে। কংগ্রেসের মতো জাতীয় দল কীভাবে আঞ্চলিকতা দোষে দুষ্ট এমন একটি বিল আনতে পারে, এই প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। কর্নাটকের ক্যাবিনেটে কন্নড়দের জন্য সংরক্ষণ বিল পাশ হওয়ার খবরে তীব্র অসন্তোষ ব্যক্ত করেছে বেঙ্গালুরুর কর্পোরেট মহল। বিলটিকে বৈষম্যমূলক, বিনিয়োগ বিরোধী ও আবর্জনা বলে উল্লেখ করেছেন দেশের শিল্পপতিরা।
Feature graphic is representational and designed by NNDC.