বেসরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ বিল: কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার আগুন নিয়ে খেলছে

বেসরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ বিল: কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার আগুন নিয়ে খেলছে


কর্নাটকে কংগ্রেস সরকার রাজনৈতিক স্বার্থে আগুন নিয়ে খেলা শুরু করেছে। রাজ্যের বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরিতে কন্নড়দের জন্য সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে ক্যাবিনেটে বিল পাশ করেছে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়ার সরকার।‌ বিলটিকে আইনে পরিণত করতে বিধানসভার চলতি অধিবেশনেই পেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্নাটক সরকার। যে আইন করতে চাইছে কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার, তা এক কথায় ভয়ঙ্কর। বেসরকারি ক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্ট স্তরের ৫০ শতাংশ পদ এবং নন ম্যানেজমেন্ট স্তরের ৭৫ শতাংশ পদ শুধুই কন্নড়দের জন্য সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে বিলে। শুধু তাই নয়, যে কোনও বেসরকারি ক্ষেত্রের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিতে কন্নড়দের জন্য একশ শতাংশ সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে চাইছে কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার। খসড়া বিলটিতে তথ্যপ্রযুক্তি সহ যাবতীয় ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

কর্নাটকের মতো বিনিয়োগ বান্ধব রাজ্যে এমন বৈষম্যমূলক ও সংবিধান বিরোধী বিল আনার কথা শুনে স্বাভাবিকভাবেই শঙ্কিত সেখানকার ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা। যে কোনও বেসরকারি ক্ষেত্রের নিয়োগকর্তারা চাকরি দেওয়ার সময় চাকরিপ্রার্থীর দক্ষতা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেন, তার জাতিগত পরিচয়কে নয়। ভারতের তথ্য ও প্রযুক্তি শিল্পের অন্যতম ‘হাব’ হিসেবে বেঙ্গালুরুর আজকে যে পরিচিতি, তার পেছনে শুধু কন্নড়দের‌ই অবদান আছে, তেমন নয়। বরং দেশের সমস্ত প্রদেশ থেকে মেধাবী ছেলেমেয়েরা যোগ্যতার জোরে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়ে নিজেদের সেরাটা দিয়ে বেঙ্গালুরুর তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পকে উন্নতির শিখরে নিয়ে গেছেন।

ভারতের তথ্য-প্রযুক্তি রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশ‌ই বেঙ্গালুরু থেকে হয়। বেঙ্গালুরুতে আছে ৭৯টি আইটি পার্ক ও ৩,৫০০টি আইটি কোম্পানির দফতর। শুধু বেঙ্গালুরুর তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পকে কেন্দ্র করেই ২৪৫ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হচ্ছে। বেসরকারি ক্ষেত্রের চাকরিতে কন্নড়দের জন্য সংরক্ষণের বিলকে বৈষম্যমূলক ও বিনিয়োগ বিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন কর্নাটকের উদ্যোগী মহল। কংগ্রেস সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে বায়োকন গোষ্ঠীর কর্ণধার কিরণ মজুমদার শ এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “একটি টেক হাবের জন্য আমাদের প্রয়োজন দক্ষ ও মেধাবীদের। স্থানীয়দের চাকরির ব্যবস্থা করতে গিয়ে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আমরা আমাদের শীর্ষ স্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দিতে পারি না। যে নিয়োগগুলিতে অত্যন্ত দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন, সেই সমস্ত নিয়োগ এই নীতির বাইরে রাখতে হবে।”

ভারতের সংবিধান অনুযায়ী এক প্রদেশের মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য আরেক প্রদেশে থিতু হতেই পারেন। পশ্চিমবঙ্গেও ভিন রাজ্যের অসংখ্য মানুষের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়। পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ মানুষ‌ও ভিন রাজ্যে কাজ করেন। কর্নাটকের দেখাদেখি অন্যান্য রাজ্য‌ও যদি এই ধরণের প্রাদেশিকতা দোষে দুষ্ট আইন আনতে শুরু করে, তবে দেশের পরিস্থিতি কী হবে! কোনও সন্দেহ নেই, দেশের বাকি রাজ্যগুলিতে প্রাদেশিকতার আগুন উষ্কে দেওয়ার মতো কাজ করল কর্নাটক সরকার। কর্নাটকে কোন‌ও‌ আঞ্চলিক দল ক্ষমতায় নেই। কংগ্রেসের মতো জাতীয় দলের সরকার যে আঞ্চলিক স্বার্থে এতটা নিচে নামতে পারে, তা দেখে আমরা সবাই বিস্মিত।

শিল্প ও বানিজ্য মহলের আপত্তি অগ্রাহ্য করে সিদ্ধারামাইয়া সরকার বেসরকারি ক্ষেত্রের চাকরিতে সংরক্ষণের প্রশ্নে অনড় অবস্থানে থাকলে আখেরে ক্ষতি কর্নাটকের‌‌ই হবে। দীর্ঘ দিন ধরেই কর্নাটক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পছন্দের গন্তব্যগুলির একটি। আহাম্মক না হলে এই সুখ্যাতি কেউ যেচে নষ্ট করে!

Feature image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *