কলকাতা: সাত দফার লোকসভা নির্বাচন পর্ব শেষ হওয়ার পথে। শনিবার (১ জুন) সপ্তম তথা শেষ দফার ভোট। রাজ্যে নয়টি লোকসভা কেন্দ্রের পাশাপাশি বরাহনগর বিধানসভার ভোটও নেওয়া হবে সে’দিন। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে বিধায়ক পদ থেকে তাপস রায় ইস্তফা দেওয়ায় বরাহনগরে উপনির্বাচন হচ্ছে। দমদম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই বিধানসভায় বিজেপির প্রার্থী সজল ঘোষ। কলকাতার গেরুয়া ব্রিগেডের ‘তরুণ তুর্কি’ নেতা সজলকে মোকাবিলা করতে টলিউড নায়িকা সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বরাহনগরে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন মমতা। বৃহস্পতিবার প্রচারের শেষ দিনে সজল ঘোষের হুঙ্কার, “ভোটের দিন ভোট হবে। আর যারা ভোটকে নষ্ট করতে চাইবে; তাদেরকে চড়াম চড়াম থেকে গুড়-বাতাসা, নকুলদানা- যখন যেটা প্রয়োজন, দেওয়া হবে।”
সজলের এহেন উবাচে অনুব্রত মণ্ডলের কথা মনে পড়লেও তিনি যে কেষ্টর মতো ছাপ্পাবাজ নন, তা সাংবাদিকদের সামনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন বরাহনগরের বিজেপি প্রার্থী। বীরভূমে প্রত্যেক ভোটের আগে বিরোধীদের চড়াম চড়াম, গুড়-বাতাসা, নকুলদানার দাওয়াই দেওয়ার হুমকি দিতেন অনুব্রত। কেষ্ট বাহিনীর অত্যাচারে বীরভূমের অনেক বুথে এজেন্ট পর্যন্ত দিতে পারত না বিরোধীরা। গরু পাচার মামলায় ধৃত অনুব্রতের এখন দিন কাটছে তিহাড় জেলে। বরাহনগরে তৃণমূলের অনুব্রত মডেলকে প্রতিরোধ করতেই চড়াম চড়ামের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সজল ঘোষ।
২০২২-এর ডিসেম্বরে কলকাতা পুরসভার ভোটে চরম প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও ৫০ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া সজল ঘোষ এখন রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখ। দল টিকিট দেওয়ার পর থেকেই বরাহনগরের মাটি কামড়ে পড়ে আছেন সজল। শুধু নিজের জিতই নয় বরাহনগর থেকে দমদম লোকসভার বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্তকে বড় মার্জিনে লিড পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারেও আত্মবিশ্বাসী সজল ঘোষ। ইলেকশন ম্যানেজমেন্টে দক্ষ সজলের এখন একটাই লক্ষ্য শনিবার ভোটটা ঠিকমতো করানো। ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হলে শুধু জয়ের ব্যবধান নিয়ে বরাহনগরের বিজেপি প্রার্থীর চিন্তা। তবে বরাহনগরের মানুষকে ভোট দিতে বাধা দিলে মানুষই ছাপ্পা-সন্ত্রাসীদের উচিত শিক্ষা দেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন সজল ঘোষ।
সজল ঘোষ বলেছেন, “ভোটের দিন ভোট হবে। আর যারা ভোটকে নষ্ট করতে চাইবে, তাদেরকে ওই চড়াম চড়াম, গুড়-বাতাসা- যা যা দেওয়ার দেওয়া হবে। ছেড়ে দেবো না।” ভোটে ছাপ্পা ঠেকাতে জনগণ প্রস্তুত বলে জানান তিনি। বরাহনগরের বিজেপি প্রার্থী বলেন, “আমি রেডি না। আমার এলাকার জনগণ রেডি হয়ে আছে। ওরা যে ভাষায় বলবে, আমি সেই ভাষায় উত্তর দেবো। কোথাও চড়াম চড়াম দরকার হলে চড়াম চড়াম। কোথাও নকুলদানা দরকার হলে নকুলদানা। কোথাও গুড়-বাতাসা দিতে হলে গুড়-বাতাসা। যাকে যেটা দেওয়ার সেটাই দেওয়া হবে।” সাংবাদিকদের সজল ঘোষ সাফ জানিয়েছেন, “আমি চাই ভোট হোক অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক।” তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে চান। এখানে হাত পড়লে মানুষ সহ্য করবে না। চড়াম চড়াম, নকুলদানা, গুড়-বাতাসা- কোনওটাই আমি দেবো না। দেবে মানুষ। আমি মানুষের দলে থাকব শুধু।”
শুধু নিজের জয়ের ব্যাপারেই নয় বরাহনগর থেকে দমদম লোকসভার বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্তকে বড় মার্জিনে লিড পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারেও আত্মবিশ্বাসী সজল ঘোষ।
শেষ দফার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অভাব নেই। বুথ তারাই সামলাবে। তবে রাজ্য পুলিশের উপর আস্থা রাখতে পারছেন না বিরোধীরা। মানুষ বুথ পর্যন্ত পৌঁছেতে পারলে অবাধেই নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। তবে রাস্তায় ভোটারদের বাধা দেওয়া হলে পুলিশ যদি ভোটারদের পাশে না দাঁড়িয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে, তখন গণ প্রতিরোধ ছাড়া উপায় নেই। নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর ভরসা রাখলেও প্রয়োজনে জনগণই নিজেদের অধিকার বুঝে নেবেন বলে মনে করছেন সজল ঘোষ।