কলকাতা: প্রচারে গিয়ে নিজের দলেরই তফসিলি সম্প্রদায়ের মহিলা বিধায়ককে রীতিমতো শাসানি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলামের সমর্থনে উত্তর চব্বিশ পরগনার হাড়োয়ায় সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সভায় মিনাখাঁর বিধায়ক ঊষারানি মন্ডলকে দেখতে না পেয়ে মেজাজ হারান মমতা। ঊষারানি ও তাঁর স্বামী মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন বলে মঞ্চ থেকে অভিযোগ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। প্রকাশ্যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে মাইক হাতে যে ভাষায় মমতা নিজের দলের এসসি সম্প্রদায়ের মহিলা বিধায়ককে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাতে সপ্তম তথা শেষ দফা ভোটের আগে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য পড়ে গেছে।
সভায় বিধায়ক ঊষারানি মন্ডল গরহাজির দেখে মমতা বলেন, “হাড়োয়া এবং এই মিনাখাঁয় দলই আসল। ব্যক্তি আসল নয়। তৃণমূল কংগ্রেসের এমএলএ থাকবেন, আর মিটিংয়ে আসবেন না, মনে রাখবেন, তাঁর সাথে দলের কোনও সম্পর্ক থাকবে না। আমি আজই বলে গেলাম, আপনাকে নিয়ে দল চলবে না।” হাড়োয়ার সভা মঞ্চ থেকে ঊষারানিকে অপমান করে দল থেকে একপ্রকার তাড়িয়েই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের উদ্দেশে মমতা বলেন, “দলে যাঁরা আছেন, সংগঠনে যাঁরা আছেন, তাঁরা দেখে নেবেন, যতক্ষণ সে ক্ষমা না চাইবে, পায়ে না ধরবে, ততক্ষণ ঊষারানি মন্ডলকে আমরা মানি না। মানব না। মানব না।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্দেহ, মিনাখাঁর তৃণমূল বিধায়ক ঊষারানি ও তাঁর স্বামী মৃত্যুঞ্জয় বিজেপির সাথে আঁতাত করে বসিরহাটে দলের প্রার্থীকে ডোবাচ্ছেন। ক্ষুব্ধ মমতা বলেন, “যাঁরা বিজেপির সাথে আঁতাত করে, তাঁর সাথে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁর সাথে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূল নেতা তৈরি করে। একজন চলে যায়। কোটি লোক জন্মায়। আপনাদের মতো লোক চাই না।” ঊষারানিকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন “আপনি আর আপনার স্বামী দলটাকে বেচে দেবেন! আর মনে করেন আমরা সেটাকে সমর্থন করব? না!”
সব দলের ভেতরেই ক্ষোভ অসন্তোষ থাকে। মিনাখাঁর বিধায়কের সঙ্গেও দলীয় নেতৃত্বের যে কোনও কারণে দূরত্ব তৈরি হতেই পারে। কিন্তু প্রকাশ্য জনসভায় দাঁড়িয়ে নিজের দলের বিধায়ককে দলের সুপ্রিমোর এমন দাবড়ানি রাজ্যে নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। ঊষারানি মন্ডল অনগ্রসর তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষ। বসিরহাট লোকসভার অন্তর্গত সন্দেশখালিতে এসসি-এসটি সম্প্রদায়ের নারীদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের দলবলের বিরুদ্ধে। বসিরহাটের ভোটে সন্দেশখালির নারী নির্যাতনের ঘটনা বড় ইস্যু। ঘটনার জেরে ক্ষুব্ধ বসিরহাটের এসসি-এসটি সম্প্রদায়ের ভোট তৃণমূলের দিক থেকে সরে যেতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
এই পরিস্থিতিতে মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজের দলের এসসি মহিলা বিধায়ককে মমতার শাসানি বসিরহাটের এসসি-এসটি ভোটারদের দল থেকে আরও দূরে সরিয়ে দেয় কিনা তৃণমূলের ভেতরেই তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই আবার বলছেন, বসিরহাটের সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে মমতা এতটাই নিশ্চিত যে তফসিলি জাতি-উপজাতিদের ভোট নিয়ে তিনি মাথা ঘামাচ্ছেন না।
Feature graphic is representational and designed by NNDC.