পলিটিক্যাল ডেস্ক: রাহুল গান্ধীর ন্যায় যাত্রা বাংলায় ঢোকার পর থেকেই পদে পদে বাধা সৃষ্টি করছে প্রশাসন, এমনটাই অভিযোগ প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের। তবে এই নিয়ে অধীর চৌধুরী যতটা সরব ততটাই নীরব এআইসিসি। বুধবার বিহারের কাটিহার থেকে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে ন্যায় যাত্রার কনভয় ঢুকতেই রাহুলের গাড়ির কাচ ঢিল মেরে ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। হরিশ্চন্দ্রপুর থানার দেওয়ানগঞ্জে রাহুলের যাত্রাপথে বহু মানুষের সমাগম হয়। জনতার ভিড়ে গাড়ি বহর স্থবির হয়ে যায়। রাহুল গান্ধী যে কালো রঙের গাড়িতে ছিলেন, হঠাৎই তার পেছনের কাচ ভেঙে যায়। ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে অধীরের ইঙ্গিত খুব স্পষ্ট।
ভিড়ের চাপে নয়, ইট মেরেই রাহুলের গাড়ির কাচ ভাঙা হয়েছে বলে দাবি করেছেন অধীর চৌধুরী। অধীরের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, “বুঝে নিন কে ভাঙতে পারে?” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অন্যতম শরিক। কিন্তু ন্যায় যাত্রা নিয়ে তাঁর প্রশাসন যে কংগ্রেসের সঙ্গে অসহযোগিতা করছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে চিঠি দিয়ে রাহুল গান্ধীর সভায় উপস্থিত থাকতে মমতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমন্ত্রণ গ্রহণ দূরে থাক, রাহুল যাতে রাজ্যের উপর দিয়ে নির্বিঘ্নে ন্যায় যাত্রা না করতে পারেন, মমতার প্রশাসন তার সব রকম ব্যবস্থা করে রেখেছে। অধীর চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, “ন্যায় যাত্রা কোচবিহারে ঢোকার পর থেকেই প্রশাসনের অসহযোগিতা শুরু হয়েছে। যত রকম ভাবে বিরোধিতা করা যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করছেন।”
রাহুল গান্ধীর ন্যায় যাত্রা পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার পরেই তৃণমূল সুপ্রিমো জানিয়ে দেন, লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে একাই লড়ছে দল। কংগ্রেস ও তৃণমূলে আসন সমঝোতা প্রায় ভেস্তে গেছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কেন ভেস্তে গেল, এই নিয়ে নানা গুঞ্জন। তৃণমূলের দিক থেকে অভিযোগ, প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব বিশেষ করে অধীর চৌধুরীর অনমনীয় মনোভাবের কারণেই আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা ভেস্তে গেছে। রাহুল গান্ধী তৃণমূলের কাছে ৮টি আসন দাবি করেছিলেন বলে খবর। কিন্তু মমতা দুই-তিনের বেশি আসন কংগ্রেসকে ছাড়তে নারাজ। মমতার প্রস্তাব মেনে নিলে প্রদেশ কংগ্রেসের কাছে মান-সম্মান বল কিছু থাকে না। তাই রাহুল-সোনিয়া আসন সমঝোতা নিয়ে আর উচ্চবাচ্য না করে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে বামেদের সঙ্গে নিয়ে চলার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
যদিও কংগ্রেসের ভেতরের খবর, এখনও মমতার সঙ্গে সমঝোতার আশা ছাড়েন নি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একটি অংশ। অধীর চৌধুরীরা মমতার দেওয়া রফাসূত্রের তীব্র বিরোধিতা না করলে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব দুই-তিন আসনের বিনিময়েই তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতায় রাজি হয়ে যেতেন বলে বাজারে কথা রটেছে। এই কারণেই মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে রাহুল গান্ধীর গাড়ির কাচ ভাঙার মতো ঘটনা ঘটলেও এআইসিসি চুপচাপ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। রাহুলের গাড়ির কাচ ভাঙা নিয়ে সরব অধীরের অভিযোগের আঙুল যেখানে তৃণমূলের দিকে, সেখানে ঘটনার পর আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রসঙ্গে উত্থাপিত প্রশ্ন কৌশলে এড়িয়ে গেছেন কংগ্রেসের অন্যতম জাতীয় মুখপাত্র জয়রাম রমেশ ও আরেক নেতা কানহাইয়া কুমার।
অধীর চৌধুরীরা চাইলেও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চটানোর মুডে নেই, ঘটনাপ্রবাহেই তা স্পষ্ট। বাংলায় রাহুলের ন্যায় যাত্রা নমঃ নমঃ করে। যাত্রাপথের কোথাও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করছেন না রাহুল। অবশ্য তারপরেও ন্যায় যাত্রায় প্রশাসনের তরফে অসহযোগিতা বন্ধ নেই। কোথাও রাহুলের সভার জন্য মাঠ পাচ্ছে না প্রদেশ কংগ্রেস। পুলিশের কাছ থেকে শোভাযাত্রার অনুমতি মিলছে না। এমনকি বাইরে থেকে আসা কংগ্রেসের নেতাকর্মীরা রাত্রিযাপনের মতো অতিথিশালাও পাচ্ছেন না। নানা অনুষ্ঠানের অজুহাতে প্রশাসনের তরফে অতিথিশালাগুলি আগে থেকেই নিয়ে রাখা হয়েছে বলে প্রদেশ কংগ্রেসের অভিযোগ।
রাহুল গান্ধী যখন ন্যায় যাত্রা নিয়ে উত্তরবঙ্গে ঠিক তার আগেপিছে একাধিক সরকারি কর্মসূচিতে উত্তরবঙ্গ সফরে মুখ্যমন্ত্রী। রাহুলের যাত্রার মধ্যেই মমতার উত্তরবঙ্গ সফরের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজনৈতিক মহল। রাহুল গান্ধীর কর্মসূচি চলাকালে প্রশাসনকে ব্যস্ত রাখার পাশাপাশি মিডিয়ার প্রচারে ভাগ বসাতেই কি মমতার এই পদক্ষেপ? মালদহে ন্যায় যাত্রার প্রস্তুতিতে কংগ্রেসকে পুলিশ পদে পদে বাধা দিচ্ছে বলে অধীর চৌধুরীর অভিযোগ। ন্যায় যাত্রায় বিঘ্ন ঘটাতে প্রশাসনের পাশাপাশি মমতা দলকেও নামিয়ে দিয়েছেন বলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মনে করছেন। বহু জায়গায় ন্যায় যাত্রা উপলক্ষে টাঙানো কংগ্রেসের ফ্লেক্স, ব্যানার, পোস্টার ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে বলে অধীর অভিযোগ করেছেন।
তবে, অধীর যতই মমতার বিরুদ্ধে মুখর হন না কেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মৌন। তৃণমূলকে নিয়ে সত্যিই বেজায় টানাপোড়েনে কংগ্রেস।
Feature graphic is representational and created by NNDC.