বাংলায় জোট ভেস্তে যাওয়ার পথে, স্বস্তিতে অধীর-মমতা দু'জনেই

বাংলায় জোট ভেস্তে যাওয়ার পথে, স্বস্তিতে অধীর-মমতা দু’জনেই


অধীর চৌধুরী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি থাকলে তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতার কাজটি যে সহজ হবে না, তা অধীরের দলের দিল্লির নেতারাও বিলক্ষণ জানেন। তৃণমূলের সঙ্গে জোটের রাস্তা মসৃণ করতে অধীরকে প্রদেশ সভাপতির পদ থেকে অপসারণের একটা পরিকল্পনাও কংগ্রেস হাইকমান্ড নিয়েছিল। কেন সেই পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হল না, তা স্পষ্ট নয়। এখন বাংলায় কংগ্রেসের যা অবস্থা, তাতে অধীর বাদে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কোন‌ও মুখ নেই। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গে দল থাকল না গেল, তা নিয়ে দিল্লির কংগ্রেস নেতাদের খুব মাথাব্যথা আছে, তা আজ পর্যন্ত প্রমাণিত হয় নি। বাংলায় দলের কথা ভেবে নাকি অধীরকে প্রদেশ সভাপতি থেকে সরিয়ে মমতার সঙ্গে আসন সমঝোতা করলে অধীরকেই আর দলে রাখা যাবে না, এই আশঙ্কায় রাহুল-সোনিয়া পিছিয়ে আসেন, তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে।

তাঁর আপত্তি অগ্রাহ্য করে দল শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতায় গেলে অধীর চৌধুরী কংগ্রেস পর্যন্ত ত্যাগ করতে পারেন, এমন গুঞ্জন রাজনৈতিক মহলে ছিল এবং আছে। আবার এমন গুঞ্জন‌ও কংগ্রেস ও তৃণমূলের অন্দরে আছে যে দুই দলে সমঝোতা হলেও বহরমপুর থেকে অধীর চৌধুরীকে কিছুতেই জিততে দেবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছাত্র জীবনে নকশাল ও পরে কিছুদিন আর‌এসপি করলেও কংগ্রেসে যোগদানের পর আর কখনও দল বদলান নি অধীর। বরং মুর্শিদাবাদের মতো শক্তিশালী বাম ঘাঁটিকে কংগ্রেসের দুর্গ বানানোর পেছনে অধীর চৌধুরীর বড় অবদান আছে। ১৯৯১ সালে মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়িয়ে সামান্য ভোটে হেরেছিলেন অধীর। এর পর থেকে এখনও পর্যন্ত কোন‌ও ভোটে পরাজয়ের মুখ দেখেন নি তিনি। ১৯৯৯ থেকে টানা বহরমপুরের সাংসদ। বাম আমলে অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা দিয়েছে পুলিশ। ফেরার থেকে নির্বাচনে লড়েও জিতেছেন। জেলে পর্যন্ত পাঠিয়ে ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার। অধীর চৌধুরী শুধু পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতিই নন, লোকসভায় কংগ্রেসের নেতাও। এ হেন অধীর চৌধুরী মমতার সঙ্গে এক মঞ্চ শেয়ার করার বিড়ম্বনা এড়াতে কংগ্রেস ত্যাগের কথা পর্যন্ত ভেবে রেখেছিলেন বলে রাজনৈতিক মহলে কানাঘুষো। অধীর নিজে কখনও এমন ইঙ্গিত দেন নি সত্যি কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে দলের জোটের প্রশ্নে তার যে একদমই সায় নেই, এই কথা তিনি সংবাদ মাধ্যমের সামনে কখন‌ও গোপন করেন নি।

মমতাকে নিয়ে অধীরের যতটা সমস্যা ঠিক ততটাই সমস্যা অধীরকে নিয়ে মমতার। মমতা কংগ্রেসে থাকতে অধীর চৌধুরীকে প্রার্থী করা নিয়েই তাঁর প্রবল আপত্তি থাকত। কংগ্রেস ত্যাগের পর মমতার অন্যতম রাজনৈতিক লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়, অধীরকে যে কোনও মূল্যে ভোটে হারানো। যা এখনও পর্যন্ত মমতার অধরা। গত বিশ-বাইশ বছর ধরে মুর্শিদাবাদ জেলায় কংগ্রেস আর অধীর চৌধুরী সমার্থক। গোটা জেলায় অধীরকে কোনঠাসা করতে পারলেও বহরমপুর থেকে এখনও হারাতে পারেন নি মমতা। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ থেকে কংগ্রেসকে নিশ্চিহ্ন করতে সর্বশক্তি ঢেলেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। শেষ পর্যন্ত দাঁতে দাঁত চেপে নিজের আসনে ম্যাচ বের করে নেন বহরমপুরের রবিনহুড।

অধীর চৌধুরী ভালোই জানতেন, তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা হলেও বহরমপুর থেকে তিনি যাতে জিততে না পারেন, তার সব বন্দোবস্ত‌ই কালীঘাট করে রাখবে। এদিকে মমতা এক ধাপ এগিয়ে ভেবে রেখেছিলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা হলেও বহরমপুর অধীরকে ছাড়বেন না। বুধবার মালদহের সভায় কোনও রাখঢাক না রেখেই তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘‘আমি কংগ্রেসকে বললাম, তোমাদের একটাও এমএলএ নেই, দু’টি এমপি আছে। একটা মালদহে। আরও একটা রয়েছে। আমি মালদহের দুটো আসন ছেড়ে দিচ্ছি। আমরা জিতিয়ে দেব। বলল না, আমার অনেক চাই। আমি বললাম তোমায় আমি একটাও দেব না। তুমি আগে সিপিএমের সঙ্গ ছাড়ো। সিপিএম তোমার নেতা। সিপিএম আমাদের ওপর কী অত্যাচার করেছে!’’

মালদহের দুটো আসনের বিনিময়ে অধীররঞ্জন চৌধুরীর মতো জনপ্রিয় নেতাকে বলি দেওয়া কংগ্রেসের পক্ষে সম্ভব নয়। যদিও মমতাকে তোষামোদ এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন দিল্লির ১০ জনপথ রোডের দুই বাসিন্দা। তবে যত দূর মনে হয়, বাংলায় জোট প্রায় ভেস্তে যাওয়ার পথেই। আর এতে অধীর এবং মমতা, স্বস্তিতে দু’জনেই।

Feature graphic is representational and created by NNDC.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *