পঞ্চম দিনে জ্ঞানবাপীর সমীক্ষা, সমীক্ষার সংবাদ প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে 'অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া' - nagariknewz.com

পঞ্চম দিনে জ্ঞানবাপীর সমীক্ষা, সমীক্ষার সংবাদ প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া’


ডেস্ক রিপোর্ট: বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদে ‘আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’-র সমীক্ষা বুধবার পঞ্চম দিনে পড়ল। আদালতের নির্দেশে গত শুক্রবার (৪ অগাস্ট) থেকে এই সমীক্ষা চালাচ্ছেন এএসআই-এর পুরাতাত্ত্বিকেরা। সমীক্ষা বন্ধ করতে শেষ মুহূর্তেও শীর্ষ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিল ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া’ বা জ্ঞানবাপী মসজিদ কমিটি’। কিন্তু এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশের উপর সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দিতে রাজি না হ‌ওয়ায় অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়ার চেষ্টা জলে যায়।

গম্বুজ, উত্তরের দেওয়াল ও বেসমেন্টের সমীক্ষা শেষ

সমীক্ষা বন্ধে ব্যর্থ হয়ে জ্ঞানবাপী মসজিদ কমিটির নেতারা ঘোষণা করেছিলেন, সমীক্ষা চলাকালে এএসআই-কে তাঁরা কোন‌ও সহযোগিতা করবেন না এমনকি সমীক্ষার সময় তাদের তরফে কেউই উপস্থিত থাকবেন না। সমীক্ষার কাজ শুরু হ‌ওয়ার পর অবশ্য দেখা যায়, ঘটনাস্থলে হিন্দু পক্ষের পাশাপাশি মসজিদ কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত আছেন। গত চারদিনে জ্ঞানবাপীর গম্বুজ, উত্তরের দেওয়াল ও বেসমেন্টের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা হয়েছে। কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় আদালতের নির্দেশ মেনে‌ সমীক্ষার কাজ চলছে। পুরাতাত্ত্বিক সমীক্ষার কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন হিন্দু পক্ষের আইনজীবী বিষ্ণুশঙ্কর জৈন। যদিও ‘জ্ঞানবাপী মসজিদ কমিটি’ এখন‌ সংবাদ মাধ্যমে সমীক্ষা সংক্রান্ত খবর প্রকাশে নিষেধাজ্ঞার দাবি জানাচ্ছে।

কেন সংবাদ সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চায় মসজিদ কমিটি?

সমীক্ষার সংবাদ সম্প্রচার বন্ধের আর্জি নিয়ে ইতিমধ্যেই বারাণসী জেলা আদালতে গেছে ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া’। এএসআই-এর পুরাতাত্ত্বিকেরা তিনটি দলে ভাগ হয়ে কাজ করছেন। সমীক্ষা রিপোর্ট জমা পড়বে আদালতে। সংবাদ মাধ্যমের সামনে এ‌এস‌আই-এর আধিকারিকেরা মুখ খুলছেন না। কিন্ত সমীক্ষাস্থলে যেতে সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের বারণ করে নি আদালত। এই সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশে মিডিয়ার উপরে কোন‌ও নিষেধাজ্ঞাও চাপায় নি এলাহাবাদ হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট। কেন সমীক্ষার সংবাদ সম্প্রচার করতে চাইছে ‘জ্ঞানবাপী মসজিদ কমিটি’? তাদের আশঙ্কা, এই ধরণের খবর জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারে।

আগে যা যা ঘটেছে-

১. কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একেবারে গা ঘেঁষেই বিতর্কিত জ্ঞানবাপী মসজিদ, বলা যায় বিশ্বেশ্বর ও অন্নপূর্ণার মন্দিরের উঠোনেই মসজিদটির অবস্থান।‌ জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে বিতর্ক আজকের নয়। জ্ঞানবাপী মসজিদের জায়গায় ‘মা শৃঙ্গার গৌরী’র মন্দির ছিল বলে হিন্দুদের জোরালো দাবি। মুঘল আমলে মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল মনে করা হয়। জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের দিকে মুখ করে মা শৃঙ্গার গৌরীর অবস্থান ও মসজিদের পশ্চিম দিকের দেওয়ালের গায়ে খোদাইকৃত দেবদেবীর মূর্তি সেই সাক্ষ্য‌ই দেয় যে হিন্দুদের অভিযোগ মিথ্যে নয়।

২. ১৯৪৭-এর আগে এবং পরেও অনেক দিন জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে মা শৃঙ্গার গৌরীর পূজা চলত বলে জানা গেছে। এখন আবার ‘শৃঙ্গার গৌরী’ চত্বরে পূজাআচ্চার অধিকার ফেরত চাইছে বারাণসীর হিন্দুরা। ২০২১ সালের অগাস্টে জ্ঞানবাপী চত্বরে অবস্থিত ‘মা শৃঙ্গার গৌরী’র পূজার্চনার আর্জি জানিয়ে আদালতে গিয়েছিলেন বারাণসীর হিন্দু সম্প্রদায়ের তরফে পাঁচ মহিলা। হিন্দু মহিলাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জ্ঞানবাপী মসজিদ ভেতরের পরিকাঠামো ‘এ‌এস‌আই’-কে ভিডিওগ্রাফি করার নির্দেশ দেন বারাণসীর নিম্ন আদালতের বিচারক রবিকুমার দিবাকর। ভিডিওগ্রাফিতে ওজুখানার জলাধারে শিবলিঙ্গের আকৃতির একটি কাঠামো স্পষ্টত‌ই দৃশ্যমান হয়। মসজিদ কমিটি বস্তুটিকে ফোয়ার বলে দাবি করে। যদিও ‘কার্বন ডেটিং’ পদ্ধতির মাধ্যমে কাঠামোটির বয়স নির্ধারণ করার আওয়াজ তোলে হিন্দুরা।

৩. অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২-এর ২০ মে এই মামলার শুনানির দায়িত্ব বারাণসী জেলা আদালতের কাছে হস্তান্তর করে সুপ্রিম কোর্ট। গত ২১ জুলাই মামলার রায় দেয় বারাণসী জেলা আদালত। ওজুখানা ও সংলগ্ন এলাকা বাদ রেখে বাকি জ্ঞানবাপী মসজিদের চত্বরের পুরাতাত্ত্বিক সমীক্ষা করতে ’আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’-কে নির্দেশ দেন বিচারক অজয়কুমার বিশ্বেস। জেলা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে জ্ঞানবাপী মসজিদ কমিটি। গত ২৪ জুলাই ৪৮ ঘন্টার জন্য বারাণসী জেলা আদালতের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি‌ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ। এই সময়সীমার মধ্যে মামলাকারীদের এলাহাবাদ হাইকোর্টে আবেদন জানাতে বলে সুপ্রিম কোর্ট।

৪. সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ২৬ জুলাই এলাহাবাদ হাইকোর্টে আবেদন জানায় ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি’।এ‌এস‌আই-কে সমীক্ষার অনুমতি দিলে মসজিদের কাঠামোর ক্ষতি হতে পারে, এই আশঙ্কায় সমীক্ষা বন্ধ রাখতে হাইকোর্টের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন মসজিদ কমিটির আইনজীবী। মসজিদ কমিটির আশঙ্কার ব্যাপারে এ‌এস‌আই-এর বিশেষজ্ঞদের মতামত জানতে চায় এলাহাবাদ হাইকোর্ট। এ‌এস‌আই-এর বিশেষজ্ঞরা হাইকোর্টকে জানান, ‘গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার’ এর সাহায্যে কোন‌ও প্রকার খননকার্য ছাড়াই সমীক্ষা করা সম্ভব। এর ফলে মসজিদের প্রাচীন কাঠামোর ক্ষতির আশঙ্কা দূর হবে।

৫. পুরাতাত্ত্বিকদের আশ্বাসের পর সমীক্ষায় আর বাধা দেওয়া উচিত নয় বলেই মনে করছে এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। এএস‌আই-এর আশ্বাসের পরেও মামলাকারীদের সংশয় দূর হচ্ছে না দেখে গত ২৬ জুলাই প্রধান বিচারপতি প্রীতিনকর দিবাকর বলেছিলেন, “আপনারা যদি এ‌এস‌আই-এর বিশেষজ্ঞদের আশ্বাসেও ভরসা না রাখতে পারেন, তা হলে কিছুই বলার নেই।’ বৃহস্পতিবার ( ৩ অগাস্ট) রায় দিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত বারাণসী জেলা আদালতের নির্দেশকেই বহাল রাখল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। অর্থাৎ ওজুখানা সংলগ্ন এলাকা বাদ রেখে জ্ঞানবাপী মসজিদের সমীক্ষা করবে ‘ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ’।

৬. ৪ অগাস্ট সকাল থেকেই এ‌এস‌আই-এর একটি দল জ্ঞানবাপীতে গিয়ে সমীক্ষার কাজ শুরু করে দেয়। ওইদিন‌ই এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে জ্ঞানবাপী মসজিদ কমিটির দায়ের করা মামলা সুপ্রিম কোর্টে আর্জি খারিজ হয়ে যায়।

Feature image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *