লজ্জা! লজ্জা! লজ্জা! গণতন্ত্রের উৎসব নয় নৈরাজ্যের উল্লাস বাংলার দিকে দিকে। কোনও নির্বাচন হচ্ছে না। হচ্ছে নির্বাচনের নামে প্রহসন। বিচারবিভাগের হস্তক্ষেপ। প্রধান বিচারপতির নির্দেশ। লেহ থেকে উড়িয়ে এনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন। সব বৃথা। দেদার ছাপ্পা চলছে বুথে বুথে। অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের পাঠানোই হয় নি। শাসকদলের সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের দেখে রাজ্যের পুলিশ কোথাও সহযোগিতা করছে, কোথাও নিরাপদ দূরত্বে সরে পড়ছে। বন্দুকের নল দেখে প্রিসাইডিং অফিসার কাঁপছেন। নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সেক্টর অফিসার প্রিসাইডিং অফিসারকে পরামর্শ দিচ্ছেন, ব্যালট শুদ্ধু বাক্স তৃণমূলের লোকেদের হাতে তুলে দিন। এর নাম নির্বাচন? শুক্রবার রাত পর্যন্ত পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে বাংলায় লাশ পড়েছে ১৮ জনের। ভোটের দিন দুপুর গড়াবার আগেই ১২টি মানুষের জীবনদীপ নিভে গেছে।
ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশ বিরোধী নেতার গাড়ির সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে। শাসকদলের দুষ্কৃতীদের ভয়ে তিনি বুথ থেকে পালিয়ে রাস্তায়। বিরোধী নেতার কাছে সাহায্য চাইছে রাজ্য সরকারের পুলিশ! যেখানে বুথে ভোটারদের নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা পুলিশই প্রাণভয়ে দিশেহারা, সেখানে সাধারণ মানুষ নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে বুথে যাবেন কোন সাহসে। যেখানে নিশ্চুপে ছাপ্পা হচ্ছে। জনগণ ঝামেলায় না গিয়ে ঘরে বসে আছে। ভোট সেখানে শান্তিপূর্ণ। যেখানে মানুষ ছাপ্পা প্রতিরোধ করছে, সেখানেই হচ্ছে রক্তপাত। আঠারোর পঞ্চায়েত ভোটে যা হয়েছিল, এবারে চিত্র তার চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট নয় রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ চলছে। হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে দুষ্কৃতীদের পথে নামিয়ে শাসকদলের নেতারা মিটিমিটি হাসছেন। যুদ্ধজয়ের আনন্দে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে প্রতিপক্ষকে পরিহাস করছেন। পশ্চিমবঙ্গ কি ভারতের কোনও অঙ্গরাজ্য? দেশের সংবিধানের সবথেকে উল্লেখযোগ্য অংশ, নাগরিকদের অবাধ ভোটাধিকার। সেই ভোটাধিকার বাংলায় আজ লুন্ঠিত। তারপরেও বিদ্বজ্জনেরা চুপ। মধ্যাহ্নভোজন শেষে তাঁরা সব সুখের দিবানিদ্রায়।
মুখ্যমন্ত্রী শতভাগ আসনে বিজয় চান। তার জন্য বাংলার ললাটে কলঙ্ক তিলক পরিয়ে দিতেও তিনি কুন্ঠিত নন। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার পদে যিনি বসে আছেন, তিনি ভর্ৎসিত হওয়ারও অযোগ্য। সংবিধান নামক পবিত্র গ্রন্থটিকে আপন পশ্চাদ্দেশের তলায় গুঁজে দিয়ে নিষ্কম্প, নির্বিকল্প হয়ে মালকিনকে তুষ্ট করাই তাঁর একমাত্র কাজ। পঞ্চায়েত ভোটে যা হল, তা নিয়ে নির্লজ্জ দলদাস প্রশাসন, সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে অক্ষম নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ, অনুযোগ করা বৃথা। এমনকি আদালতের দ্বারস্থ হয়েও দিনের শেষে বিশেষ সুরাহা হবে না। অরণ্যে রোদন করবেন না। বরং অপমানের সব স্মৃতি মনে জমিয়ে রাখুন আর সময়ের অপেক্ষা করুন। সুযোগ আসবেই কিম জং উনের বঙ্গীয় ক্লোনকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার। একে বিদায় না করা পর্যন্ত বাংলায় গণতন্ত্র ফিরবে না।
Feature image is collected.