ডেস্ক রিপোর্ট: তৃণমূল জাতীয় দলের তকমা খোয়ানোর পর চারবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়- মঙ্গলবার সিঙ্গুরের জনসভায় এমন কটাক্ষ করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার শুভেন্দুর কটাক্ষের জবাব দিলেন মমতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলেন, “সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। প্রমাণিত হলে মুখ্যমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেবো।” মমতার অভিযোগ, তৃণমূল ও তাঁর সরকার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে বিজেপি। তাঁর দল ও সরকার সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা দিতেই বিজেপির এই প্রয়াস বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী।
সিঙ্গুরে শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, “দল সর্বভারতীয় তকমা হারানোর পর অমিত শাহকে চারবার ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত যাতে এই তকমা বজায় থাকে, তা নিয়ে চারবার ফোন করে শাহজিকে অনুরোধ জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু অমিত শাহজি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তা সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন যা করেছে, নিয়ম মেনেই করেছে।” শুভেন্দুর কটাক্ষে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন মমতা। এদিন তিনি শুভেন্দুর নাম উচ্চারণ না করেই বলেন, “এই অভিযোগ ডাহা মিথ্যা। যদি প্রমাণ করতে পারে, তা হলে মুখ্যমন্ত্রীত্বই ছেড়ে দেবো। আমাকে এত সহজ ভাবার কারণ নেই। আমি দীর্ঘদিন রাজনীতি করছি।” শুভেন্দু অধিকারীকে মমতার পাল্টা চ্যালেঞ্জ, “প্রমাণ না করতে পারলে তুমি মানুষের সামনে নাকে খত দেবে তো?”
মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, তাঁকে মানুষের সামনে অপদস্থ করতে পরিকল্পনা মাফিক অপবাদ ছড়াচ্ছে বিজেপি। শুভেন্দু অধিকারীকে জনসমর্থনহীন ‘ভুঁইফোড়’ নেতা বলে পাল্টা কটাক্ষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুকুলকে নিয়ে মাথাব্যথা নেই
বুধবার নবান্নে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুকুল রায় নিয়েও মুখ খোলেন মমতা। ২০২১-এর ১১ জুন কালীঘাটে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাসায় মমতা ও অভিষেকের উপস্থিতিতে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন সপুত্র মুকুল। সেই স্মৃতি ভুলে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “উনি তো বিজেপিরই বিধায়ক। ওঁর ছেলে একটা মিসিং ডায়েরি করেছিল বলে শুনেছি। কেউ যদি বাবা মিসিং বলে ডায়েরি করে, তবে প্রশাসনের কাজ, তিনি কোথায় আছেন, ভাল আছেন কিনা তার খোঁজ নেওয়া।” মুকুল রায়ের উধাও হওয়া, ছেলের করা মিসিং ডায়েরি এবং মুকুলের দিল্লিযাত্রাকে তৃণমূল যে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না, মমতার কথাতেই তা পরিস্কার। মমতা বলেন, ” ওঁর ছেলেই বাবা মিসিং বলে এফআইআর করেছেন। দু’জন নাকি নিয়ে গিয়েছে এজেন্সির মাধ্যমে। বিজেপি কিনা বলতে পারব না। হতেও পারে, তাঁকে কোনও হুমকি দেওয়া হয়েছিল।”
তৃণমূলের দ্বারা বাংলার কিস্যু উন্নতি হবে না দাবি করে আবার বিজেপিতে ফিরতে চান মুকুল রায়। কিন্তু মুকুল পদ্ম শিবিরে ফিরে গেলে তৃণমূলের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে- এমন কোনও উদ্বেগ মুখ্যমন্ত্রীর চোখেমুখে অন্ততঃ লক্ষ্য করা যায় নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলেন, “এটা ছোট ব্যাপার। আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। তবে মিসিং অভিযোগটা গুরুত্বপূর্ণ।”
পঞ্চায়েত ভোট কি জুনেও হচ্ছে না?
নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে দলের তিন বিধায়ক কারাগারে। জেলবন্দীদের একজন আবার মুখ্যমন্ত্রীর ক্যাবিনেটে দুই নম্বর পজিশনে ছিলেন। গরু পাচার মামলায় ফেঁসে বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল তিহাড় জেলে। সিবিআই-এর জেরার হাত থেকে বাঁচতে অভিষেককে পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে ছুটতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে টু শব্দটিও করলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ এপ্রিলের শেষের দিকে পঞ্চায়েত ভোটের সূচি প্রকাশের কথা ছিল। মমতা এদিন বললেন, দু’মাস ধরে ‘সংযোগ যাত্রায়’ বেরোবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে এই কর্মসূচি শুরু হবে। ২৫ জুনের আগে কর্মসূচি শেষ হওয়ার কথা নয়। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, তার মানে কি ২৫ জুন পর্যন্ত পঞ্চায়েত ভোট হচ্ছে না? জুনের মাঝামাঝি থেকেই রাজ্যে বর্ষা শুরু হয়ে যায়। জুলাইয়ের ঘোর বর্ষায় কীভাবে গ্রামীণ ভোট সম্ভব?
মানুষের অভাব অভিযোগ শুনতে বাংলা জুড়ে অভিষেকের এই যাত্রা বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জানিয়েছেন। দলের নড়বড়ে হয়ে পড়া জনভিত্তি শক্ত করতেই অভিষেককে সংযোগ যাত্রায় নামিয়ে দিলেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
Feature Image is representational.