ডেস্ক রিপোর্ট: শেষ পর্যন্ত তিহাড় জেলের ডাল-রোটিও কেষ্টর ভাগ্যে ছিল! গরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডলকে মঙ্গলবার ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠালেন দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টের বিচারক। দিল্লিতে জেল মানেই তিহাড়। আপাতত ৩ এপ্রিল পর্যন্ত অনুব্রতকে তিহাড় জেলে থাকতে হবে। গত ৭ মার্চ বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতিকে দিল্লি নিয়ে যায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সেদিন রাতেই বিচারকের বাড়িতে আদালত বসে। ১৪ দিন ইডির হেফাজতে থাকার পর এবার অনুব্রতের তিহাড় বাস শুরু হল।
দক্ষিণ এশিয়ার সবথেকে বড় জেলে অনুব্রত
দক্ষিণ এশিয়ার সবথেকে বড় কারাগারের নাম তিহাড় জেল। তিহাড়ের এক প্রান্তের সঙ্গে আরেক প্রান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় তিন কিলোমিটার। ধারণ ক্ষমতা ১০ হাজার হলেও তিহাড়ে এই মুহূর্তে ১৭ হাজারের বেশি বন্দী আছে। মঙ্গলবার রাজধানীতে সন্ধ্যা নামার আগেই অনুব্রত মন্ডল সেখানে ঢুকে গেছেন। অনুব্রত তিহাড়ে যাওয়ার আগেই তিহাড় জেলে গিয়ে পুরোনো হয়ে গেছেন গরু পাচার মামলার আরেক অভিযুক্ত সহগল হোসেন। সহগল কেষ্ট মন্ডলের দেহরক্ষী। গত বছর ৯ জুন সহগল হোসেনকে গ্রেফতার করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ২২ অক্টোবর অনুব্রতের দেহরক্ষীকে দিল্লিতে নিয়ে যায় ইডি। ইডি হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নভেম্বর থেকে সহগল তিহাড় জেলেই। অনুব্রতকে সিবিআই গ্রেফতার করে গত বছরের ১১ অগাস্টে। এরপর ১৭ নভেম্বর তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি।
মুখ্যমন্ত্রী যখন দিল্লি যাবেন, কেষ্ট তখন তিহাড় জেলে থাকবেন
অনুব্রতকে রক্ষা করার পাশাপাশি তার গরু পাচার সংক্রান্ত কারবারেরও দেখভাল করত সহগল। জেরায় গরু পাচারের যাবতীয় দায় নাকি সহগলের ঘাড়েই ঝেড়ে দিয়েছেন অনুব্রত। তিহাড়ে হাজার হাজার অচেনা বন্দীর ভিড়ে প্রাক্তন দেহরক্ষীর উষ্ণ সান্নিধ্য কেষ্টদার মন্দ লাগবে না, যদি জেল কর্তৃপক্ষ সহগলকে অনুব্রতের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ দেন। তার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে কেষ্ট স্যার পার পেতে চাইছেন, এটা শোনার পর জেলের ভেতরে সহগল কেষ্ট স্যারকে যথোচিত আপ্যায়ন করতেই পারে।
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2023/03/Anubrata-Mondal-ANI-1-768x5122-1.jpg)
মঙ্গলবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বকেয়া আদায়ের দাবিতে তিনি আগামী ২৯ ও ৩০ মার্চ দিল্লিতে ধর্নায় বসবেন। কেষ্ট মন্ডলের বহু দিনের শখ ছিল দেশের রাজধানী দিল্লি একবার ঘুরে দেখার। দিদি প্রধানমন্ত্রী হলেই দিল্লি যাবেন, এমনই ছিল বীরভূমের বাঘের ইচ্ছে। হয়তো স্বপ্ন ছিল, রাষ্ট্রপতি ভবনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ গ্রহণের দিনেই সদর্পে, সহর্ষে দিল্লি যাবেন, শপথ সমারোহের অতিথি হবেন। ভাগ্যদেবী অনুব্রতের দিল্লি যাওয়ার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করল ঠিকই কিন্তু দিল্লিতে থেকেও দিদিকে দর্শনের কোনও সুযোগ নেই অনুব্রত মণ্ডলের সামনে।
কেষ্টর তিহাড় বাস খুব তাড়াতাড়ি শেষ হচ্ছে না
অনুব্রত মণ্ডলের হিসেব রক্ষক মণীশ কোঠারিকেও গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। দিল্লিতে জেরা পর্ব শেষ হলে মণীশেরও স্থান হতে পারে তিহাড় জেলে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় মণীশ তদন্তকারী আধিকারিকদের এমন সব তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে, যার জেরে অনুব্রত মণ্ডলকে আরও বিপাকে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। তদন্তের স্বার্থে অনুব্রত কন্যাকেও দিল্লিতে এনে জেরা করতে চান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-এর আধিকারিকেরা। সুকন্যা মন্ডল খুব বেশি দিন আইনের লম্বা হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারবে বলে মনে করছেন না অনেকেই। কেষ্ট খুব তাড়াতাড়ি বাংলায় ফিরবেন, এমন পরিস্থিতি দিন দিন ফিকে হচ্ছে।
Feature Photo is representational.