বাপের দল ও প্রতীক দুই-ই হারালেন উদ্ধব ঠাকরে, বালাসাহেবের শিবসেনার কর্ণধার শিন্ডেই - nagariknewz.com

বাপের দল ও প্রতীক দুই-ই হারালেন উদ্ধব ঠাকরে, বালাসাহেবের শিবসেনার কর্ণধার শিন্ডেই


উদ্ধবের হাতে থাকল কেবল বাবার হাতে গড়া ‘মাতশ্রী’। বালাসাহেবের প্রাণপ্রিয় দল গেল শিষ্য একনাথের হাতেই।

পলিটিক্যাল ডেস্ক: বহু পুরোনো প্রবাদ- “বাপ কা বেটা সিপাহি কা ঘোড়া, কুছ নেহি তো থোড়া থোড়া।”  কেউ কেউ অবশ্য বাপ কা বেটা হ‌ওয়া দূর কি বাত, দিনের শেষে বাপের নাম পর্যন্ত ডুবিয়ে ছাড়ে। উদ্ধব ঠাকরে শেষ পর্যন্ত বাপের নাম ডোবানো বেটা হিসেবেই নিজেকে প্রমাণ করলেন। বালাসাহেব ঠাকরের পুত্র উদ্ধব। বালাসাহেবের হাতে গড়া দল ‘শিবসেনা’। শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সেই দলের ওপর থেকে যাবতীয় কর্তৃত্ব হারালেন উদ্ধব ঠাকরে। এখন থেকে উদ্ধবের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী ‘শিবসেনা’ নাম এবং শিবসেনার প্রতীক ‘তীর-ধনুক’ কোন‌ওটাই ব্যবহার  করতে পারবে না।

প্রয়াত বালাসাহেব ঠাকরে ছিলেন ক্যারিশ্মাটিক নেতা। অনবদ্য জনমোহিনী শক্তির অধিকারী।  অসামান্য বক্তা। মারাঠা অস্মিতাকে হাতিয়ার করে একার হাতে শিবসেনা গড়ে তুলেছিলেন তিনি। বালাসাহেবের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাও ছিলেন বালাসাহেবের গুণমুগ্ধ। ভয়ে হোক আর‌ ভক্তিতে মুম্বাইয়ের আন্ডার ওয়ার্ল্ড ডনরাও বাল ঠাকরেকে সমীহ করে চলত। বালাসাহেবের মৃত্যুর পর দলের দায়িত্ব যায় উদ্ধব ঠাকরের ঘাড়ে। বালাসাহেব বাঁচা থাকতেই মাতশ্রী ও শিবসেনা ছেড়ে পৃথক দল গড়েন ভাইপো রাজ থাকরে। বাল ঠাকরের মৃত্যুর মাত্র দশ বছরের মধ্যে ‘শিবসেনা’ দুর্বল হতে হতে শেষ পর্যন্ত আড়াআড়ি ভেঙে পড়ে গত বছরের জুনে। একনাথ শিন্ডের বিদ্রোহ  উদ্ধবকে শুধু মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্শি থেকেই চ্যুত করে নি শিবসেনাকে‌ও কার্যত উদ্ধবের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়।

পিতা ও পুত্র: বাবার দলের রাশ নিজের হাতে রাখতে ব্যর্থ উদ্ধব ঠাকরে।

শিন্ডে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে এখন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপির হাত ছেড়ে কংগ্রেস-এনসিপির সঙ্গে দোস্তি পাতিয়ে উদ্ধবের এখন আম ও ছালা, দুই-ই যাবার দশা। কার গোষ্ঠী আসল শিবসেনা- এই নিয়ে বিবাদ নির্বাচন কমিশন হয়ে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েও শেষ রক্ষা হয় নি উদ্ধব ঠাকরের। শিবসেনার কর্তৃত্ব ও প্রতীক নিয়ে নির্বাচন কমিশন যাতে কোন‌ও সিদ্ধান্ত না নিতে পারে, এই আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন উদ্ধব ঠাকরে। কিন্তু গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ উদ্ধব গোষ্ঠীর আবেদন সাড়া না দিয়ে নির্বাচন কমিশনের হাতেই বিবাদ নিষ্পত্তির যাবতীয় দায়িত্ব ছেড়ে দেয়।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ অক্টোবর ‘শিবসেনা’ নাম ও প্রতীক ‘তির-ধনুক’ সাময়িকভাবে ‘ফ্রিজ’ করার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। ৩ নভেম্বর আন্ধেরি পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের আগে উদ্ধব গোষ্ঠীর জন্য মশাল ও শিন্ডে গোষ্ঠীর জন্য ঢাল-তরোয়াল প্রতীক বরাদ্দ করে কমিশন। উপনির্বাচনে উদ্ধবের দল ‘শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে) এবং শিন্ডের দল ‘বালাসাহেবঞ্চি শিবসেনা’ নামে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পায়। অবশেষে শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি,২০২৩) ‘শিবসেনা’ নিয়ে পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নিল নির্বাচন কমিশন। একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীকে‌ই প্রকৃত শিবসেনার স্বীকৃতি দিয়েছে কমিশন। তির-ধনুক‌ প্রতীক ব্যবহার করার‌ও অধিকার পেল শিন্ডের গোষ্ঠী। মোদ্দা কথা, এখন থেকে বালাসাহেব ঠাকরে প্রতিষ্ঠিত শিবসেনা বলতে বোঝাবে একনাথ শিন্ডের দলকেই। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে নিজের পিতার দলের ওপর থেকে যাবতীয় কর্তৃত্ব‌ই হারালেন উদ্ধব। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া মাতশ্রী বাংলো উদ্ধবের হাতে থাকলেও পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া দল হাতছাড়া হয়ে গেল উদ্ধবের। এবার বাল ঠাকরের ছেলেকে দলের জন্য নতুন কোনও নাম ও প্রতীক বেছে নিতে হবে। উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনার গঠন প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশনের কাছে গণতান্ত্রিক বলে মনে হয় নি।

নেতা ও অনুগামী: বালাসাহেবের দলের কর্ণধার এখন একনাথ শিন্ডে।

নিজের এই রাজনৈতিক পরিণতির জন্য উদ্ধব ঠাকরেই দায়ী করছে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহল। নেতা হিসেবে বাবার কোনও গুণ‌ই পায় নি উদ্ধব। উদ্ধবের না আছে জনমোহিনী শক্তি। না আছে সাংগঠনিক দক্ষতা। তার উপর তিনি শারীরিক ভাবে অসুস্থ থাকায় অতিরিক্ত চাপ নিতে অক্ষম। রাজনৈতিক দূরদর্শিতা‌ও সামান্য। দলের কর্মী-সমর্থকেরাই উদ্ধবের ওপর বিরক্ত। উদ্ধব দলের কর্মীদের এড়িয়ে চলেন বলে অভিযোগ। বাল সাহেব চোখ বোজার পর থেকেই মাতশ্রীর অন্দরে শিবসৈনিকদের অবাধ যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে শীর্ষনেতার এই দূরত্বের‌ই সুযোগ নেন একনাথ শিন্ডে। একনাথ রাজপথ থেকে উঠে আসা নেতা। সাধারণ কর্মীদের আবেগ বোঝেন। সংগঠন বোঝেন। একনাথকে দেখেই চিনেছিলেন বালাসাহেব। তিনি যে রত্ন চিনতে ভুল করেন নি,‌ সেই প্রমাণ বাইশের জুলাইয়েই দিয়েছেন শিন্ডে। শিন্ডে যখন বালাসাহেব পুত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন, তখন শুধু শিবসেনার সিংহভাগ বিধায়ক‌কেই নয়, দলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ‌কেও কাছে টেনে নিয়ে সফল হলেন। একটা বিষয় খুব পরিস্কার- স্বখাত সলিলেই পতিত হলেন উদ্ধব ঠাকরে।

Feature Image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *