মঞ্চ বাঁধা যায় নি। ম্যাটাডরে দাঁড়িয়েই মাইক হাতে পুলিশকে তুলোধুনো করলেন সেলিম।
কলকাতা : পুলিশের অনুমতি মেলে নি। কিন্তু তার তোয়াক্কা না করেই মঙ্গলবার ধর্মতলা জনসমুদ্র করে দিল বামেদের ছাত্র-যুবরা। ইনসাফ সভার পরিকল্পনা বহু আগেই নিয়েছিল এসএফআই-ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য কমিটি। কিন্তু শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সভার অনুমতি মেলে নি। পুলিশের অনুমোদন না থাকায় ধর্মতলা চত্বরে মঞ্চ বাঁধা যায় নি। শেষে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে ম্যাটাডরের উপরে দাঁড়িয়েই বক্তৃতা দিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় সহ অন্যান্য নেতারা।
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2022/09/IMG-20220920-WA0014.jpg)
বাম ছাত্র-যুবদের ইনসাফ সভার মূল দাবি ছিল ছাত্র নেতা আনিস খান, সুদীপ্ত গুপ্ত, মইদুল ইসলাম মিদ্যা খুনে জড়িতদের বিচার। পাশাপাশি নিয়োগ দুর্নীতি, বেকারত্ব এবং কর্মসংস্থানের মতো জ্বলন্ত ইস্যুও সভার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। সভা ঘিরে শুরু থেকেই পুলিশের সঙ্গে টানাপোড়েন চলছিল বামেদের। অনুমতি না মিললেও মঙ্গলবার সকাল থেকেই হাওড়া, হুগলি, দুই চব্বিশ পরগনা, বর্ধমান, বীরভূম, নদীয়া,পুরুলিয়া, মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে বাম ছাত্র-যুবরা ট্রেন থেকে নেমে হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনে ভিড় করতে থাকেন। সকালে সভা নিয়ে যখন পুলিশের সঙ্গে বাম নেতৃত্বের টানাপোড়েন চলছে, তখনই মীনাক্ষী হুঙ্কার ছাড়েন- “সভা হবেই। এই পুলিশের অনুমতি দেওয়ার এক্তিয়ারই নেই।” সভা শুরুর আগেই গোটা ধর্মতলা চত্বর মানুষের মাথায় মাথায় ছয়লাপ হয়ে যায়। সভায় ভিড়ের বহর দেখে উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেন নি সেলিম। ম্যাটাডরের উপরে দাঁড়িয়েই মাইক হাতে নিয়ে স্বভাবসিদ্ধ বাচনভঙ্গিতে মোদী-মমতার তীব্র সমালোচনায় মেতে ওঠেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক।
অনেক দিন আগে জানানোর পরেও সভার অনুমতি দেয় নি লালবাজার। স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের উপর ক্ষোভ জমছিল বাম নেতাদের। সভার চেহারা এবং আগ্রাসী মেজাজ দেখে পুলিশের উপর আরও তেতে উঠেন মহম্মদ সেলিম। হুঙ্কার দিয়ে ওঠে সেলিম বলেন,”জাগ্রত জনতার সামনে পুলিশের ঢাল কাজ করবে না, দেখিয়ে দিয়েছে বর্ধমান। পুলিশ তৃণমূলের মঞ্চ বেঁধে দেয়। আর আমাদের সভায় আসার রাস্তা ব্যারিকেড তুলে বন্ধ করে দেয়। মঞ্চ বাঁধতে দেয় না। বাংলার পুলিশকে বলছি, রাস্তা বন্ধ করে আমাদের মিছিল আটকানো যাবে না।” সেলিম আরও বলেন, ” পুলিশ বলেছিল ধর্মতলায় সভা করতে দেবে না। আর আমাদের ছাত্র-যুবরা বলেছিল, আমরা ইনসাফ সভা করবই। ইনসাফের লহর উঠেছে। ইনসাফ সভা হচ্ছে। পুলিশকে আবারও বলছি, জাগ্রত জনতার সামনে তোমাদের জোরাজুরি চলবে না। এটা পুলিশের মনে থাকে যেন।”
পুলিশের বাধা সত্ত্বেও সভায় জনজোয়ারকে বাংলার রাজনীতিতে বামেদের পুনরুত্থানের সূচনা হিসেবেই দেখছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। সেলিম বলেন, অনুব্রত, অভিষেক, গরুচোর, কয়লাচোর, চাকরিচোরদের হুঁশিয়ারি দিতেই এই সভার আয়োজন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিপদে পড়লেই মোদীজির বন্দনা শুরু করেন। কিন্তু আমরা মাথা নোয়াই না। আমরা তো ধর্মতলার একটা দিকেই সভা করতে চেয়েছিলাম। পুলিশ অনুমতি দিল না। এখন পুলিশ ঠেলা সামলাক।” সেলিমের দাবি, “আজ ন্যায় চাইতে আমরা রাজপথে। শিক্ষাকে বাঁচাতে, চাকরি বাচাতে আমাদের লড়াই চলবে। কালীঘাট পর্যন্ত এই আওয়াজ যাক। ” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক আরও বলেন, “এই বাংলা দালাল, সাম্প্রদায়িক, চোর-জোচ্চর, ডাকাতদের জন্য নয়। আমাদের ছেলেমেয়েদের গাড়ি চাপা দিয়ে মেরেছে। পুলিশ কোনও অভিযোগ নেয় নি। আনিস খানকে খুন করেছে। কোনও অভিযোগ নেয় নি। হাঁসখালিতে খুনের ঘটনায় নিহতদের বাড়ির লোকজনকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আজ আনিস খানের বাড়ির লোকদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হচ্ছে। পুলিশকে কটাক্ষ করে বাম নেতা বলেন, “পুলিশ যদি এফআইআর লিখতে না পারে, কীভাবে এফআইআর লিখতে হয়, থানায় থানায় গিয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা শিখিয়ে দেবে।”
টিএমসি-কে টাকা মারা কোম্পানি বলে কটাক্ষ করে মহম্মদ সেলিম বলেন, “আমরা কাজ চাই হাতে। দয়ার দান নয়। চাকরি চান বেকারেরা। বাংলায় লুটেরাদের কোনও জায়গা নেই। যারা দু’হাতে হারামের টাকা মেরে খেয়েছে, তাদের তা হজম করতে দেবো না। ভেজা কাপড় নিংড়ানোর মতো করে চোর-জোচ্চোরদের নিংড়ে সব রস বের করা হবে। হাতে না পারলে আখের রস বের করার মেশিনের সাহায্য নেওয়া হবে।” বাংলাকে বাঁচাতে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-জৈন-খ্রিস্টান, সবাইকে এক হতে হবে বলে সভায় ডাক দেন মহম্মদ সেলিম।
লোকসভা-বিধানসভা নির্বাচনে শূন্যে নামলেও বামেদের জমায়েতে জোয়ার কেন? এই প্রশ্ন ভাবিয়ে তুলেছে রাজনৈতিক মহলকে। রাজ্যের সংখ্যালঘুদের একটি বড় অংশের শাসকদল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াই কি বামেদের ফের বাড়বাড়ন্তের কারণ? বালিগঞ্জ উপনির্বাচনেও কিন্তু বামেদের ঘরে সংখ্যালঘু ভোট ফিরে আসার একটা ইঙ্গিত মিলেছিল। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে পাখির চোখ করেই বামেরা যে কোমর কষে নামছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ভিডিও: বাম ছাত্র-যুবদের ইনসাফ সভা-
Photo and video credit- CPM Bengal official FB page.