নিয়োগ দুর্নীতির কিনারা করতে চাওয়াতেই কি একটি মহলের কাছে চক্ষুশূল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়?
কলকাতা :রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির শেষ দেখতে চান কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এই জন্যই কি তাঁর উপর রাগ তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের? মঙ্গলবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কটের প্রস্তাব এনেও হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভায় পাশ করাতে পারেন নি তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরা। সভায় বারের সভাপতি অরুণাভ ঘোষকে তৃণমূল আইনজীবী সেলের সদস্যরা নিগ্রহ করেন বলেও অভিযোগ। বুধবার সকালে হাইকোর্ট চালু হতেই ১৭ নম্বর কোর্টের দরজায় বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরা। এই ১৭ নম্বর কোর্টেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মামলার শুনানি করেন।

স্কুলে শিক্ষক ও গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ। মঙ্গলবারই একটি মামলায় রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সিবিআই-এর সামনে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যদিও বুধবার নিয়োগ সংক্রান্ত সিঙ্গেল বেঞ্চের প্রত্যেকটি রায়ের উপর চার সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দিয়েছে বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি আনন্দকুমার মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। এর ফলে চার সপ্তাহের জন্য স্বস্তি পেলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও,যিনি নিয়োগের সময় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন।
আইনজীবীদের একাংশের বিক্ষোভের মুখে পড়েও মেজাজ হারান নি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আইনজীবীদের কাছে এজলাসে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানান তিনি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বিক্ষোভরত তৃণমূলের আইনজীবীদের বলেন,” আপনাদের যদি মনে হয়ে থাকে যে ডিভিশন বেঞ্চের বিরুদ্ধে বলে আমি ভুল করেছি তবে আপনারা এই ভাবে গোলমাল করে শুনানি পন্ড না করে সুপ্রিম কোর্টে যান।” উল্লেখ্য দিন কয়েক আগেই ডিভিশন বেঞ্চের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর দেওয়া যাবতীয় নির্দেশের উপরেই ডিভিশন বেঞ্চ একতরফা স্থগিতাদেশ দেওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করে চিফ জাস্টিস অব ইন্ডিয়াকে চিঠি লিখেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আর এতেই নাকি গাত্রদাহ তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের। তাদের প্রশ্ন- কেন ডিভিশন বেঞ্চের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে নালিশ জানালেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়?
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের আবেদনের পরেও হট্টগোল থামান নি তৃণমূল আইনজীবী সেলের সদস্যরা। এরপর এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন ক্ষুব্ধ বিচারপতি। আইনজীবী মহলের একাংশ যদিও বলছেন, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ডিডিশন বেঞ্চ নিয়ে দেশের প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি লেখার জন্য নয়, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় একের পর এক সিবিআই তদন্তের রায় দেওয়াই তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের তাঁর উপর রাগের আসল কারণ। নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক মামলায় একক বেঞ্চের রায়ে রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মঙ্গলবার বার অ্যাসোসিয়েশনের সভায় হাতাহাতি। বুধবার বিক্ষোভ দেখিয়ে বিচারপতির বিচার কাজ পন্ড করা। আদালত চত্বরে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই উদ্বিগ্ন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের একাংশ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রধান বিচারপতি হাইকোর্ট রেজিস্ট্রার ও আইনজীবীদের নিয়ে বৈঠকে বসলেও তাতে কোনও সমাধান সূত্র বেরোয় নি বলে খবর।