মন্দিরে কোরআন ফেলে আবার সংখ্যালঘু নির্যাতনের ষড়যন্ত্র বাংলাদেশে! - nagariknewz.com

মন্দিরে কোরআন ফেলে আবার সংখ্যালঘু নির্যাতনের ষড়যন্ত্র বাংলাদেশে!


দুষ্কৃতী ধরা পড়েছে তাই রক্ষে। অন্যথায় তাদের কপালে ফের কী দুর্গতি ঘটত, তা ভেবেই আঁতকে উঠছেন বাংলাদেশের হিন্দুরা।

ঢাকা প্রতিনিধি : বড় বিপদ থেকে বাঁচল বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। বৃহস্পতিবার শেষ রাতে পটুয়াখালীর বাউফলে একটি মন্দিরে কোরআন রেখে চম্পট দেওয়ার সময় মোহাম্মদ ইদ্রিস নামে বছর পঞ্চান্নর এক ব্যক্তি স্থানীয়দের চোখে পড়ে যাওয়ায় বিপত্তি এড়ানো গেছে।

রাত সাড়ে তিনটায় মন্দিরে ঢুকেছিল ইদ্রিস!

বাউফল উপজেলার বগা ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত উত্তর পালপাড়া গ্রামের জনৈক বাসিন্দার বাড়িতে তিনদিন ধরে নামযজ্ঞানুষ্ঠান চলছিল। রাত তিনটার দিকে মোহাম্মদ ইদ্রিস হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে প্রথমে নামযজ্ঞানুষ্ঠান স্থলে ঢোকার চেষ্টা করে। কিন্তু স্থানীয় এক পুরোহিতের বাধায় সরে যায়। এরপরে রাতের অন্ধকারে গ্রামের কালীমন্দিরে ঢুকে ব্যাগটি রেখে পালানোর সময় তিনজনের নজরে পড়ে যায় ইদ্রিস। সঞ্জয় পাল, সজল‌ পাল ও কার্তিক পাল নামে ওই তিন গ্রামবাসী নামকীর্তন শুনে রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ ঘরে ফিরছিলেন। মন্দির থেকে মোহাম্মদ ইদ্রিসকে বের হতে দেখেই সন্দেহ হয় তাঁদের। এত রাতে মন্দিরে ঢোকার কারণ কী ইদ্রিসের কাছে জানতে চাইলে দৌড় লাগায় সে। তিনজনের চিৎকার চেঁচামেচিতে নামযজ্ঞের স্থান থেকে আরও লোকজন বেরিয়ে এসে ধাওয়া করে ইদ্রিসকে ধরে ফেলে।কালীমন্দিরে ফিরে গিয়ে গ্রামবাসীরা দেখতে পান প্রতিমার সামনে ঘটের উপর একটি ব্যাগ রাখা। ব্যাগ খুলতেই কোরআন শরিফ বেরিয়ে পড়ে।

মন্দিরে কোরআন রাখতে গিয়ে ধৃত মোহাম্মদ ইদ্রিস। ফটো-সংগৃহীত

গ্রামবাসীদের চাপের মুখে মন্দিরে কোরআন রাখার কথা স্বীকার করে নেয় ইদ্রিস। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা স্থানীয় থানায় খবর দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। মন্দিরে কোরআন রাখতে গিয়ে দুষ্কৃতী হাতেনাতে ধরা পড়ায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন বাউফলের সংখ্যালঘুরা। লোকচক্ষুর অন্তরালে গভীর রাতের অন্ধকারে মোহাম্মদ ইদ্রিস কোরআন রেখে সটকে পড়তে পারলে পরদিন সকালে তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটত তা ভাবতেই আঁতকে উঠছেন উত্তর পালপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা। কাদের প্ররোচনায় মোহাম্মদ ইদ্রিস কালীমন্দিরে কোরআন রেখেছিল পুলিশ তদন্ত করে তা খুঁজে না বের করা পর্যন্ত আশ্বস্ত হতে পারছেন না বাউফল উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা।

ইকবাল-ইদ্রিসদের ব্যবহার করছে কারা?

ধৃতের বাড়ি বাকেরগঞ্জ উপজেলার নলুয়া গ্রামে। ইতিমধ্যেই ধৃতকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি করেছে তার কয়েকজন আত্মীয়। পুলিশ ইদ্রিসের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা দায়ের করলেও তার পেছনে যাদের মদত আছে তাদের আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত হিন্দুদের আতঙ্ক দূর হবে না বলে মনে করছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঘটনাটির যথাযথ তদন্ত হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

একুশের দুর্গা পুজোয় কুমিল্লার ঘটনার কথা ভুলে যায় নি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা। শহরের নানুয়ার দীঘির পাড়ে একটি পুজো মন্ডপ চত্বরে হনুমানের প্রতিমার সামনে কোরআন পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহাষ্টমীর সকালে কুমিল্লা শহর জুড়ে মন্ডপে মন্ডপে তান্ডব চালিয়েছিল সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষ। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে গোটা বাংলাদেশে হাঙ্গামা ছড়িয়ে পড়ে। নোয়াখালীতে ইসকন মন্দিরে সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের হামলায় মন্দিরের সেবাইত সহ পাঁচজন নিহত হন। বাংলাদেশ জুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকশো ঘর-বাড়ি ভস্মীভূত করে দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে সিসি টিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে ইকবাল হোসেন নামে একজনকে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করে। ধৃত ব্যক্তি বজরংবলীর মূর্তির সামনে কোরআন রেখেছিল। ইকবালকেও পাগল সাজিয়ে দেয় বাংলাদেশের একটি মহল।

কুমিল্লায় পুজো মন্ডপে কোরআন রেখেছিল ইকবাল হোসেন। সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে ইকবালকে ধরে পুলিশ। ফাইল ফটো

কুমিল্লায় নানুয়ার দীঘির পাড়ে মন্ডপে কোরআন রেখেছিল চালচুলোহীন ভবঘুরে ইকবাল হোসেন। পটুয়াখালীর বাউফলে মন্দিরে কোরআন রাখতে গিয়ে ধৃত মোহাম্মদ ইদ্রিসকেও পাগল বলে দাবি করা হচ্ছে। অথচ গভীর রাতে চোরের মতো মন্ডপে-মন্দিরে ঢুকে কীভাবে কোরআন রেখে আসতে হয়,‌সেই বদবুদ্ধির অভাব হচ্ছে না এই পাগলদের। প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক, ইকবাল-ইদ্রিসদের মতো ভবঘুরেরা যদি নিজেদের বুদ্ধিতে এই দুষ্কর্ম না করে থাকে তবে তাদের মাথায় হিন্দুদের উপাসনাস্থলে কোরআন ফেলে আসার বুদ্ধি ঢোকাচ্ছে কারা?

এইবার‌ও বাউফলের কালীমন্দিরে কোরআন রেখে দিয়ে দাঙ্গা বাঁধিয়ে সংখ্যালঘুদের জমি-বাড়ি বা দেবোত্তর সম্পত্তি গ্রাসের কোন‌ও ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল বলে অনেকের সন্দেহ।

Feature image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *